পবিত্র ঈদুল আজহা রবিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৪২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জুলাই ২০২২
  • / ২৭৬ Time View

নিজস্ব সংবাদদাতা:

ভয়াবহ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে বিশ্ব। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্য সংকট দেশে দেশে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে- সেই সংকটের আঁচ লেগেছে আমাদের দেশেও। পাশাপশি মারণ ভাইরাস করোনার বার বার ফিরে আসাও জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার প্রতিদিনই বাড়ছে। এমনি প্রেক্ষাপটে আমাদের দোরগোড়ায় আবার এসেছে পবিত্র ঈদুুল আজহার যা কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত।

আগামীকাল রবিবার বাংলাদেশের মুসলমানরা পালন করবেন অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে। জামায়াতে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কুরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে হজ পালন করেছেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। হজের আনুষ্ঠনিকতা শেষে আজ সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কুরবানিসহ হজের অন্য কার্যদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কুরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কুরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কুরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সে মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কুরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কুরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ঈদুল আজহার দিন কুরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়। গরু, মহিষ, উট, ভেড়া. ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া যায়।

আগামীকাল রবিবার সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কুরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনি-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবেন। রাজধানী ঢাকায় কোথায় কখন ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত হবে, ইতোমধ্যেই তা জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজে প্রত্যেকটি মসজিদে ঈদের জামাতের সময়সূচি মুসল্লিদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। চিফ হুইপ, হুইপরা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন। এই জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত।

জনগণকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Please Share This Post in Your Social Media

পবিত্র ঈদুল আজহা রবিবার

Update Time : ০৯:৪২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জুলাই ২০২২

নিজস্ব সংবাদদাতা:

ভয়াবহ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে বিশ্ব। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্য সংকট দেশে দেশে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে- সেই সংকটের আঁচ লেগেছে আমাদের দেশেও। পাশাপশি মারণ ভাইরাস করোনার বার বার ফিরে আসাও জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার প্রতিদিনই বাড়ছে। এমনি প্রেক্ষাপটে আমাদের দোরগোড়ায় আবার এসেছে পবিত্র ঈদুুল আজহার যা কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত।

আগামীকাল রবিবার বাংলাদেশের মুসলমানরা পালন করবেন অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে। জামায়াতে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কুরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে হজ পালন করেছেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। হজের আনুষ্ঠনিকতা শেষে আজ সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কুরবানিসহ হজের অন্য কার্যদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কুরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কুরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কুরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সে মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কুরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কুরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ঈদুল আজহার দিন কুরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়। গরু, মহিষ, উট, ভেড়া. ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া যায়।

আগামীকাল রবিবার সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কুরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনি-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবেন। রাজধানী ঢাকায় কোথায় কখন ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত হবে, ইতোমধ্যেই তা জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজে প্রত্যেকটি মসজিদে ঈদের জামাতের সময়সূচি মুসল্লিদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। চিফ হুইপ, হুইপরা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন। এই জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত।

জনগণকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।