বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী: রিক্তা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:৪৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১
  • / ২১৫ Time View

রিক্তা খাতুন ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি খুলনার রূপসা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুর রব এবং মা নাছিমা বেগম। রূপসা উপজেলার গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, খুলনা সদর সবুরুন্নেসা ডিগ্রী মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্ত্বিকাবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন বিডি সমাচারকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো.আনিসুল ইসলাম

বিডি সমাচারঃ আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

রিক্তা খাতুনঃ ছোটবেলায় বেশ ডানপিটে ছিলাম। তবে একটু ভাবুক প্রকৃতিরও। নোটবুক থেকে গৎবাঁধা মূখস্ত করাটা আমার ভালো লাগত না। সবকিছু দেখে নিজের মত করে লেখার একটা চেষ্টা ছিল সবসময়। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউটিং, ডিবেট, একক অভিনয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। কবিতা লেখার একটা ঝোক ছিল সবসময়। খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ কাব স্কাউট ছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে বেশী সক্রিয় থাকার কারনে উপজেলায় বেশ পরিচিত ছিলাম।

বিডি সমাচারঃ পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি-না?

রিক্তা খাতুনঃ পড়াশোনায় তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তবে ছোটবেলায় একটা দূর্ঘটনায় আমাদের পারিবারিক অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হয়ে যায়। তখন বেশ বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার কারনে যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাটা ছোটবেলা থেকেই রপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

বিডি সমাচারঃ বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?

রিক্তা খাতুনঃ  অনার্স শেষ করার পর একটি বেসরকারি  চাকুরীতে যোগদান করি। তখন মাস্টার্স করছি, পাশাপাশি চাকুরী চলছে। অফিসে কয়েকজন কলিগদের দেখতাম চাকুরীর পাশাপাশি বিসিএসের জন্য খুব পড়াশোনা করতেন। প্রাইভেট চাকুরীর কষ্টের মাঝে তাদের এত পড়াশোনা করা দেখে আমি বিসিএস দেওয়ার চিন্তা করি। মূলত তখন কলিগদের চেষ্টা দেখেই বিসিএস নিয়ে মনে একটা ভাবনার জগৎ তৈরি হয় যেটা থেকে বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।

বিডি সমাচারঃ আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প কেমন ছিল?

রিক্তা খাতুনঃ  চাকুরীতে থাকা অবস্থায় কলিগদের দেখে ৩৬ তম বিসিএসে প্রথম আবেদন করি। চাকুরীতে থাকাকালীন পড়ার তেমন একটা সুযোগ হতো না। তবে কাজের পাশাপাশি যতটুকু সময় পেতাম পড়াশোনা  করতাম।  বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়াতে বিজ্ঞানে ভালো ছিলাম। বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান  আর মাঝে মাঝে পুরনো প্রশ্নগুলো ঝালাই করা এইটুকুই প্রস্তুতি নিতে পারতাম। প্রিলিতে টিকে যাওয়ার পর একটা গার্লস স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সেখান থেকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর চর্চা হয়ে যেত। সময় বের করে অংক, আন্তর্জাতিক ও সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা দেখার চেষ্টা করতাম। যাইহোক, প্রিলি,লিখিত আর ভাইভাতে টেকার পর ৩৬ তম বিসিএস এর ফলাফল ঘোষণা হয় যাতে নন-ক্যাডার আসে, তখন হতাশ না হলেও মন খারাপের অনুভূতি তো ছিলই। নন- ক্যাডার হিসেবে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগদান করি। বিভিন্ন কারনে ৩৭ তম বিসিএস দেওয়া হয়নি। ওখান থেকে ৩৮ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী ও লিখিত দেই। কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশ হয় এবং  উত্তীর্ণ হই। উত্তীর্ণের পর মনে হল আরো একবার চেষ্টা করা উচিত। কারাগারের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর পর আমি খুব কম সময় পেতাম। বন্দীদের দেখার পর  যখনি সময় পেতাম বই উল্টে উল্টে পড়তাম। ১৬-১৮ ঘন্টা পড়ার সুযোগ আমার কখনোই ছিলনা। আমি আমার দূর্বলতাগুলো খুঁজে সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করতাম। ভাইবাতে যে বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া লাগতো সেগুলো বেশী পড়ি। সবসময়  আত্নবিশ্বাসী ছিলাম যে কেউ না পারলেও আমি পারবো। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে ৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেলাম।

বিডি সমাচারঃ কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?

রিক্তা খাতুনঃ আমি বরাবরই জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। তবে ডেপুটি জেলার হিসেবে  থাকা অবস্থায় সমাজের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ এসব দেখে মনে হচ্ছিল আরো বড় পরিসরে জনস্বার্থে কিছু করা দরকার। এমন পরিবেশ তৈরি করবো যাতে মানুষকে  আর কারাগারে আসতে না হয়। তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কষ্ট আমার কোনদিনই সহ্য হয়নি। মনে হতো সবকিছু বদলে আলোর পৃথিবী গড়ি। হয়তো এতবড় কাজ আমি একা করতে পারবো না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কি। যদি একজন মানুষকে খারাপ পথ থেকে আলোর দিকে আনতে পারি এটাই স্বার্থকতা।

বিডি সমাচারঃ কাজে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি?

রিক্তা খাতুনঃ আমি  কাজের ক্ষেত্রে বরাবরই আত্নবিশ্বাসী, পাছে লোকে কিছু বলে এগুলো একদম কানে নেইনি। আশেপাশের লোকজন মাঝেমধ্যে হয়তো বলতো আমি পারবনা। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি যে মেয়ে বলে কোনো কাজে আটকে গেছি। নিজে সর্বোচ্চ দিয়ে  চেষ্টা করে গেছি। যারা ভেবেছিলেন আমি পারবো না, ইনশাল্লাহ তাদের ধারণা পরিবর্তন করতে পেরেছি।

বিডি সমাচারঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

রিক্তা খাতুনঃ ছোটবেলা থেকেই জীবনের সাথে অনেক লড়াই করে এসেছি। অসহায় ও দিনমজুর  মানুষের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। অধিকারবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের মাঝে সুযোগ সুবিধা পৌছে দিতে চাই। যতদিন সার্ভিসে থাকবো মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে চাই এবং সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নত করতে  পলিসি মেকিংয়ের অংশ হতে চাই।

বিডি সমাচারঃ যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?

রিক্তা খাতুনঃ সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের ভুল ত্রুটি ও দুর্বলতা খুজে বের করে অনুশীলন করতে হবে। নিজের দুর্বলতা নিজে যতটা বের করা যায় অন্যেরা ততটা পারে না। আত্মবিশ্বাস থাকাটা জরুরি, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে আমি পারবই। তবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিসিএস ছাড়াও বিকল্প অপশন প্রস্তুত রাখতে হবে। জীবনের জন্য বিসিএস, বিসিএসের জন্য জীবন নয়।

বিডি সমাচারঃ সম্প্রতি করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?

রিক্তা খাতুনঃ করোনায় বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি স্যারের নিদর্শনায় স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক বিতরন ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করি। করোনা সেলে ভুক্তভোগী ফোন দিলে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেই। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী: রিক্তা খাতুন

Update Time : ১২:৪৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১

রিক্তা খাতুন ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি খুলনার রূপসা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুর রব এবং মা নাছিমা বেগম। রূপসা উপজেলার গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, খুলনা সদর সবুরুন্নেসা ডিগ্রী মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্ত্বিকাবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন বিডি সমাচারকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো.আনিসুল ইসলাম

বিডি সমাচারঃ আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

রিক্তা খাতুনঃ ছোটবেলায় বেশ ডানপিটে ছিলাম। তবে একটু ভাবুক প্রকৃতিরও। নোটবুক থেকে গৎবাঁধা মূখস্ত করাটা আমার ভালো লাগত না। সবকিছু দেখে নিজের মত করে লেখার একটা চেষ্টা ছিল সবসময়। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউটিং, ডিবেট, একক অভিনয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। কবিতা লেখার একটা ঝোক ছিল সবসময়। খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ কাব স্কাউট ছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে বেশী সক্রিয় থাকার কারনে উপজেলায় বেশ পরিচিত ছিলাম।

বিডি সমাচারঃ পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি-না?

রিক্তা খাতুনঃ পড়াশোনায় তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তবে ছোটবেলায় একটা দূর্ঘটনায় আমাদের পারিবারিক অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হয়ে যায়। তখন বেশ বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার কারনে যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাটা ছোটবেলা থেকেই রপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

বিডি সমাচারঃ বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?

রিক্তা খাতুনঃ  অনার্স শেষ করার পর একটি বেসরকারি  চাকুরীতে যোগদান করি। তখন মাস্টার্স করছি, পাশাপাশি চাকুরী চলছে। অফিসে কয়েকজন কলিগদের দেখতাম চাকুরীর পাশাপাশি বিসিএসের জন্য খুব পড়াশোনা করতেন। প্রাইভেট চাকুরীর কষ্টের মাঝে তাদের এত পড়াশোনা করা দেখে আমি বিসিএস দেওয়ার চিন্তা করি। মূলত তখন কলিগদের চেষ্টা দেখেই বিসিএস নিয়ে মনে একটা ভাবনার জগৎ তৈরি হয় যেটা থেকে বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।

বিডি সমাচারঃ আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প কেমন ছিল?

রিক্তা খাতুনঃ  চাকুরীতে থাকা অবস্থায় কলিগদের দেখে ৩৬ তম বিসিএসে প্রথম আবেদন করি। চাকুরীতে থাকাকালীন পড়ার তেমন একটা সুযোগ হতো না। তবে কাজের পাশাপাশি যতটুকু সময় পেতাম পড়াশোনা  করতাম।  বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়াতে বিজ্ঞানে ভালো ছিলাম। বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান  আর মাঝে মাঝে পুরনো প্রশ্নগুলো ঝালাই করা এইটুকুই প্রস্তুতি নিতে পারতাম। প্রিলিতে টিকে যাওয়ার পর একটা গার্লস স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সেখান থেকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর চর্চা হয়ে যেত। সময় বের করে অংক, আন্তর্জাতিক ও সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা দেখার চেষ্টা করতাম। যাইহোক, প্রিলি,লিখিত আর ভাইভাতে টেকার পর ৩৬ তম বিসিএস এর ফলাফল ঘোষণা হয় যাতে নন-ক্যাডার আসে, তখন হতাশ না হলেও মন খারাপের অনুভূতি তো ছিলই। নন- ক্যাডার হিসেবে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগদান করি। বিভিন্ন কারনে ৩৭ তম বিসিএস দেওয়া হয়নি। ওখান থেকে ৩৮ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী ও লিখিত দেই। কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশ হয় এবং  উত্তীর্ণ হই। উত্তীর্ণের পর মনে হল আরো একবার চেষ্টা করা উচিত। কারাগারের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর পর আমি খুব কম সময় পেতাম। বন্দীদের দেখার পর  যখনি সময় পেতাম বই উল্টে উল্টে পড়তাম। ১৬-১৮ ঘন্টা পড়ার সুযোগ আমার কখনোই ছিলনা। আমি আমার দূর্বলতাগুলো খুঁজে সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করতাম। ভাইবাতে যে বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া লাগতো সেগুলো বেশী পড়ি। সবসময়  আত্নবিশ্বাসী ছিলাম যে কেউ না পারলেও আমি পারবো। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে ৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেলাম।

বিডি সমাচারঃ কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?

রিক্তা খাতুনঃ আমি বরাবরই জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। তবে ডেপুটি জেলার হিসেবে  থাকা অবস্থায় সমাজের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ এসব দেখে মনে হচ্ছিল আরো বড় পরিসরে জনস্বার্থে কিছু করা দরকার। এমন পরিবেশ তৈরি করবো যাতে মানুষকে  আর কারাগারে আসতে না হয়। তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কষ্ট আমার কোনদিনই সহ্য হয়নি। মনে হতো সবকিছু বদলে আলোর পৃথিবী গড়ি। হয়তো এতবড় কাজ আমি একা করতে পারবো না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কি। যদি একজন মানুষকে খারাপ পথ থেকে আলোর দিকে আনতে পারি এটাই স্বার্থকতা।

বিডি সমাচারঃ কাজে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি?

রিক্তা খাতুনঃ আমি  কাজের ক্ষেত্রে বরাবরই আত্নবিশ্বাসী, পাছে লোকে কিছু বলে এগুলো একদম কানে নেইনি। আশেপাশের লোকজন মাঝেমধ্যে হয়তো বলতো আমি পারবনা। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি যে মেয়ে বলে কোনো কাজে আটকে গেছি। নিজে সর্বোচ্চ দিয়ে  চেষ্টা করে গেছি। যারা ভেবেছিলেন আমি পারবো না, ইনশাল্লাহ তাদের ধারণা পরিবর্তন করতে পেরেছি।

বিডি সমাচারঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

রিক্তা খাতুনঃ ছোটবেলা থেকেই জীবনের সাথে অনেক লড়াই করে এসেছি। অসহায় ও দিনমজুর  মানুষের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। অধিকারবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের মাঝে সুযোগ সুবিধা পৌছে দিতে চাই। যতদিন সার্ভিসে থাকবো মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে চাই এবং সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নত করতে  পলিসি মেকিংয়ের অংশ হতে চাই।

বিডি সমাচারঃ যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?

রিক্তা খাতুনঃ সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের ভুল ত্রুটি ও দুর্বলতা খুজে বের করে অনুশীলন করতে হবে। নিজের দুর্বলতা নিজে যতটা বের করা যায় অন্যেরা ততটা পারে না। আত্মবিশ্বাস থাকাটা জরুরি, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে আমি পারবই। তবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিসিএস ছাড়াও বিকল্প অপশন প্রস্তুত রাখতে হবে। জীবনের জন্য বিসিএস, বিসিএসের জন্য জীবন নয়।

বিডি সমাচারঃ সম্প্রতি করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?

রিক্তা খাতুনঃ করোনায় বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি স্যারের নিদর্শনায় স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক বিতরন ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করি। করোনা সেলে ভুক্তভোগী ফোন দিলে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেই। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকি।