বিতর্কমুক্ত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চান শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৮:২২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২
  • / ১৭৫ Time View

মিনহাজুল ইসলাম , জবি সংবাদদাতা :

শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে গেল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় ২০ টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় একসাথে। এতে প্রথমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দিত হলেও এই পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটি থাকায় অনেক সমালোচনাও হয়েছে। একইসাথে পরীক্ষা হলেও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা আবেদন ফি, সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে তদস্থলে আইসিসি যুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মাইগ্রেশন পদ্ধতি না থাকা, ফলাফলভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ না করে শুধু নম্বর প্রকাশ করা ইত্যাদি নিয়ে ছিল তুমুল বিতর্ক। এবার সেসকল বির্তকমুক্ত পরীক্ষার দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, গত সেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ইউনিটে আবেদনের জন্য ৬০০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করে। ফলে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গেলে প্রয়োজন হয় ১২ হাজার টাকা! যা এদেশের অনেকে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সারা মাসের আয়। ফলে বিড়ম্বনায় পড়ে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও গতবার ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সিরিয়াল করে দেয়া হয়নি কোনো মেধাতালিকা! বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নম্বরের ভিত্তিতে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এটা নিয়ে তখন সৃষ্টি হয় আরেক ধোঁয়াশা। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সিরিয়াল না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে অক্ষম হয়ে যান যে, তার চান্স হবে কিনা। ফলে, প্রায় ৬ হাজার আসনের বিপরীতে নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। যে ব্যয়ভার বহন করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।

তাছাড়া বিতর্ক রয়েছে আরও কিছু বিষয় নিয়েও। হঠাৎ ২০২০-২১ সেশন থেকেই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান পুরোপুরি তুলে দিয়ে যুক্ত করা হয় ২৫ নম্বরের আইসিটি। অথচ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে। এমনকি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টনেও সাধারণ জ্ঞান বিদ্যমান। তাছাড়া দেশের সকল স্কুল কলেজে এখনও পর্যাপ্ত আইসিটি শিক্ষক নেই। নেই মানসম্পন্ন আইসিটি শিক্ষার ব্যবস্থাও। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তদস্থলে আইসিটি যুক্ত করা নিয়ে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, যেহেতু বর্তমান বাজারে আইসিটি বিষয়টির চাহিদা ঢের, সেহেতু আইসিটিতে কিছু নম্বর নির্ধারণ করা যেত। কিন্তু হঠাৎ করে সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে এত নম্বরের আইসিটি নির্ধারণ করা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। যদিও এই অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার থেকে আইসিটি তুলে দিতে চেয়েছে গুচ্ছ কমিটি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার মাত্র কয়েকমাস আগে এই সিদ্ধান্ত আসায় এতদিন আইসিটির প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

গুচ্ছ পদ্ধতির সমস্যা বিষয়ে গতসেশনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইসলাম জুলেখা বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান ইউনিটের প্রশ্নে যেসব গণিত এসেছিল, সেগুলো করতে ক্যালকুলেটর প্রয়োজন হয়। অথচ, ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। প্রশ্ন করার সময় এসব দিক একটু খেয়াল রাখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া গুচ্ছ কমিটির উচিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী সিলেকশন সিস্টেম ত্যাগ করা।যেসকল ছাত্রছাত্রীদের আবেদন করার মতো ন্যূনতম জিপিএ রয়েছে তাদের সবাইকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

এই সেশনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গুচ্ছ কমিটির উচিত গতবারের ভুলগুলো শুধরে এবার ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ। তাহলেই গুচ্ছ সকল শিক্ষার্থীর জন্য কল্যাণকর হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বিতর্কমুক্ত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চান শিক্ষার্থীরা

Update Time : ০৮:২২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

মিনহাজুল ইসলাম , জবি সংবাদদাতা :

শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে গেল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় ২০ টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় একসাথে। এতে প্রথমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দিত হলেও এই পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটি থাকায় অনেক সমালোচনাও হয়েছে। একইসাথে পরীক্ষা হলেও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা আবেদন ফি, সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে তদস্থলে আইসিসি যুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মাইগ্রেশন পদ্ধতি না থাকা, ফলাফলভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ না করে শুধু নম্বর প্রকাশ করা ইত্যাদি নিয়ে ছিল তুমুল বিতর্ক। এবার সেসকল বির্তকমুক্ত পরীক্ষার দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, গত সেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ইউনিটে আবেদনের জন্য ৬০০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করে। ফলে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গেলে প্রয়োজন হয় ১২ হাজার টাকা! যা এদেশের অনেকে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সারা মাসের আয়। ফলে বিড়ম্বনায় পড়ে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও গতবার ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সিরিয়াল করে দেয়া হয়নি কোনো মেধাতালিকা! বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নম্বরের ভিত্তিতে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এটা নিয়ে তখন সৃষ্টি হয় আরেক ধোঁয়াশা। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সিরিয়াল না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে অক্ষম হয়ে যান যে, তার চান্স হবে কিনা। ফলে, প্রায় ৬ হাজার আসনের বিপরীতে নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। যে ব্যয়ভার বহন করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।

তাছাড়া বিতর্ক রয়েছে আরও কিছু বিষয় নিয়েও। হঠাৎ ২০২০-২১ সেশন থেকেই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান পুরোপুরি তুলে দিয়ে যুক্ত করা হয় ২৫ নম্বরের আইসিটি। অথচ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে। এমনকি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টনেও সাধারণ জ্ঞান বিদ্যমান। তাছাড়া দেশের সকল স্কুল কলেজে এখনও পর্যাপ্ত আইসিটি শিক্ষক নেই। নেই মানসম্পন্ন আইসিটি শিক্ষার ব্যবস্থাও। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তদস্থলে আইসিটি যুক্ত করা নিয়ে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, যেহেতু বর্তমান বাজারে আইসিটি বিষয়টির চাহিদা ঢের, সেহেতু আইসিটিতে কিছু নম্বর নির্ধারণ করা যেত। কিন্তু হঠাৎ করে সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে এত নম্বরের আইসিটি নির্ধারণ করা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। যদিও এই অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার থেকে আইসিটি তুলে দিতে চেয়েছে গুচ্ছ কমিটি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার মাত্র কয়েকমাস আগে এই সিদ্ধান্ত আসায় এতদিন আইসিটির প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

গুচ্ছ পদ্ধতির সমস্যা বিষয়ে গতসেশনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইসলাম জুলেখা বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান ইউনিটের প্রশ্নে যেসব গণিত এসেছিল, সেগুলো করতে ক্যালকুলেটর প্রয়োজন হয়। অথচ, ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। প্রশ্ন করার সময় এসব দিক একটু খেয়াল রাখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া গুচ্ছ কমিটির উচিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী সিলেকশন সিস্টেম ত্যাগ করা।যেসকল ছাত্রছাত্রীদের আবেদন করার মতো ন্যূনতম জিপিএ রয়েছে তাদের সবাইকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

এই সেশনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গুচ্ছ কমিটির উচিত গতবারের ভুলগুলো শুধরে এবার ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ। তাহলেই গুচ্ছ সকল শিক্ষার্থীর জন্য কল্যাণকর হবে।