ঢাকাই সিনেমায় গানের জাদুকর সত্য সাহা : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:৩৫:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১১২ Time View

সময় কতো দ্রুত যায়! দেখতে দেখতে ২২টি বছর পার হয়ে গেল তিনি নেই। বলছি দেশের সংগীতের বিস্ময় প্রতিভা, কিংবদন্তি সত্য সাহার কথা। তার সুর ও সংগীতে অসংখ্য কালজয়ী গান জন্ম নিয়েছে। তিনি ঢাকাই সিনেমার গানের জন্য আশির্বাদ ছিলেন, সাফল্যের জাদুকর ছিলেন।

১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি আর না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। এবারে পালিত হচ্ছে এই গুণীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।

পালিত হচ্ছে বলতে তেমন আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু অবশ্য নয়। পরিবারের মানুষদের কাছে ঘরোয়া আয়োজনেই স্মরণীয় হচ্ছেন তিনি। হয়তো কিছু পূজা-অর্চণা হবে। কিন্তু গুণীর কদর করতে বরাবরই উদাসীন আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন, বিশেষ করে সত্য সাহার কাজের বিচরণ ক্ষেত্র চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখন অবধি তেমন কোনো আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি।

সত্য সাহার পুত্র জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক ইমন সাহা বাবার স্মরণে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘“আমার মন বলে তুমি আসবে……..” আজ বাবা হারানোর ২২ বছর। ঈশ্বর আমার বাবার আত্মার মঙ্গল করুক।’

সত্য সাহাকে তার প্রয়াণ দিবসে স্মরণ করেছেন সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীরসহ আরও অনেকেই।

প্রসঙ্গত, সত্য সাহার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলাধীন নন্দীরহাটে। সেখানকার প্রভাবশালী জমিদার বংশে জন্মেছিলেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই গানের আবহ পেয়েছিলেন পরিবার ও চারপাশে। বাংলায় যে সেই সময়টা তখন সংগীতের সোনালী যুগ।

গানের পাখি সত্য সাহা ১৯৪৬-১৯৪৮ এর মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন এবং ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে ভারতের কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।

তার গান নিয়ে জানাশোনা কিংবা সমৃদ্ধ হবার ইতিহাস খুব একটা জোরালোভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তার অমর সৃষ্টির দিকে তাকালে সহজেই অনুমেয় হয় তিনি সংগীতকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন প্রেয়সীর মতোই।

তবে গানের মানুষ হিসেবে সত্য সাহা বিকশিত হন চলচ্চিত্রে। ১৯৫৫ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ থেকে তার সংগীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু। তারপর অসংখ্য কাজ তিনি করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হারিয়েও আবেদন হারায়নি ‘নীল আকাশের নিচে আমি’, ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা’, ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু’, ‘ঐ দূর দূরান্তে’, ‘তোমারই পরশে জীবন আমার’, ‘মাগো মা ওগো মা’- ইত্যাদি গানগুলো।

নতুন প্রজন্মের শিল্পী-সংগীত পরিচালকেরা এই গানগুলো নিয়ে আজও কাজ করছেন, রিমেক করছেন। এখানেই তো সত্য সাহা কালজয়ী। তার গানেরা কোনোদিন তাকে ভুলতে দেবে না। সত্য সাহার আত্মার শান্তি কামনায় তার মৃত্যু দিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঢাকাই সিনেমায় গানের জাদুকর সত্য সাহা : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

Update Time : ০৬:৩৫:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১

সময় কতো দ্রুত যায়! দেখতে দেখতে ২২টি বছর পার হয়ে গেল তিনি নেই। বলছি দেশের সংগীতের বিস্ময় প্রতিভা, কিংবদন্তি সত্য সাহার কথা। তার সুর ও সংগীতে অসংখ্য কালজয়ী গান জন্ম নিয়েছে। তিনি ঢাকাই সিনেমার গানের জন্য আশির্বাদ ছিলেন, সাফল্যের জাদুকর ছিলেন।

১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি আর না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। এবারে পালিত হচ্ছে এই গুণীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।

পালিত হচ্ছে বলতে তেমন আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু অবশ্য নয়। পরিবারের মানুষদের কাছে ঘরোয়া আয়োজনেই স্মরণীয় হচ্ছেন তিনি। হয়তো কিছু পূজা-অর্চণা হবে। কিন্তু গুণীর কদর করতে বরাবরই উদাসীন আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন, বিশেষ করে সত্য সাহার কাজের বিচরণ ক্ষেত্র চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখন অবধি তেমন কোনো আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি।

সত্য সাহার পুত্র জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক ইমন সাহা বাবার স্মরণে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘“আমার মন বলে তুমি আসবে……..” আজ বাবা হারানোর ২২ বছর। ঈশ্বর আমার বাবার আত্মার মঙ্গল করুক।’

সত্য সাহাকে তার প্রয়াণ দিবসে স্মরণ করেছেন সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীরসহ আরও অনেকেই।

প্রসঙ্গত, সত্য সাহার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলাধীন নন্দীরহাটে। সেখানকার প্রভাবশালী জমিদার বংশে জন্মেছিলেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই গানের আবহ পেয়েছিলেন পরিবার ও চারপাশে। বাংলায় যে সেই সময়টা তখন সংগীতের সোনালী যুগ।

গানের পাখি সত্য সাহা ১৯৪৬-১৯৪৮ এর মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন এবং ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে ভারতের কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।

তার গান নিয়ে জানাশোনা কিংবা সমৃদ্ধ হবার ইতিহাস খুব একটা জোরালোভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তার অমর সৃষ্টির দিকে তাকালে সহজেই অনুমেয় হয় তিনি সংগীতকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন প্রেয়সীর মতোই।

তবে গানের মানুষ হিসেবে সত্য সাহা বিকশিত হন চলচ্চিত্রে। ১৯৫৫ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ থেকে তার সংগীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু। তারপর অসংখ্য কাজ তিনি করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হারিয়েও আবেদন হারায়নি ‘নীল আকাশের নিচে আমি’, ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা’, ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু’, ‘ঐ দূর দূরান্তে’, ‘তোমারই পরশে জীবন আমার’, ‘মাগো মা ওগো মা’- ইত্যাদি গানগুলো।

নতুন প্রজন্মের শিল্পী-সংগীত পরিচালকেরা এই গানগুলো নিয়ে আজও কাজ করছেন, রিমেক করছেন। এখানেই তো সত্য সাহা কালজয়ী। তার গানেরা কোনোদিন তাকে ভুলতে দেবে না। সত্য সাহার আত্মার শান্তি কামনায় তার মৃত্যু দিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।