তরমুজের দাম ১০ বছরে সর্বোচ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
  • / ১৪৬ Time View

পটুয়াখালীর মোহাম্মাদ আবদুল মান্নান মৃধা প্রায় ১৭ বছর ধরে তরমুজের ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন তরমুজ চাষি। নিজের জমির তরমুজ শেষ হলেই অন্যের তরমুজ কিনে বিক্রি করেন রাজধানীর বাদামতলী মার্কেটে।

তিনি বলেন, ‘গত দুই/তিন বছর তরমুজ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। খরা বা অতি বৃষ্টিতে তরমুজ গাছের ক্ষতি হওয়ায় লোকসান গুনতে হয় প্রান্তিক চাষিদের।

তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ ভিন্ন। তার মতে এবারের বাজার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম চলছে তরমুজের। এটা শুধু রাজধানীতেই নয় প্রান্তিক চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। যদিও রাজধানীর বাজার ও প্রান্তিক চাষির মধ্যে বিস্তর ফারাক।

একটা ১২ থেকে ১৩ কেজির একটা তরমুজ প্রন্তিক চাষি ২০০ টাকায় বিক্রি করলেও রাজধানীতে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে (বায়তুল মোকাররম ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন ফলের বাজার, শান্তিনগর ফলের বাজারে) ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে এ তরমুজটি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর তরমুজের শুরু থেকেই ভালো দাম পেতে থাকেন চাষিরা। এখন অনেকটা শেষের দিকে তরমুজের সিজন। শুরুতে যে দাম পাওয়া গেছে এখন তার দ্বিগুণ দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে সবচেয়ে ছোট আকৃতির তরমুজের দামও মিলছে ১০০ টাকার ওপরে। তরমুজের এমন দাম গত ১০ বছরের মধ্যে দেখিনি।

বাদামতলীর আড়তদার ও সততা ফার্মে কর্মরত ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, এবার তরমুজ চাষিরা সিজনের শুরু থেকেই ভালো টাকা পাচ্ছেন। তবে এখন যারা রাখতে পেরেছেন তারা আরও বেশি টাকা পাচ্ছেন। এবার বন্যা বা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় উৎপাদনও ভালো হয়েছে।

ভাওয়াল ফার্ম নামে অপর আড়তে কর্মরত মাসুম নামে একজন বলেন, এ বছর তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় বাঙ্গির দামও আকাশছোঁয়া। অনেকেই প্রথম দিকে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় বাঙ্গির কথা ভেবেছেন। এতে বাঙ্গির দামও বেড়েছে অনেক। তাছাড়া সিজন শেষ দিকে মালের সংকট থাকে, এ কারণে এমনিতেই দাম বেশি হয়।

খুলনা থেকে আসা ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, এখন অন্যান্য এলাকার তরমুজ বিক্রি শেষ হলেও বরগুনা ও খুলনার তরমুজ এখনও ফসলের ক্ষেতে আছে। দাম অনেক বেশি এবার। তার মতে, গত দু’তিন বছরে কৃষক তরমুজ চাষে যে লোকসানে পড়েছিলো এবার একবারেই তা উসুল হচ্ছে।

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক কেমন দাম পাচ্ছেন এমনটা জানতে চাইলে বরগুনা থেকে আসা ফড়িয়া ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, আমরা ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে ১৬৫ টাকায় তরমুজ কিনেছি কৃষকের কাছ থেকে। অন্য বছরে যেটা ৭০-৮০ টাকায় কেনা যেতো। এবার প্রান্তিক চাষিরা ভালো লাভের মুখ দেখছেন। তবে রাজধানীর মতো দাম পেলে সেটা আরও বেশি লাভ হতো। এখানে প্রান্তিক ও পাইকারির মধ্যে দুইগুণ ব্যবধান রয়েছে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

তরমুজের দাম ১০ বছরে সর্বোচ্চ

Update Time : ১২:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১

পটুয়াখালীর মোহাম্মাদ আবদুল মান্নান মৃধা প্রায় ১৭ বছর ধরে তরমুজের ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন তরমুজ চাষি। নিজের জমির তরমুজ শেষ হলেই অন্যের তরমুজ কিনে বিক্রি করেন রাজধানীর বাদামতলী মার্কেটে।

তিনি বলেন, ‘গত দুই/তিন বছর তরমুজ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। খরা বা অতি বৃষ্টিতে তরমুজ গাছের ক্ষতি হওয়ায় লোকসান গুনতে হয় প্রান্তিক চাষিদের।

তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ ভিন্ন। তার মতে এবারের বাজার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম চলছে তরমুজের। এটা শুধু রাজধানীতেই নয় প্রান্তিক চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। যদিও রাজধানীর বাজার ও প্রান্তিক চাষির মধ্যে বিস্তর ফারাক।

একটা ১২ থেকে ১৩ কেজির একটা তরমুজ প্রন্তিক চাষি ২০০ টাকায় বিক্রি করলেও রাজধানীতে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে (বায়তুল মোকাররম ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন ফলের বাজার, শান্তিনগর ফলের বাজারে) ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে এ তরমুজটি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর তরমুজের শুরু থেকেই ভালো দাম পেতে থাকেন চাষিরা। এখন অনেকটা শেষের দিকে তরমুজের সিজন। শুরুতে যে দাম পাওয়া গেছে এখন তার দ্বিগুণ দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে সবচেয়ে ছোট আকৃতির তরমুজের দামও মিলছে ১০০ টাকার ওপরে। তরমুজের এমন দাম গত ১০ বছরের মধ্যে দেখিনি।

বাদামতলীর আড়তদার ও সততা ফার্মে কর্মরত ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, এবার তরমুজ চাষিরা সিজনের শুরু থেকেই ভালো টাকা পাচ্ছেন। তবে এখন যারা রাখতে পেরেছেন তারা আরও বেশি টাকা পাচ্ছেন। এবার বন্যা বা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় উৎপাদনও ভালো হয়েছে।

ভাওয়াল ফার্ম নামে অপর আড়তে কর্মরত মাসুম নামে একজন বলেন, এ বছর তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় বাঙ্গির দামও আকাশছোঁয়া। অনেকেই প্রথম দিকে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় বাঙ্গির কথা ভেবেছেন। এতে বাঙ্গির দামও বেড়েছে অনেক। তাছাড়া সিজন শেষ দিকে মালের সংকট থাকে, এ কারণে এমনিতেই দাম বেশি হয়।

খুলনা থেকে আসা ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, এখন অন্যান্য এলাকার তরমুজ বিক্রি শেষ হলেও বরগুনা ও খুলনার তরমুজ এখনও ফসলের ক্ষেতে আছে। দাম অনেক বেশি এবার। তার মতে, গত দু’তিন বছরে কৃষক তরমুজ চাষে যে লোকসানে পড়েছিলো এবার একবারেই তা উসুল হচ্ছে।

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক কেমন দাম পাচ্ছেন এমনটা জানতে চাইলে বরগুনা থেকে আসা ফড়িয়া ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, আমরা ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে ১৬৫ টাকায় তরমুজ কিনেছি কৃষকের কাছ থেকে। অন্য বছরে যেটা ৭০-৮০ টাকায় কেনা যেতো। এবার প্রান্তিক চাষিরা ভালো লাভের মুখ দেখছেন। তবে রাজধানীর মতো দাম পেলে সেটা আরও বেশি লাভ হতো। এখানে প্রান্তিক ও পাইকারির মধ্যে দুইগুণ ব্যবধান রয়েছে বলে জানান তিনি।