যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সংঙ্গে সংলাপে

রোডম্যাপ প্রকাশসহ গণঅধিকার পরিষদের ১২ দফা দাবি

  • Update Time : ০১:২২:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 8

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রোডম্যাপ প্রকাশসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে গণঅধিকার পরিষদ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সাড় ৮টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ শেষে তার বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে রাশেদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কোনও উদ্যোগও এখনও দেখছি না, সে বিষয়ে আমরা জানিয়েছি।

দুই মাসেও রাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তারা যোগ্য ও দক্ষ। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দরকার। আমরা দেখেছি দুই মাসেও রাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যেহেতু যথাযথভাবে সংস্কারগুলো করতে হবে, সে কারণে আমরা উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছি।

এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন করে সেই সংসদের মেয়াদ চার বছর করার দাবি জানিয়েছে গণধিকার পরিষদ।

বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের ১২ দফা

১. অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ প্রকাশ করা।

. যেহেতু সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কার অভ্যুত্থানের একটি মৌলিক ধারণা ও এই সময়ের অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই গণহত্যায় জড়িত পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩. সরকারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানো।

৪. শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মাফিয়া, অর্থপাচারকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গত ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

৫. সরকারি বিভিন্ন দফতরে গত ১৫ বছরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত দলবাজ, দুর্নীতিবাজদের অপসারণের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-আধা সরকারি চাকরিতে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি ও নিয়োগ কমিশন গঠন করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সব নিয়োগ প্রদান।

৬. রদবদলের নামে ডিসি-এসপিসহ পুলিশ ও প্রশাসনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৭. যুগের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মমুখী ও গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রণয়নে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন।

. দুদক পুনর্গঠন করে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা।

৯. যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাসহ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে গার্মেন্টস ও পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টিসহ নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করে জি টু জি পদ্ধতিতে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো।

১০. সিটিজেন চার্টার করে দ্রুত সময়ে সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।

১১. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও সংসদের মেয়াদ চার বছর করা।

১২. যেসব বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেখানে দূতাবাস সেবা প্রদান ও আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দুই দফা সংলাপ হয়। আজ অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় দফা সংলাপ।

এর আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপ হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সংঙ্গে সংলাপে

রোডম্যাপ প্রকাশসহ গণঅধিকার পরিষদের ১২ দফা দাবি

Update Time : ০১:২২:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রোডম্যাপ প্রকাশসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে গণঅধিকার পরিষদ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সাড় ৮টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ শেষে তার বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে রাশেদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কোনও উদ্যোগও এখনও দেখছি না, সে বিষয়ে আমরা জানিয়েছি।

দুই মাসেও রাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তারা যোগ্য ও দক্ষ। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দরকার। আমরা দেখেছি দুই মাসেও রাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যেহেতু যথাযথভাবে সংস্কারগুলো করতে হবে, সে কারণে আমরা উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছি।

এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন করে সেই সংসদের মেয়াদ চার বছর করার দাবি জানিয়েছে গণধিকার পরিষদ।

বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের ১২ দফা

১. অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ প্রকাশ করা।

. যেহেতু সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কার অভ্যুত্থানের একটি মৌলিক ধারণা ও এই সময়ের অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই গণহত্যায় জড়িত পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩. সরকারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানো।

৪. শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মাফিয়া, অর্থপাচারকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গত ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

৫. সরকারি বিভিন্ন দফতরে গত ১৫ বছরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত দলবাজ, দুর্নীতিবাজদের অপসারণের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-আধা সরকারি চাকরিতে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি ও নিয়োগ কমিশন গঠন করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সব নিয়োগ প্রদান।

৬. রদবদলের নামে ডিসি-এসপিসহ পুলিশ ও প্রশাসনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৭. যুগের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মমুখী ও গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রণয়নে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন।

. দুদক পুনর্গঠন করে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা।

৯. যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাসহ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে গার্মেন্টস ও পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টিসহ নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করে জি টু জি পদ্ধতিতে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো।

১০. সিটিজেন চার্টার করে দ্রুত সময়ে সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।

১১. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও সংসদের মেয়াদ চার বছর করা।

১২. যেসব বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেখানে দূতাবাস সেবা প্রদান ও আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দুই দফা সংলাপ হয়। আজ অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় দফা সংলাপ।

এর আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপ হয়।