ত্রাণ-পরিত্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৩৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১
  • / ১৬৭ Time View

ত্রাণ-পরিত্রাণ
এস এম লিমান

[ ১. রাজ-দরবার ]

“কি হেতু এসেছ সপরিবার, দরবারে এ দুর্দিনে?
যেহেতু আমি দিয়েছি যা লাগে মহামারী নিবারণে।
এখন তো উচিৎ ঘরে থাকিয়া,
কর্মব্যস্ততা সাঙ্গ করিয়া
কাটানো এ পরিস্থিতি।
অহেতুক তবু বৌ বাচ্চা লয়ে পাড়ি দিয়েছ এ অবধি! ”

[২. দিনমজুর ]

“মহারাজ, আজি মোট তিনটা দিবস যাচ্ছে অনাহারে।
নেই কাজ, নেই উপায় উপার্জনের। খাদ্য কিনিবারে।
যা ছিল গোলায় খাদ্য রসদ
খেয়েছি, বেঁচে কিনেছি ওষধ।
এ যাবৎ, মুমূর্ষু দিন যায়।
আজ এদের লয়ে বেঁচে থাকার বলুন কি উপায়? ”

[৩. মহারাজ ]

“কেন? আমিতো করেছি খাদ্য বন্টণ সবার নামেতে !
যেন রসদ ঠিকঠাক ভাবে পায় সর্বসমেতে।
দ্বায়িত্বে গাঁয়ের নায়েব-জমিদার
ঘরে-ঘরে খাবার পৌঁছে দেবার।
পায়নি নাকি কেহ ?
হেন, হবার নয়তো কথা। কালকে আবার যেও।

নায়েব? বলে দিও সে গ্রামে জমিদার যে আছে।
গায়েব না থেকে যেন করে দ্বায়িত্ব যা আছে।
কথা ছিল পাবে সব পরিবার,
তবু এরা দিন তিন অনাহার!
আবার, পুণরাবৃত্তি না হোক।
অতএব, সেই জমিদার তরে আজই পাঠাও লোক। ”

[৪. মজুরদের বাড়ি ]

পরবেলা পায়েক-পেয়াদাসহ গেল জমিদার নিজে।
অবলা পরিবার দেখে তাহাদের আত্মহারা কি যে!
ভাবিলো, “আজ পরিবার লয়ে
রাঁধিব খাবার নিজ আলয়ে।
খাব কতদিন পর। ”
যা বলা ছিল, শোকর করিল উপরওয়ালার ‘পর।

জমিদার চেঁচায়, “কোন সে শালায় দিয়ে এসেছে নালিশ?
আমার -ই ঘরে এসেছে আজ মহারাজের সালিশ।
রাখব না ছাল,
সব পঙ্গপাল
মরবে আমার হাতে।
এবার দেখছি কিভাবে খাবার পরে তোদের পাতে।”

পেয়াদা সবে মারিলো কি মার সবজনেরে ধরে।
ফায়দা না হয় কোনোরূপ বাঁচার, হাতে-পায়ে করে।
বলল তারা, “পায়ে পড়ছি।
নালিশ করিনি কসম করছি।
কিছুটি না জানতাম । ”
বেকায়দা যায় সব আর্তনাদ, সকল রব- হরি নাম।

[ ৫. পরিহাস ]

যায় তারা ভেঙ্গে হাড়-ঘর-বাড়ি।
মা’য় কাঁদে তার স্বামী-সন্তান ধরি,
“নাই কিছু, ছাই পোড়াকপালে।
তাই কিছু আর চেওনা একালে।
ঠাঁই হবে ঠিক স্বর্গকোলে
মরে যখন যাই।”
হায়, সত্যিই নষ্টের জগতে, অভাগার কেউ নাই।
[ইতি]

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ত্রাণ-পরিত্রাণ

Update Time : ০৯:৩৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১

ত্রাণ-পরিত্রাণ
এস এম লিমান

[ ১. রাজ-দরবার ]

“কি হেতু এসেছ সপরিবার, দরবারে এ দুর্দিনে?
যেহেতু আমি দিয়েছি যা লাগে মহামারী নিবারণে।
এখন তো উচিৎ ঘরে থাকিয়া,
কর্মব্যস্ততা সাঙ্গ করিয়া
কাটানো এ পরিস্থিতি।
অহেতুক তবু বৌ বাচ্চা লয়ে পাড়ি দিয়েছ এ অবধি! ”

[২. দিনমজুর ]

“মহারাজ, আজি মোট তিনটা দিবস যাচ্ছে অনাহারে।
নেই কাজ, নেই উপায় উপার্জনের। খাদ্য কিনিবারে।
যা ছিল গোলায় খাদ্য রসদ
খেয়েছি, বেঁচে কিনেছি ওষধ।
এ যাবৎ, মুমূর্ষু দিন যায়।
আজ এদের লয়ে বেঁচে থাকার বলুন কি উপায়? ”

[৩. মহারাজ ]

“কেন? আমিতো করেছি খাদ্য বন্টণ সবার নামেতে !
যেন রসদ ঠিকঠাক ভাবে পায় সর্বসমেতে।
দ্বায়িত্বে গাঁয়ের নায়েব-জমিদার
ঘরে-ঘরে খাবার পৌঁছে দেবার।
পায়নি নাকি কেহ ?
হেন, হবার নয়তো কথা। কালকে আবার যেও।

নায়েব? বলে দিও সে গ্রামে জমিদার যে আছে।
গায়েব না থেকে যেন করে দ্বায়িত্ব যা আছে।
কথা ছিল পাবে সব পরিবার,
তবু এরা দিন তিন অনাহার!
আবার, পুণরাবৃত্তি না হোক।
অতএব, সেই জমিদার তরে আজই পাঠাও লোক। ”

[৪. মজুরদের বাড়ি ]

পরবেলা পায়েক-পেয়াদাসহ গেল জমিদার নিজে।
অবলা পরিবার দেখে তাহাদের আত্মহারা কি যে!
ভাবিলো, “আজ পরিবার লয়ে
রাঁধিব খাবার নিজ আলয়ে।
খাব কতদিন পর। ”
যা বলা ছিল, শোকর করিল উপরওয়ালার ‘পর।

জমিদার চেঁচায়, “কোন সে শালায় দিয়ে এসেছে নালিশ?
আমার -ই ঘরে এসেছে আজ মহারাজের সালিশ।
রাখব না ছাল,
সব পঙ্গপাল
মরবে আমার হাতে।
এবার দেখছি কিভাবে খাবার পরে তোদের পাতে।”

পেয়াদা সবে মারিলো কি মার সবজনেরে ধরে।
ফায়দা না হয় কোনোরূপ বাঁচার, হাতে-পায়ে করে।
বলল তারা, “পায়ে পড়ছি।
নালিশ করিনি কসম করছি।
কিছুটি না জানতাম । ”
বেকায়দা যায় সব আর্তনাদ, সকল রব- হরি নাম।

[ ৫. পরিহাস ]

যায় তারা ভেঙ্গে হাড়-ঘর-বাড়ি।
মা’য় কাঁদে তার স্বামী-সন্তান ধরি,
“নাই কিছু, ছাই পোড়াকপালে।
তাই কিছু আর চেওনা একালে।
ঠাঁই হবে ঠিক স্বর্গকোলে
মরে যখন যাই।”
হায়, সত্যিই নষ্টের জগতে, অভাগার কেউ নাই।
[ইতি]