লামায় সবুজ পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কফির চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:০২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৫৪ Time View

বিপ্লব দাশ,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামায় কফি চাষ এখনও নতুন।এখানে কেউ কেউ এখনও জানেনা নিজের এলাকায় কফি চাষ হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করার কারনে কফি চাষে দিনদিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। প্রথম প্রথম সখ করে দু একজন কফি চারা রোপন করলেও এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে রোপন করছে কফি চারা।

চায়ের মতো না হলেও কফি এখন আর ততটা অপরিচিত নয়। কেউ পান করে পরিচিত, কেউ নাম শুনে। কিন্তু সবাই এটা জানেন, এই কফি দেশের বাইরে থেকে। তবে এখন দিনবদলের হাওয়া লেগেছে। তাই তো ঘরের কাছেই এখন বেড়ে উঠছে কফি গাছ। কিছু গাছে কফির ফলও ধরেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দেশের কফিতেই তৃষ্ণা মিটবে কফিপায়ীর।

বাংলাদেশে কফি চাষ শুনলে এক সময় থমকে যেতে হত। চায়ের চেয়ে কফি জনপ্রিয় হলেও উচ্চ মূল্যের কারনে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি কফি। চা খাইনি এমন মানুষ না থাকলেও কফি খাইনি এখনও এমন মানুষ দেশে রয়েছে। অথচ সেই কফি এখন সম্ভাবনার ফসল হয়ে উঠেছে । অচিরেই হয়তো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কফি উড়াল দেবে বিশ্বের নানা দেশে। অদুর ভবিষ্যতে কৃষি ও শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে উচ্চ মূল্যের পানীয় এ কফি।

চা গুল্ম জাতীয় গাছ, কিন্তু কফি একদম গাছ গোত্রেরই। তবে দুটোর চাষবাসের মাটি ও পরিবেশ কাছাকাছি হওয়ায় পাশাপাশি থাকতে, বেড়ে উঠতে কারও কোনো সমস্যা নেই; বরং পানীয় হওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে একরকমের আত্মীয়তার সম্পর্ক তো আছেই। বিচ্ছিন্নভাবে বাগানের বাংলো, সড়কের পাশে অনেকগুলো কফিগাছ দেখা গেছে। কোনোটির মাথাভর্তি শুধুই ঝাঁকড়া সবুজ পাতা। কোনোটার পাতার ফাঁকে ডালে ডালে ধরেছে কফি ফল।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে লামায় প্রত্যেক ইউনিয়নে পাহাড়ে কিংবা পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে কফি চাষ।

এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে ২৯৭৭৫টি কফি গাছ লাগানো হয়েছে।ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১৮-২১সাল পর্যন্ত ৭ জন কৃষক, বাণিজ্যিকভাবে ২০২১ সালে ৬৬জন কৃষক কফি চাষ করে। হর্টিকালচার ও ডিএই এর মাধ্যমে ৬৬জন কৃষককে চারা,সার,নেট ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২.৫ একর করে ৫টি বাণিজ্যিক ও ৫০ শতক করে ৫০টি কফিজাত প্রযুক্তি প্রদশনী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস।

এদিকে কফি বাগান ঘুরে দেখা যায় কোথাও সারিবদ্ধভাবে, কোথাও গাছের ফাঁকে ফাঁকে এবং কোথাও পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢালুতে কফি চারা লাগানো হয়েছে।কোথাও গাছ ৩ থেকে ৪ফুট লম্বা আবার কোথাও বয়স এক সপ্তাহ হতে এক মাস হয়েছে। কোন কোন গাছে ফল আসতেও দেখা যায়। তবে তা পরিপক্ব হয়নি এখনও।ঝাঁকড়ানো সবুজ পাতা আর ফলন ইঙ্গিত করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একদিন অর্থনৈতিক মুক্তির সম্ভাবনার নব দিগন্ত হবে কফি চাষ।

উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রীকফিল্ড এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক) প্রমোদ চন্দ্র বড়–য়ার বাগান ঘুরে দেখা যায় তার সৃজিত ফলজ বাগানের ভিতর ২ একর জায়গায় ১২২৫টি কফি চারা লাগিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে এ চারা লাগিয়েছেন বলে জানান তিনি।

একই ইউনিয়নের আখিরাম পাড়ায় আরেকটি বাগান ঘুরে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়েছে কফি গাছ। কয়েকটি গাছে ফলও এসেছে। নতুন উদ্যোক্তা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, প্রথমে তিনি আম বাগান সৃজন করলে তা দেখে অনেকে আম বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।তেমনি কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে উদ্বোদ্ধ করে কফি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ৪ হাজার কফি চারা লাগান তিনি।

এ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাবটিস্টের কফি এক্সপার্ট প্রশিক্ষক তৈদরাম ত্রিপুরা বলেন, একটি কফি চারার মূল্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা।এরা ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।এরপর ঢালপাল ছেটে মার্তৃগাছের একফুট উপর থেকে তির্ডকভাবে কেটে দিলে পুণরায় ফলন পাওয়া যায়।১টি গাছ প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ কেজি ফলন দেয়।এর বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।কফি চাষীদের জন্য সুখবর হচ্ছে দেশীয় ও বিশ্ববাজারে কফির মূল্য একই থাকে।ফলে এর কোন সিন্ডিকেট থাকেনা।দেশে একমাত্র কফি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নর্দান এন্ড কফি রোষ্টার কোম্পানী।

উপজেলায় প্রথম উদ্যোক্তা তৈদুরাম ত্রিপুরা প্রথমে ৩ একর জায়গায় সাড়ে তিন হাজার পরে ১২ হাজার কফি চারা লাগান তিনি।তার চারার বয়স ৪ বছর হয়েছে।৩ বছরের মাথায় কিছু কিছু গাছে ফলন আসে।

আবাদি অনাবাদি দুটোতেই কফি চাষ করা যায়।কফি ছায়া সহনীয় গাছ বিধায় চাষীদের জন্য সুবিধা হচ্ছে কফি বাগানের ভিতর অন্যান্য বাগান কিংবা অন্যান্য বাগানের ভিতর কফি বাগান করা যায়। ফলে অন্যান্য চাষের চেয়ে কফি চাষে কৃষকের লাভের সম্ভাবনা বেশি।

কৃষি বিভাগের অভিমত চা গুল্মজাতীয় গাছ, কিন্তু কফি একদম গাছ গোত্রেরই। কফি গাছ ছায়া সহ্য করতে পারে।তাই বড় গাছ কিংবা ফলজ গাছের ছায়তলে বেড়ে উঠতে কফি গাছের কোন সমস্যা হয় না। সাধারণত পতিত জমিতে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভ বেশি।পানি নিষ্কাশনযুক্ত যেকোন উঁচু জমিতে কফি চাষ করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে রোবাস্টা ও অ্যারাবিকা— দুই জাতের কফি চাষ হচ্ছে। তবে লামায় রোবাস্টা জাতের কফির চাষ বেশি। তাই বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের আবাদের পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের। কফি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চল।পাহাড়ের অনাবাদি ও আবাদি জমি কফি চাষের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কৃষকরা।সেইসাথে অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।বিপ্লব ঘটবে কৃষিশিল্পে। উচ্চ মূল্যের কফিচাষ সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে কৃষককে।এচাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরবে কৃষকের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন এ প্রতিবেদককে বলেন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় দেশে কফি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।কফি চাষের দুই তৃতীয়াংশ চাষ হয় পার্বত্য অঞ্চলে।বান্দরবান জেলাসহ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য জেলায় আগে থেকে কফি চাষ থাকলেও এত বেশি সাড়া মিলেনি।

অধিদপ্তরের উদ্যোগের কারনে প্রকল্পের আওতায় কফিচাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা।প্রকল্পের আওতায় দুই অর্থ বছরে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ১১৫৬৫টি চারাসহ সার,নেট,নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের মাঝে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

লামায় সবুজ পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কফির চাষ

Update Time : ১১:০২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিপ্লব দাশ,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামায় কফি চাষ এখনও নতুন।এখানে কেউ কেউ এখনও জানেনা নিজের এলাকায় কফি চাষ হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করার কারনে কফি চাষে দিনদিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। প্রথম প্রথম সখ করে দু একজন কফি চারা রোপন করলেও এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে রোপন করছে কফি চারা।

চায়ের মতো না হলেও কফি এখন আর ততটা অপরিচিত নয়। কেউ পান করে পরিচিত, কেউ নাম শুনে। কিন্তু সবাই এটা জানেন, এই কফি দেশের বাইরে থেকে। তবে এখন দিনবদলের হাওয়া লেগেছে। তাই তো ঘরের কাছেই এখন বেড়ে উঠছে কফি গাছ। কিছু গাছে কফির ফলও ধরেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দেশের কফিতেই তৃষ্ণা মিটবে কফিপায়ীর।

বাংলাদেশে কফি চাষ শুনলে এক সময় থমকে যেতে হত। চায়ের চেয়ে কফি জনপ্রিয় হলেও উচ্চ মূল্যের কারনে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি কফি। চা খাইনি এমন মানুষ না থাকলেও কফি খাইনি এখনও এমন মানুষ দেশে রয়েছে। অথচ সেই কফি এখন সম্ভাবনার ফসল হয়ে উঠেছে । অচিরেই হয়তো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কফি উড়াল দেবে বিশ্বের নানা দেশে। অদুর ভবিষ্যতে কৃষি ও শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে উচ্চ মূল্যের পানীয় এ কফি।

চা গুল্ম জাতীয় গাছ, কিন্তু কফি একদম গাছ গোত্রেরই। তবে দুটোর চাষবাসের মাটি ও পরিবেশ কাছাকাছি হওয়ায় পাশাপাশি থাকতে, বেড়ে উঠতে কারও কোনো সমস্যা নেই; বরং পানীয় হওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে একরকমের আত্মীয়তার সম্পর্ক তো আছেই। বিচ্ছিন্নভাবে বাগানের বাংলো, সড়কের পাশে অনেকগুলো কফিগাছ দেখা গেছে। কোনোটির মাথাভর্তি শুধুই ঝাঁকড়া সবুজ পাতা। কোনোটার পাতার ফাঁকে ডালে ডালে ধরেছে কফি ফল।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে লামায় প্রত্যেক ইউনিয়নে পাহাড়ে কিংবা পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে কফি চাষ।

এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে ২৯৭৭৫টি কফি গাছ লাগানো হয়েছে।ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১৮-২১সাল পর্যন্ত ৭ জন কৃষক, বাণিজ্যিকভাবে ২০২১ সালে ৬৬জন কৃষক কফি চাষ করে। হর্টিকালচার ও ডিএই এর মাধ্যমে ৬৬জন কৃষককে চারা,সার,নেট ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২.৫ একর করে ৫টি বাণিজ্যিক ও ৫০ শতক করে ৫০টি কফিজাত প্রযুক্তি প্রদশনী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস।

এদিকে কফি বাগান ঘুরে দেখা যায় কোথাও সারিবদ্ধভাবে, কোথাও গাছের ফাঁকে ফাঁকে এবং কোথাও পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢালুতে কফি চারা লাগানো হয়েছে।কোথাও গাছ ৩ থেকে ৪ফুট লম্বা আবার কোথাও বয়স এক সপ্তাহ হতে এক মাস হয়েছে। কোন কোন গাছে ফল আসতেও দেখা যায়। তবে তা পরিপক্ব হয়নি এখনও।ঝাঁকড়ানো সবুজ পাতা আর ফলন ইঙ্গিত করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একদিন অর্থনৈতিক মুক্তির সম্ভাবনার নব দিগন্ত হবে কফি চাষ।

উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রীকফিল্ড এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক) প্রমোদ চন্দ্র বড়–য়ার বাগান ঘুরে দেখা যায় তার সৃজিত ফলজ বাগানের ভিতর ২ একর জায়গায় ১২২৫টি কফি চারা লাগিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে এ চারা লাগিয়েছেন বলে জানান তিনি।

একই ইউনিয়নের আখিরাম পাড়ায় আরেকটি বাগান ঘুরে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়েছে কফি গাছ। কয়েকটি গাছে ফলও এসেছে। নতুন উদ্যোক্তা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, প্রথমে তিনি আম বাগান সৃজন করলে তা দেখে অনেকে আম বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।তেমনি কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে উদ্বোদ্ধ করে কফি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ৪ হাজার কফি চারা লাগান তিনি।

এ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাবটিস্টের কফি এক্সপার্ট প্রশিক্ষক তৈদরাম ত্রিপুরা বলেন, একটি কফি চারার মূল্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা।এরা ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।এরপর ঢালপাল ছেটে মার্তৃগাছের একফুট উপর থেকে তির্ডকভাবে কেটে দিলে পুণরায় ফলন পাওয়া যায়।১টি গাছ প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ কেজি ফলন দেয়।এর বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।কফি চাষীদের জন্য সুখবর হচ্ছে দেশীয় ও বিশ্ববাজারে কফির মূল্য একই থাকে।ফলে এর কোন সিন্ডিকেট থাকেনা।দেশে একমাত্র কফি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নর্দান এন্ড কফি রোষ্টার কোম্পানী।

উপজেলায় প্রথম উদ্যোক্তা তৈদুরাম ত্রিপুরা প্রথমে ৩ একর জায়গায় সাড়ে তিন হাজার পরে ১২ হাজার কফি চারা লাগান তিনি।তার চারার বয়স ৪ বছর হয়েছে।৩ বছরের মাথায় কিছু কিছু গাছে ফলন আসে।

আবাদি অনাবাদি দুটোতেই কফি চাষ করা যায়।কফি ছায়া সহনীয় গাছ বিধায় চাষীদের জন্য সুবিধা হচ্ছে কফি বাগানের ভিতর অন্যান্য বাগান কিংবা অন্যান্য বাগানের ভিতর কফি বাগান করা যায়। ফলে অন্যান্য চাষের চেয়ে কফি চাষে কৃষকের লাভের সম্ভাবনা বেশি।

কৃষি বিভাগের অভিমত চা গুল্মজাতীয় গাছ, কিন্তু কফি একদম গাছ গোত্রেরই। কফি গাছ ছায়া সহ্য করতে পারে।তাই বড় গাছ কিংবা ফলজ গাছের ছায়তলে বেড়ে উঠতে কফি গাছের কোন সমস্যা হয় না। সাধারণত পতিত জমিতে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভ বেশি।পানি নিষ্কাশনযুক্ত যেকোন উঁচু জমিতে কফি চাষ করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে রোবাস্টা ও অ্যারাবিকা— দুই জাতের কফি চাষ হচ্ছে। তবে লামায় রোবাস্টা জাতের কফির চাষ বেশি। তাই বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের আবাদের পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের। কফি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চল।পাহাড়ের অনাবাদি ও আবাদি জমি কফি চাষের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কৃষকরা।সেইসাথে অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।বিপ্লব ঘটবে কৃষিশিল্পে। উচ্চ মূল্যের কফিচাষ সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে কৃষককে।এচাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরবে কৃষকের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন এ প্রতিবেদককে বলেন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় দেশে কফি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।কফি চাষের দুই তৃতীয়াংশ চাষ হয় পার্বত্য অঞ্চলে।বান্দরবান জেলাসহ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য জেলায় আগে থেকে কফি চাষ থাকলেও এত বেশি সাড়া মিলেনি।

অধিদপ্তরের উদ্যোগের কারনে প্রকল্পের আওতায় কফিচাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা।প্রকল্পের আওতায় দুই অর্থ বছরে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ১১৫৬৫টি চারাসহ সার,নেট,নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের মাঝে।