মোংলার ব্যবসায়ীদের ১২ ঘণ্টা সময় বাঁচাবে পদ্মাসেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৪০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • / 201

জেলা প্রতিনিধিঃ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এই সেতুর কারণে সড়ক পথের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দক্ষিণবঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এ বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য রপ্তানিতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা। যা আগে লাগতো ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা্। এখানে তাদের সময় কমবে ৬ ঘণ্টা। আর মোংলা থেকে সরাসরি চট্রগ্রাম বন্দরে যেতে সময় লাগত ১৪ ঘন্টা। সেতুর কারণে তা কমে এখন দাঁড়াবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায়। এখানেও সময় বাঁচবে ৬ ঘন্টা।

সবমিলিয়ে ১২ ঘণ্টা সময় এগিয়ে থাকবে ব্যবসায়ীরা। যা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড়ধরনের পুঁজি তো বটেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি মোস্তফা জেসান ভূট্রো বলেন, “সময় নষ্ট ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা। পণ্য নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রামে গেলে
পদ্মার ফেরিতেই আটকে থাকতো হত কয়েকঘণ্টা। এতে যেমন সময় ও অর্থ নষ্ট হত, তেমনি ভোগান্তি হত অনেক।”

পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে বলে এই ব্যবসায়ী নেতার প্রত্যাশা।

মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং বন্দর ব্যবহারকারী এস এম মোস্তাক মিঠু, এইচ এম দুলাল ও মশউর রহমান বলেন, “রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্প নির্মাণের মালামাল এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে। আমদানি হওয়া পণ্য খালাস করে নদী ও সড়ক পথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু পদ্মায় সেতুর অভাবে সেসব মালামাল দেরিতে পৌঁছেছে। তেমনি মাদারিপুরের কাঁঠালবাড়ি নৌ ফেরিতে ঘন্টার ঘন্টার পর তা আটকে থেকেছে।”

এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই সমস্যায় আর পড়তে হবেনা জানিয়ে এই ব্যবসায়ীরা বলেন, “অনেক সময় বাঁচবে। এই সময়ে সমুদ্র বন্দর মোংলা থেকে যে কোন পণ্য খালাস হওয়ার পর তা খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।”

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, “পদ্মাসেতু চালুর পর এই বন্দরের গতিশীলতা বেড়ে যাবে এবং একই সাথে সড়ক পথে সময় কমে দ্রুত এ বন্দর থেকে পণ্যবাহী কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিং করা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিজিএমইএ ও বিকিএমইএ থেকে যোগাযোগ করেছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এখানে তারা বিনিয়োগ করবেন। তারা এই বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী কোম্পানিও যোগাযোগ করেছে বলেও জানান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মুসা।

মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বলেন, সেতু হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীদের কাঁচামাল পণ্য আগে যেখানে জাহাজে করে আসতো এখন আসবে সড়ক পথে। সেতুটি চালু হলেই এই ইপিজেডে বিনিয়োগকারীও বাড়বে বলে জানান তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

মোংলার ব্যবসায়ীদের ১২ ঘণ্টা সময় বাঁচাবে পদ্মাসেতু

Update Time : ০২:৪০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

জেলা প্রতিনিধিঃ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এই সেতুর কারণে সড়ক পথের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দক্ষিণবঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এ বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য রপ্তানিতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা। যা আগে লাগতো ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা্। এখানে তাদের সময় কমবে ৬ ঘণ্টা। আর মোংলা থেকে সরাসরি চট্রগ্রাম বন্দরে যেতে সময় লাগত ১৪ ঘন্টা। সেতুর কারণে তা কমে এখন দাঁড়াবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায়। এখানেও সময় বাঁচবে ৬ ঘন্টা।

সবমিলিয়ে ১২ ঘণ্টা সময় এগিয়ে থাকবে ব্যবসায়ীরা। যা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড়ধরনের পুঁজি তো বটেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি মোস্তফা জেসান ভূট্রো বলেন, “সময় নষ্ট ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা। পণ্য নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রামে গেলে
পদ্মার ফেরিতেই আটকে থাকতো হত কয়েকঘণ্টা। এতে যেমন সময় ও অর্থ নষ্ট হত, তেমনি ভোগান্তি হত অনেক।”

পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে বলে এই ব্যবসায়ী নেতার প্রত্যাশা।

মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং বন্দর ব্যবহারকারী এস এম মোস্তাক মিঠু, এইচ এম দুলাল ও মশউর রহমান বলেন, “রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্প নির্মাণের মালামাল এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে। আমদানি হওয়া পণ্য খালাস করে নদী ও সড়ক পথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু পদ্মায় সেতুর অভাবে সেসব মালামাল দেরিতে পৌঁছেছে। তেমনি মাদারিপুরের কাঁঠালবাড়ি নৌ ফেরিতে ঘন্টার ঘন্টার পর তা আটকে থেকেছে।”

এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই সমস্যায় আর পড়তে হবেনা জানিয়ে এই ব্যবসায়ীরা বলেন, “অনেক সময় বাঁচবে। এই সময়ে সমুদ্র বন্দর মোংলা থেকে যে কোন পণ্য খালাস হওয়ার পর তা খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।”

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, “পদ্মাসেতু চালুর পর এই বন্দরের গতিশীলতা বেড়ে যাবে এবং একই সাথে সড়ক পথে সময় কমে দ্রুত এ বন্দর থেকে পণ্যবাহী কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিং করা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিজিএমইএ ও বিকিএমইএ থেকে যোগাযোগ করেছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এখানে তারা বিনিয়োগ করবেন। তারা এই বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী কোম্পানিও যোগাযোগ করেছে বলেও জানান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মুসা।

মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বলেন, সেতু হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীদের কাঁচামাল পণ্য আগে যেখানে জাহাজে করে আসতো এখন আসবে সড়ক পথে। সেতুটি চালু হলেই এই ইপিজেডে বিনিয়োগকারীও বাড়বে বলে জানান তিনি।