ঢাবিতে ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৪৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৩০ Time View

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে আজ শুক্রবার(২০ জানুয়ারি) দুপুরে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উন্নত জীবন চাইলে সবাইকে আধুনিক-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী।

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ঢাকার পুরোনো রেলস্টেশনের কাছে ও গুলিস্তানের পর থেকে একসময় বিরাট পুরোনো কাপড়ের মার্কেট ছিল। বিদেশিদের ওজন দরে বিক্রি করে দেওয়া পরিধেয় বস্ত্র সেখানে বিক্রি হতো। আজকে সেখানে কিন্তু আর এই মার্কেট নেই। কেউ আর পুরোনো কাপড় কিনে নিয়ে যায় না।

সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানের সংসদে একজন সংসদ সদস্য বক্তব্য দিচ্ছিলেন যে তাঁরা বর্তমান পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানাবেন। আরেকজন সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘মুঝে সুইজারল্যান্ড নেহি চাইয়ে, মুঝে বাংলাদেশ বানা দো।’

মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই খবরগুলো যখন পড়েন, তখন তাঁর মনে হয়, এটা শোনার পর যদি মারাও যান, একজন রাজনৈতিক কর্মী, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও বঙ্গবন্ধুর একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে তাঁর জীবনে আর কী চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে! অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের যে নিশ্চয়তা ও প্রতিশ্রুতি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে তাঁরা তা পরিপূর্ণ করতে পেরেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির স্মৃতিচারণা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুকে নানা মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। আর কোনো দিন তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবেন না, জীবিত অবস্থায় এই দেশের মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না, এমন আশঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই মাটিতে তিনি ফেরেন। কিন্তু তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ বিমানবন্দর স্পর্শ করতে গিয়েও পারছিল না। কারণ, বিমানবন্দর ছিল লোকে লোকারণ্য। পরে উড়োজাহাজটি মাটি স্পর্শ করে। উড়োজাহাজের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ক্লিশ দেহ, কিন্তু জ্যোতির্ময় হয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে আবির্ভূত হন। কবির ভাষায় সেটিকে বলা যায়, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।’ সেটিই ছিল যথার্থ উপমা।

আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নানা ত্যাগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্তহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের বিষয়গুলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জানা উচিত। এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, সব ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সততা, মহানুভবতা, গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু তিনটি বই রচনা করেছেন। তাঁর মহাকাব্যিক আত্মজীবনী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এই বইগুলো ছেলেমেয়েদের অবশ্যপাঠ্য। এমন আত্মজীবনী পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম আছে। মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের আত্মজীবনীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর মিল রয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আজকের দিনেও অপরাধী চক্রের রাজনৈতিক দল আছে। আজকেও সমাবেশের নামে খুনিদের একত্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের কাছে আমাদের সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিদেশিদের ব্যবস্থাপত্র। ভোট নয়, তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বাংলার মানুষের লাশ।

বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রায় দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কবর বাংলার মাটিতে আমরা নিশ্চিত করব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ সভা সঞ্চালনা করেন। সভায় বিশেষ আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঢাবিতে ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক আলোচনা

Update Time : ০৯:৪৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে আজ শুক্রবার(২০ জানুয়ারি) দুপুরে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উন্নত জীবন চাইলে সবাইকে আধুনিক-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী।

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ঢাকার পুরোনো রেলস্টেশনের কাছে ও গুলিস্তানের পর থেকে একসময় বিরাট পুরোনো কাপড়ের মার্কেট ছিল। বিদেশিদের ওজন দরে বিক্রি করে দেওয়া পরিধেয় বস্ত্র সেখানে বিক্রি হতো। আজকে সেখানে কিন্তু আর এই মার্কেট নেই। কেউ আর পুরোনো কাপড় কিনে নিয়ে যায় না।

সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানের সংসদে একজন সংসদ সদস্য বক্তব্য দিচ্ছিলেন যে তাঁরা বর্তমান পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানাবেন। আরেকজন সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘মুঝে সুইজারল্যান্ড নেহি চাইয়ে, মুঝে বাংলাদেশ বানা দো।’

মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই খবরগুলো যখন পড়েন, তখন তাঁর মনে হয়, এটা শোনার পর যদি মারাও যান, একজন রাজনৈতিক কর্মী, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও বঙ্গবন্ধুর একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে তাঁর জীবনে আর কী চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে! অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের যে নিশ্চয়তা ও প্রতিশ্রুতি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে তাঁরা তা পরিপূর্ণ করতে পেরেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির স্মৃতিচারণা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুকে নানা মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। আর কোনো দিন তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবেন না, জীবিত অবস্থায় এই দেশের মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না, এমন আশঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই মাটিতে তিনি ফেরেন। কিন্তু তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ বিমানবন্দর স্পর্শ করতে গিয়েও পারছিল না। কারণ, বিমানবন্দর ছিল লোকে লোকারণ্য। পরে উড়োজাহাজটি মাটি স্পর্শ করে। উড়োজাহাজের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ক্লিশ দেহ, কিন্তু জ্যোতির্ময় হয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে আবির্ভূত হন। কবির ভাষায় সেটিকে বলা যায়, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।’ সেটিই ছিল যথার্থ উপমা।

আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নানা ত্যাগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্তহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের বিষয়গুলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জানা উচিত। এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, সব ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সততা, মহানুভবতা, গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু তিনটি বই রচনা করেছেন। তাঁর মহাকাব্যিক আত্মজীবনী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এই বইগুলো ছেলেমেয়েদের অবশ্যপাঠ্য। এমন আত্মজীবনী পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম আছে। মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের আত্মজীবনীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর মিল রয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আজকের দিনেও অপরাধী চক্রের রাজনৈতিক দল আছে। আজকেও সমাবেশের নামে খুনিদের একত্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের কাছে আমাদের সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিদেশিদের ব্যবস্থাপত্র। ভোট নয়, তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বাংলার মানুষের লাশ।

বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রায় দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কবর বাংলার মাটিতে আমরা নিশ্চিত করব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ সভা সঞ্চালনা করেন। সভায় বিশেষ আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ।