লিচুর মৌসুম শুরু, উৎপাদন কম হওয়ার আশংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:১৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২
  • / ১৩৪ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মৌসুমি ফল লিচু। তবে লিচু চাষিরা বলছেন এবার উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে কম হবে।

রাজশাহী, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, ঢাকার সোনারগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় লিচুর চাষ হলেও দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচুকেই দেশের সেরা লিচু বলে দাবি করেন সেখানকার চাষিরা।

বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়নেও দিনাজপুরের লিচুকে সেরা লিচু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন লিচুর যে জাতটি স্বাদ ও পুরুত্বের জন্য সেরা সেই জাতটির নাম হলো চায়না-৩।দিনাজপুর সহ আরও কয়েকটি জেলায় এটি চাষ হয়।

তবে জাত বা জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিতে রাজী নন চাষিদের অনেকে কারণ এবার তারা লিচু উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ টনের মতো লিচু উৎপাদন হয়।

তবে এটি এ বছর কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌসুমি ফলের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ।

আবহাওয়াসহ কিছু কারণে এবার লিচুর ফলন অন্তত ত্রিশ হাজার টন কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে দিনাজপুরের লিচু চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ করে কয়েকদিন কুয়াশা পড়েছিলো এবং বৃষ্টির আগেও কুয়াশা পড়েছে যা লিচুর জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

“এবার এমনিতেই ফলন ভালো হয়নি। এখন বৃষ্টি হলে আবার পোকা লাগার আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে ফলন কিছুটা কম পাচ্ছি আমরা।”

ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন লিচুর মৌসুম সাধারণত ধরা হয় এক মাস। মধ্য মে থেকে মধ্য জুন সময়ে বাহারি লিচুতে ভরে যায় বাংলাদেশের বাজারগুলো।

কিন্তু এবার কিছু আগাম জাতের লিচু এসেছে যেগুলো অপরিপক্ব অবস্থায় গাছ থেকে তোলা হয়েছে।

মিস্টার মাসুদ বলেন সাধারণত মৌসুমের শুরুতে সাতক্ষীরার লিচু বাজারে আসে।

এরপর আসে পটিয়ার লিচু এবং এরপর মঙ্গলবাড়ী ও সোনারগাঁওয়ের লিচু।

এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর পাকতে শুরু করে এবং বাজারে আসা শুরু হয়।

চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, দিনাজপুরের কোথাও এখনো লিচু পাড়া শুরু হয়নি। এটি শুরু হবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ পর।

মিস্টার রহমান বলছেন, তারা সাধারণত বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজী ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করে থাকেন।

সরকারি হিসেবে লিচুর জন্যই সুপরিচিত এই দিনাজপুরে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে লিচুর চাষ হয় এবং এ জমিতে গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি।

সাধারণত প্রতিটি গাছে এক মৌসুমে চার হাজারের মতো লিচু পাওয়া যায়।

আর জেলায় উৎপাদিত লিচুর আশি ভাগই ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় চলে যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত বারি-৩ জাতের লিচুতে গোলাপের ঘ্রাণ থাকে বলে দাবি অনেকের। খুবই সুস্বাদু এ জাতটি বাজারে আসে জুন মাসে।

এছাড়া যশোর, মেহেরপুর ও রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলায় বোম্বাই লিচুর চাষ হয়। চাষিরা বলছেন এই লিচু সংরক্ষণ করা কিছুটা সহজ।

ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন এখন লিচুর মৌসুম এক মাস হলেও এই সময়কাল বাড়ানোর জন্য চেষ্টা হচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে।

“নতুন দু একটি জাত দিয়ে লিচুর মৌসুম এখন জুলাই পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে। সে কারণে জুলাইয়ের শুরুতেও এখন একটি জাতের লিচু আসছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরও কিছু জাত আনা যায় যার মাধ্যমে বাজারে বেশি সময় লিচু পাওয়া সম্ভব হবে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

লিচুর মৌসুম শুরু, উৎপাদন কম হওয়ার আশংকা

Update Time : ০২:১৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মৌসুমি ফল লিচু। তবে লিচু চাষিরা বলছেন এবার উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে কম হবে।

রাজশাহী, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, ঢাকার সোনারগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় লিচুর চাষ হলেও দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচুকেই দেশের সেরা লিচু বলে দাবি করেন সেখানকার চাষিরা।

বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়নেও দিনাজপুরের লিচুকে সেরা লিচু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন লিচুর যে জাতটি স্বাদ ও পুরুত্বের জন্য সেরা সেই জাতটির নাম হলো চায়না-৩।দিনাজপুর সহ আরও কয়েকটি জেলায় এটি চাষ হয়।

তবে জাত বা জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিতে রাজী নন চাষিদের অনেকে কারণ এবার তারা লিচু উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ টনের মতো লিচু উৎপাদন হয়।

তবে এটি এ বছর কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌসুমি ফলের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ।

আবহাওয়াসহ কিছু কারণে এবার লিচুর ফলন অন্তত ত্রিশ হাজার টন কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে দিনাজপুরের লিচু চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ করে কয়েকদিন কুয়াশা পড়েছিলো এবং বৃষ্টির আগেও কুয়াশা পড়েছে যা লিচুর জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

“এবার এমনিতেই ফলন ভালো হয়নি। এখন বৃষ্টি হলে আবার পোকা লাগার আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে ফলন কিছুটা কম পাচ্ছি আমরা।”

ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন লিচুর মৌসুম সাধারণত ধরা হয় এক মাস। মধ্য মে থেকে মধ্য জুন সময়ে বাহারি লিচুতে ভরে যায় বাংলাদেশের বাজারগুলো।

কিন্তু এবার কিছু আগাম জাতের লিচু এসেছে যেগুলো অপরিপক্ব অবস্থায় গাছ থেকে তোলা হয়েছে।

মিস্টার মাসুদ বলেন সাধারণত মৌসুমের শুরুতে সাতক্ষীরার লিচু বাজারে আসে।

এরপর আসে পটিয়ার লিচু এবং এরপর মঙ্গলবাড়ী ও সোনারগাঁওয়ের লিচু।

এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর পাকতে শুরু করে এবং বাজারে আসা শুরু হয়।

চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, দিনাজপুরের কোথাও এখনো লিচু পাড়া শুরু হয়নি। এটি শুরু হবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ পর।

মিস্টার রহমান বলছেন, তারা সাধারণত বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজী ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করে থাকেন।

সরকারি হিসেবে লিচুর জন্যই সুপরিচিত এই দিনাজপুরে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে লিচুর চাষ হয় এবং এ জমিতে গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি।

সাধারণত প্রতিটি গাছে এক মৌসুমে চার হাজারের মতো লিচু পাওয়া যায়।

আর জেলায় উৎপাদিত লিচুর আশি ভাগই ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় চলে যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত বারি-৩ জাতের লিচুতে গোলাপের ঘ্রাণ থাকে বলে দাবি অনেকের। খুবই সুস্বাদু এ জাতটি বাজারে আসে জুন মাসে।

এছাড়া যশোর, মেহেরপুর ও রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলায় বোম্বাই লিচুর চাষ হয়। চাষিরা বলছেন এই লিচু সংরক্ষণ করা কিছুটা সহজ।

ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন এখন লিচুর মৌসুম এক মাস হলেও এই সময়কাল বাড়ানোর জন্য চেষ্টা হচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে।

“নতুন দু একটি জাত দিয়ে লিচুর মৌসুম এখন জুলাই পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে। সে কারণে জুলাইয়ের শুরুতেও এখন একটি জাতের লিচু আসছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরও কিছু জাত আনা যায় যার মাধ্যমে বাজারে বেশি সময় লিচু পাওয়া সম্ভব হবে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা