বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে মার্চে উৎপাদনে যেতে পারে চার শিল্প প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৬২ Time View

কমল পাটোয়ারী, মিরসরাই প্রতিনধি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে ৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আগামী মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছে বেজা কর্তৃপক্ষ। এগুলো হল এশিয়ান পেইন্ট, ম্যাগডোনাল স্ট্রিল, মর্ডান সিনট্রেক ও জাপানের নিপ্পন স্ট্রিল।

ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীল, মোশাররফ ও পীরের চর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড অংশের ৩০ হাজার একর চরাঞ্চল জুড়ে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

ইতিমধ্যে ৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। মাটি ভরাট করে প্রস্তুত করা হয়েছে ২০০০ একর জমি।জানা গেছে, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমি এবং সমুদ্র তীরবর্তী জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে ৪টি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হয়েছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ।

ইতোমধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চারলেনের আরও ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা অ্যাভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করেছে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে ৫০ একর জমি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ।

এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগাং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি টাকা, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি টাকা, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি টাকা, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি টাকা এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এ গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ সৌদি সরকারের এক মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পরিদর্শন করে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বেজার সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাত হোসেন জানান, আগামী মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। এছাড়া সৌদি আরব সরকার এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে মার্চে উৎপাদনে যেতে পারে চার শিল্প প্রতিষ্ঠান

Update Time : ০২:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

কমল পাটোয়ারী, মিরসরাই প্রতিনধি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে ৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আগামী মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছে বেজা কর্তৃপক্ষ। এগুলো হল এশিয়ান পেইন্ট, ম্যাগডোনাল স্ট্রিল, মর্ডান সিনট্রেক ও জাপানের নিপ্পন স্ট্রিল।

ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীল, মোশাররফ ও পীরের চর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড অংশের ৩০ হাজার একর চরাঞ্চল জুড়ে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

ইতিমধ্যে ৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। মাটি ভরাট করে প্রস্তুত করা হয়েছে ২০০০ একর জমি।জানা গেছে, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমি এবং সমুদ্র তীরবর্তী জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে ৪টি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হয়েছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ।

ইতোমধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চারলেনের আরও ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা অ্যাভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করেছে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে ৫০ একর জমি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ।

এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগাং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি টাকা, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি টাকা, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি টাকা, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি টাকা এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এ গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ সৌদি সরকারের এক মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পরিদর্শন করে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বেজার সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাত হোসেন জানান, আগামী মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। এছাড়া সৌদি আরব সরকার এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।