শতবর্ষী মসজিদটি গুঁড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিল বিজেপি

  • Update Time : ১২:০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
  • / 157
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বড়বাঁকীতে যোগী আদিত্যনাথের সরকার একটি প্রাচীন মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে লোকজন পালিয়ে গেলে সোমবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় মসজিদটি ধ্বংস করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বভারতীয় মুসলিম ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি) ও উত্তরপ্রদেশের সুন্নি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড এ ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, আদালতের আদেশে একটি অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

এনডিটিভি, বিবিসি ও আল-জাজিরা এমন খবর দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাইয়েদ ফারুক আহমেদ বলেন, গত মাস থেকে মসজিদটিতে নামাজ আদায়ে বাধা দিয়ে আসছে প্রশাসন।

সর্বভারতীয় মুসলিম ল’ বোর্ড বলছে, আইনগত বৈধ এখতিয়ারের বাইরে শত বছরের পুরনো গরিবে নেওয়াজ মসজিদটি ধ্বংস করে দিয়েছে প্রশাসন। এটি রাম সানেহি ঘাট তহসিলে অবস্থিত ছিল। রাতে যখন মসজিদটি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল, তখন সেখানে পুলিশ ছিল।

এআইএমপিএলবি’র মহাসচিব মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি এক বিবৃতিতে বলেন, এই মসজিদকে ঘিরে কোনো বিতর্ক ছিল না। এটি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তালিকাভুক্ত ছিল। গত মার্চে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রাম সানেহি ঘাটের উপ-বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট কাগজপত্র চেয়েছেন। পরে মসজিদ কমিটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে রিট করেছেন।

মসজিদটি ধ্বংস করে দেওয়ার আগে কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে জানান মাওলানা খালিদ। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির মাধ্যমে এ ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দায়ী কর্মকর্তাদের বিচার চেয়েছেন তিনি।

এছাড়া মসজিদের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সেখানে অন্য স্থাপনা নির্মাণ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। মাওলানা খালিদ বলেন, সেখানে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে মুসলমানদের হাতে হস্তান্তর করা সরকারের দায়িত্ব।

ওই মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদর্শ সিং বলেন, গত ১৫ মার্চ মসজিদের মালিকানা দাবি করার সুযোগ দিয়ে স্থানীয়দের একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে যারা বসবাস করছিলেন, তারা পালিয়ে গেছেন।

কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত ১৯ মার্চ মসজিদের প্রবেশপথে বেড়িকেড দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে প্রশাসন। তখন প্রতিবাদ করা হলে বেদম মারধর করা হয়েছে স্থানীয়দের। অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সাইদ আহমেদ নামের একজন বলেন, যারা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তাদের মারধর ও গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

অন্তত ৩০ বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি ধরপাকড়ের মুখে আতঙ্কিত মুসলমানরা পালিয়ে গেছেন।

মুসলমানদের সম্পূর্ণ নীরব করিয়ে দেওয়ার পর সোমবার পুলিশ এলাকাটি বন্ধ করে দেয়। সব ধরনের চলাচলে বারণ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে মসজিদটি ধ্বংস করে দিয়ে ধ্বংসস্তূপ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

সাঈদ আহমেদ বলেন, মসজিদ ধ্বংসের সময় লোকজন ঘরের জানালাও খুলতে পারেননি। মানুষের মনে এতই আতঙ্ক ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কেউ টু শব্দটি করতে সাহস করেনি।

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকার গত চার বছর ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটা দৈনন্দিন সাম্প্রদায়িকতার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বারবার এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

বড়বাঁকীর এই ঘটনাও তারই সবশেষ দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন লাখনৌতে বসবাসকারী সাংবাদিক মুনমুন রেহমান।

তিনি বলেন, যোগীর আমলে যেভাবে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠছে এবং এখন তারা মুসলিমদের মসজিদ ভাঙতেও এতটুকু দ্বিধা করছে না।

তিনি জানান, বড়বাঁকীর ঘটনায় টুইটারে অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন এবং আমরা খবর পাচ্ছি ওই এলাকার মুসলিমদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

শতবর্ষী মসজিদটি গুঁড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিল বিজেপি

Update Time : ১২:০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বড়বাঁকীতে যোগী আদিত্যনাথের সরকার একটি প্রাচীন মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে লোকজন পালিয়ে গেলে সোমবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় মসজিদটি ধ্বংস করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বভারতীয় মুসলিম ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি) ও উত্তরপ্রদেশের সুন্নি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড এ ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, আদালতের আদেশে একটি অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

এনডিটিভি, বিবিসি ও আল-জাজিরা এমন খবর দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাইয়েদ ফারুক আহমেদ বলেন, গত মাস থেকে মসজিদটিতে নামাজ আদায়ে বাধা দিয়ে আসছে প্রশাসন।

সর্বভারতীয় মুসলিম ল’ বোর্ড বলছে, আইনগত বৈধ এখতিয়ারের বাইরে শত বছরের পুরনো গরিবে নেওয়াজ মসজিদটি ধ্বংস করে দিয়েছে প্রশাসন। এটি রাম সানেহি ঘাট তহসিলে অবস্থিত ছিল। রাতে যখন মসজিদটি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল, তখন সেখানে পুলিশ ছিল।

এআইএমপিএলবি’র মহাসচিব মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি এক বিবৃতিতে বলেন, এই মসজিদকে ঘিরে কোনো বিতর্ক ছিল না। এটি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তালিকাভুক্ত ছিল। গত মার্চে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রাম সানেহি ঘাটের উপ-বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট কাগজপত্র চেয়েছেন। পরে মসজিদ কমিটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে রিট করেছেন।

মসজিদটি ধ্বংস করে দেওয়ার আগে কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে জানান মাওলানা খালিদ। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির মাধ্যমে এ ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দায়ী কর্মকর্তাদের বিচার চেয়েছেন তিনি।

এছাড়া মসজিদের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সেখানে অন্য স্থাপনা নির্মাণ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। মাওলানা খালিদ বলেন, সেখানে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে মুসলমানদের হাতে হস্তান্তর করা সরকারের দায়িত্ব।

ওই মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদর্শ সিং বলেন, গত ১৫ মার্চ মসজিদের মালিকানা দাবি করার সুযোগ দিয়ে স্থানীয়দের একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে যারা বসবাস করছিলেন, তারা পালিয়ে গেছেন।

কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত ১৯ মার্চ মসজিদের প্রবেশপথে বেড়িকেড দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে প্রশাসন। তখন প্রতিবাদ করা হলে বেদম মারধর করা হয়েছে স্থানীয়দের। অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সাইদ আহমেদ নামের একজন বলেন, যারা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তাদের মারধর ও গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

অন্তত ৩০ বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি ধরপাকড়ের মুখে আতঙ্কিত মুসলমানরা পালিয়ে গেছেন।

মুসলমানদের সম্পূর্ণ নীরব করিয়ে দেওয়ার পর সোমবার পুলিশ এলাকাটি বন্ধ করে দেয়। সব ধরনের চলাচলে বারণ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে মসজিদটি ধ্বংস করে দিয়ে ধ্বংসস্তূপ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

সাঈদ আহমেদ বলেন, মসজিদ ধ্বংসের সময় লোকজন ঘরের জানালাও খুলতে পারেননি। মানুষের মনে এতই আতঙ্ক ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কেউ টু শব্দটি করতে সাহস করেনি।

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকার গত চার বছর ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটা দৈনন্দিন সাম্প্রদায়িকতার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বারবার এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

বড়বাঁকীর এই ঘটনাও তারই সবশেষ দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন লাখনৌতে বসবাসকারী সাংবাদিক মুনমুন রেহমান।

তিনি বলেন, যোগীর আমলে যেভাবে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠছে এবং এখন তারা মুসলিমদের মসজিদ ভাঙতেও এতটুকু দ্বিধা করছে না।

তিনি জানান, বড়বাঁকীর ঘটনায় টুইটারে অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন এবং আমরা খবর পাচ্ছি ওই এলাকার মুসলিমদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।