বাংলাদেশে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণ কম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৭:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • / ১৩৯ Time View

 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মিউটেশন সক্ষমতা সাধারণ পর্যায়েই রয়েছে। উপসর্গবিহীন সংক্রমণ বেড়েছে। যারা বেশি কায়িক শ্রম করেন এবং প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে বেশি অভিযোজিত, সেই খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার খুব কম। তবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের পরিবর্তনের আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ কারণে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।রাশিয়াসহ বিশ্বের যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার কয়েকটির গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষকদের করা করোনার জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে সব দেশের ভ্যাকসিনই কার্যকর হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।

এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা প্রতিষ্ঠান শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা এবং বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির ইনচার্জ ড. সেলিম খান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে তিন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও বিসিএসআইআরের গবেষণায় চার ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ড. সেলিম খান। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা গ্লোব বায়োটেকের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, আগামী মাসেই তারা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে জমা দেবেন।

ড. সমীর কুমার সাহা জানান, শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন এখনও জিনোম সিকোয়েন্স করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নবজাতক এবং তাদের মায়েদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের প্রভাব কী, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। এখন পর্যন্ত আগের অবস্থাই দেখা যাচ্ছে। জিনগত চরিত্র কিংবা মিউটেশনে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। মালয়েশিয়া এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের বড় পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। একটা বিষয় হচ্ছে, মালয়েশিয়া ‘ডি৬১৪জি’র যে কথাটি বলছে, বাংলাদেশে কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণই হয়েছে এই ‘জি’ দিয়ে। সাত থেকে আটটি ক্ষেত্রে ‘বি’ পাওয়া গেছে। অন্য সব ক্ষেত্রে ‘ডি৬১৪জি’ পাওয়া গেছে। অতএব, এ নিয়ে বাংলাদেশে আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে তুলনামূলকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। গ্রামে যারা ছোটবেলা থেকে অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম এবং প্রতিকূল পরিবেশে জীবনযাপনে অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার কম এবং সংক্রমণ হলেও উপসর্গ দৃশ্যমান হয়নি। যেমন ধরুন, বিদেশ কিংবা শহর থেকে গ্রামে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে অনেকের সর্দি লাগে, কাশি হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ ঝুমবৃষ্টিতে ভিজছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কাটছেন, কিন্তু তাদের এত সর্দি-কাশি হতে দেখা যায় না। এটাই হচ্ছে অভিযোজন ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বেশি বলেই বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণ কম। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি উপসর্গবিহীন। এ জন্য ঝুঁকিটাও বেশি। উপসর্গবিহীন কেউ অজান্তে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষকে সংক্রমিত করলে তার জন্য এটা মৃত্যুর ঝুঁকি বয়ে আনবে। এ কারণে এখনও নিজেকে যতটা সম্ভব সুরক্ষিত রাখতে হবে, যেন নিজেও সংক্রমিত না হই, অন্যকেও সংক্রমিত না করি।

ভ্যাকসিন তৈরি সম্পর্কে ড. সমীর বলেন, রাশিয়া খুব দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা বলেছে, এটা নিয়ে বিতর্কও আছে। কিন্তু এটা অসম্ভব কিছু নয়, কারও যদি সেই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকে, তাহলে তারা ভ্যাকসিন কম সময়ে তৈরি করতে পারে। ভ্যাকসিন লাগবেই, ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আশার কথা হচ্ছে, বিশ্বের সব দেশই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বিশ্নেষণ করেছে। ফলে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে, সবগুলোই বিশ্বের জন্যই তৈরি হচ্ছে এবং সব দেশের মানুষের ওপরই কার্যকর হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরই নতুন ভ্যাকসিন হয়। একটা ভ্যাকসিন হয়তো এক বছর পর আর কার্যকর থাকে না। কিন্তু কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে সেটা হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিশ্চিত করেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং তা মানুষকে দীর্ঘদিন ধরেই সুরক্ষা দেবে। বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্লোব বায়োটেক হয়তো নিজেরাও ভ্যাকসিন তৈরি করবে। পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা যেহেতু প্রমাণিত, সে কারণে তারা বাইরের দেশের কোম্পানির ভ্যাকসিনও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারবে। যেমন ভারতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করছে ভারতীয় কোম্পানি। ভারতের জন্য ওই কোম্পানিই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে।

বিসিএসআইআরের ড. সেলিম খান বলেন, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের করা জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য রাশিয়ার ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় থাকা সব দেশের কোম্পানিই নিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গবেষকদের জিনোম সিকোয়েন্সকে অন্যতম সেরার স্বীকৃতিও দিয়েছে। ফলে বিশ্বের যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, সেসব ভ্যাকসিন বাংলাদেশের মানুষের জন্যও কার্যকর হবে। তিনি জানান, বর্তমানে ৩২৯টি নমুনা নিয়ে কাজ করছে বিসিএসআইআর। এর মধ্যে ২৬৫টি সায়েন্স ল্যাবরেটরির নিজস্ব প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা নমুনা। এটা চলমান গবেষণা।

তিনি জানান, সর্বশেষ বিশ্নেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আগের চরিত্রেই আছে। এর বড় কোনো পরিবর্তন নেই। আগের মতোই সংক্রমিতদের শরীরে ‘ডি৬১৪জি’ পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘ডি৩১০ থেকে ডি ৫৪০-এর’ মধ্যে কোনো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের মিউটেশন সম্পর্কে শেষ কথা বলে কিছু নেই। যে কোনো সময় এর পরিবর্তন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে তিন ধরনের করোনাভাইরাস রয়েছে। কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরি চার ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে। পঞ্চম আরও একটা ভাইরাসের ধরনও পাওয়া গেছে।

গ্লোব বায়োটেকের ড. আসিফ মাহমুদ জানান, আগামী মাসেই দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্টসহ তাদের পুরো কার্যক্রমের ফলাফল বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে জমা দেওয়া হবে। এরপর কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে তৃতীয় পক্ষ কনট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে মানবদেহে ট্রায়াল শুরু হবে। তিনি জোর দিয়ে জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে গ্লোব বায়োটেক চলতি বছরের মধ্যেই ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সক্ষম হবে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি পুরো প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এটি হয়, তাহলে সেটি বেশ জটিল হবে। আর যদি কাঁচামাল নিয়ে এসে এখানে উৎপাদন করা হয়, সেটার ধরন আরেক রকম হবে। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্লোব বায়োটেকের নেই। তারা নিজেদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনই সাফল্যের সঙ্গে বাজারে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র : সমকাল

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণ কম

Update Time : ০৭:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মিউটেশন সক্ষমতা সাধারণ পর্যায়েই রয়েছে। উপসর্গবিহীন সংক্রমণ বেড়েছে। যারা বেশি কায়িক শ্রম করেন এবং প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে বেশি অভিযোজিত, সেই খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার খুব কম। তবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের পরিবর্তনের আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ কারণে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।রাশিয়াসহ বিশ্বের যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার কয়েকটির গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষকদের করা করোনার জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে সব দেশের ভ্যাকসিনই কার্যকর হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।

এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা প্রতিষ্ঠান শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা এবং বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির ইনচার্জ ড. সেলিম খান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে তিন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও বিসিএসআইআরের গবেষণায় চার ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ড. সেলিম খান। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা গ্লোব বায়োটেকের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, আগামী মাসেই তারা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে জমা দেবেন।

ড. সমীর কুমার সাহা জানান, শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন এখনও জিনোম সিকোয়েন্স করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নবজাতক এবং তাদের মায়েদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের প্রভাব কী, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। এখন পর্যন্ত আগের অবস্থাই দেখা যাচ্ছে। জিনগত চরিত্র কিংবা মিউটেশনে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। মালয়েশিয়া এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের বড় পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। একটা বিষয় হচ্ছে, মালয়েশিয়া ‘ডি৬১৪জি’র যে কথাটি বলছে, বাংলাদেশে কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণই হয়েছে এই ‘জি’ দিয়ে। সাত থেকে আটটি ক্ষেত্রে ‘বি’ পাওয়া গেছে। অন্য সব ক্ষেত্রে ‘ডি৬১৪জি’ পাওয়া গেছে। অতএব, এ নিয়ে বাংলাদেশে আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে তুলনামূলকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। গ্রামে যারা ছোটবেলা থেকে অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম এবং প্রতিকূল পরিবেশে জীবনযাপনে অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার কম এবং সংক্রমণ হলেও উপসর্গ দৃশ্যমান হয়নি। যেমন ধরুন, বিদেশ কিংবা শহর থেকে গ্রামে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে অনেকের সর্দি লাগে, কাশি হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ ঝুমবৃষ্টিতে ভিজছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কাটছেন, কিন্তু তাদের এত সর্দি-কাশি হতে দেখা যায় না। এটাই হচ্ছে অভিযোজন ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বেশি বলেই বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রমণ কম। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি উপসর্গবিহীন। এ জন্য ঝুঁকিটাও বেশি। উপসর্গবিহীন কেউ অজান্তে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষকে সংক্রমিত করলে তার জন্য এটা মৃত্যুর ঝুঁকি বয়ে আনবে। এ কারণে এখনও নিজেকে যতটা সম্ভব সুরক্ষিত রাখতে হবে, যেন নিজেও সংক্রমিত না হই, অন্যকেও সংক্রমিত না করি।

ভ্যাকসিন তৈরি সম্পর্কে ড. সমীর বলেন, রাশিয়া খুব দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা বলেছে, এটা নিয়ে বিতর্কও আছে। কিন্তু এটা অসম্ভব কিছু নয়, কারও যদি সেই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকে, তাহলে তারা ভ্যাকসিন কম সময়ে তৈরি করতে পারে। ভ্যাকসিন লাগবেই, ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আশার কথা হচ্ছে, বিশ্বের সব দেশই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বিশ্নেষণ করেছে। ফলে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে, সবগুলোই বিশ্বের জন্যই তৈরি হচ্ছে এবং সব দেশের মানুষের ওপরই কার্যকর হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরই নতুন ভ্যাকসিন হয়। একটা ভ্যাকসিন হয়তো এক বছর পর আর কার্যকর থাকে না। কিন্তু কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে সেটা হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিশ্চিত করেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং তা মানুষকে দীর্ঘদিন ধরেই সুরক্ষা দেবে। বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্লোব বায়োটেক হয়তো নিজেরাও ভ্যাকসিন তৈরি করবে। পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা যেহেতু প্রমাণিত, সে কারণে তারা বাইরের দেশের কোম্পানির ভ্যাকসিনও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারবে। যেমন ভারতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করছে ভারতীয় কোম্পানি। ভারতের জন্য ওই কোম্পানিই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে।

বিসিএসআইআরের ড. সেলিম খান বলেন, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের করা জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য রাশিয়ার ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় থাকা সব দেশের কোম্পানিই নিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গবেষকদের জিনোম সিকোয়েন্সকে অন্যতম সেরার স্বীকৃতিও দিয়েছে। ফলে বিশ্বের যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, সেসব ভ্যাকসিন বাংলাদেশের মানুষের জন্যও কার্যকর হবে। তিনি জানান, বর্তমানে ৩২৯টি নমুনা নিয়ে কাজ করছে বিসিএসআইআর। এর মধ্যে ২৬৫টি সায়েন্স ল্যাবরেটরির নিজস্ব প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা নমুনা। এটা চলমান গবেষণা।

তিনি জানান, সর্বশেষ বিশ্নেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আগের চরিত্রেই আছে। এর বড় কোনো পরিবর্তন নেই। আগের মতোই সংক্রমিতদের শরীরে ‘ডি৬১৪জি’ পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘ডি৩১০ থেকে ডি ৫৪০-এর’ মধ্যে কোনো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের মিউটেশন সম্পর্কে শেষ কথা বলে কিছু নেই। যে কোনো সময় এর পরিবর্তন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে তিন ধরনের করোনাভাইরাস রয়েছে। কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরি চার ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে। পঞ্চম আরও একটা ভাইরাসের ধরনও পাওয়া গেছে।

গ্লোব বায়োটেকের ড. আসিফ মাহমুদ জানান, আগামী মাসেই দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্টসহ তাদের পুরো কার্যক্রমের ফলাফল বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে জমা দেওয়া হবে। এরপর কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে তৃতীয় পক্ষ কনট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে মানবদেহে ট্রায়াল শুরু হবে। তিনি জোর দিয়ে জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে গ্লোব বায়োটেক চলতি বছরের মধ্যেই ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সক্ষম হবে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি পুরো প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এটি হয়, তাহলে সেটি বেশ জটিল হবে। আর যদি কাঁচামাল নিয়ে এসে এখানে উৎপাদন করা হয়, সেটার ধরন আরেক রকম হবে। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্লোব বায়োটেকের নেই। তারা নিজেদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনই সাফল্যের সঙ্গে বাজারে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র : সমকাল