‘ডাকসু নির্বাচনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের সংস্কৃতি ভাঙতে শুরু করেছিল’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২
  • / ৫৪৪ Time View

কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রতিকূলতার সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছিল নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান,  “কী ভাবছেন তাঁরা ?” 

এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (সাবেক) সমাজসেবা সম্পাদক ও বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন । সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : যখন জানতে পারলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এবং ঐতিহ্যবাহী আইন বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন, তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল ?

আখতার হোসেন : সে অনুভূতি আসলে এককথায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারণ আমরা তো এসেছি একেবারে গ্রাম অঞ্চল থেকে৷ তো আমরা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পাবো সে ভাবনাটাও আমাদের সেই অর্থে ছিল না।

আর যখন জানতে পারলাম আমি আইন বিভাগে ভর্তি হতে পারবো তখন আমি খুশিতে আত্মহারা ছিলাম৷ কারণ আমার স্বপ্নই ছিল যে, আমি আইন অঙ্গনে কাজ করবো।

কাজেই আমার স্বপ্নের পথে আমি যে আমি ভালোভাবে প্রবেশ করতে পেরেছি সেটা আমাকে মনেপ্রাণে খুব অনুপ্রাণিত করেছিল।

জাননাহ : প্রথম বর্ষ থেকে আপনি কী স্বপ্ন দেখতেন ? আমরা জানি, ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থী যারা পা রাখে, তাদের বিচিত্র ধরনের স্বপ্ন থাকে এবং অভিভাবকরা তাকিয়ে থাকে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে৷ আপনার স্বপ্নটি কী ছিল?

No description available.

আখতার হোসেন : আমার শুরু থেকেই স্বপ্ন ছিল যে আমি আইন পেশায় যাবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করবো এবং পরবর্তীতে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হবো এবং এর মাধ্যমে আইন অঙ্গনে বাংলাদেশের জনসাধারণের উপকারে কাজ করবো। এই উদ্দেশ্যই আমার ছিল শুরু থেকে।

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সকলেরই নানা আশা-আকাঙ্খা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ, হলের আবাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি। তো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যে প্রত্যাশা আপনার মধ্যে ছিল, যে স্বপ্ন ছিল, যে ধরনের পরিবেশ আশা করেছিলেন, এখানে ভর্তির পরে সেই পূর্ব ধারণার সঙ্গে বাস্তবতার কতটুকু মিল পেয়েছেন ?

আখতার হোসেন : ভর্তির আগে আমার স্বপ্ন ছিল যে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো, আমার জন্য সুন্দর একটি বেড থাকবে, সুন্দর একটি টেবিল থাকবে৷ আমি আমার মতো করে পড়ালেখায় সময় দিতে পারবো। এবং যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে যাচ্ছি, আমার কথা বলা, চলাফেরার পর্যাপ্ত স্বাধীনতা থাকবে৷ এবং আমাকে কেউ রেগুলেট করবে না,  কারণ আমি বড় হয়েছি। আমার ধারণাটা ছিল এরকম৷

কিন্তু এই যে ধারণা, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পরের বাস্তবতার কোনো মিল আমি পাই নি।

এখানে আসার পরে আমাকে উঠতে হলো গণরুমে। এমন গণরুম যেটা তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ৪ জন শিক্ষার্থী থাকবে, কিন্তু ঐ রুমে আমাদের থাকতে হলো ৩৫ জন। রিডিং রুমে গিয়ে আমি জায়গা পাই না,  কারণ সিনিয়ররা সব সিট দখল করে আছেন।

অথবা, আপনি হয়তো একটি সিটে বসলেন, ১০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা পরে একজন এসে বলবে যে, তিনি এখানে বসে ছিলেন বা ঐ জায়গাটা তার। আপনাকে সেই জায়গা থেকে উঠে যেতে হচ্ছে।

রাতের বেলা স্বভাবতই গেস্টরুম। অর্থাৎ আপনার পড়ালেখার সুযোগটা নেই৷ গেস্টরুম শেষে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি রাতে সবাইকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে পাঠানো হতো। রাতের ঘুমও আপনার নেই। এর ফলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে না পারা এবং ক্লাসে এসে আপনি মনোযোগী হতে পারবেন না কারণ আপনার ঘুম পাচ্ছে।

তো এই যে পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে আমরা যাই, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে যে স্বপ্নটা আমাদের থাকে,  আমি বলবো সেটার সঙ্গে (একশ আশি ডিগ্রি) ১৮০° বিপরীত অবস্থানে থাকে

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আপনি ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক  নির্বাচিত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে আপনাদের কে দেওয়া হয় বিপুল সংবর্ধনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ছাত্রনেতাদেরকে কাছে টেনে নেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন ?

আখতার হোসেন : বাংলাদেশের রাজনীতিতে, যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন, বরাবরের মতোই তারা খুব বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছেন। দেশের গণতন্ত্রায়নের যুদ্ধ হিসেবে যদি আমি সেটাকে বলি, তাহলেও সেটা ছাত্রদের হাত ধরে শুরু হয়েছে। সেটা ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে যেমন,  ৭১ পরবর্তী সময়েও তাই। এবং যদি আমরা ৯০ এর দিকে তাকাই তাহলেও তাই৷

যদি আমরা ২০০৭-২০০৮ এর দিকেও তাকাই, তাহলেও আমরা ছাত্রদের ভূমিকাই সবার প্রথমে দেখতে পাই৷ সে জায়গা থেকে দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি – এবং তারা কিন্তু সংখ্যায় অল্প নন, অনেক ; তো এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে যখন তিনি কাছে ডাকেন,  আমার কাছে মনে হয় এটা অবশ্যই অনেক ভালো উদ্যোগ এবং ছাত্রসমাজের জন্য এটা একটা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে৷

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১০২ তম জন্মদিন পালন করছে। তবে এত বছর পরে এসেও এর অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয় বলেই মনে করেন প্রায় সকলেই। শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন সে অবস্থানে দেখতে পান কী ?

আখতার হোসেন : একটা কথা এখানে বারবার আসে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ঠিকমতো হচ্ছে না বা গুণগত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।

তবে আমার কাছে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ রিসার্চ হতে পারে এবং এখানে সেরকম মেধাসম্পন্ন অনেক শিক্ষার্থী আমাদের মধ্যে আছেন, অনেক শিক্ষক আছেন। তাহলে বাধার জায়গাটা কোথায় ?

আমার কাছে মনে হয়, আমরা এখানে যারা শিক্ষার্থী আছি তাদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ টা নেই। এটাই প্রধানতম সমস্যা।

ক্লাসরুম গুলোতে গাদাগাদি হয়। কলা ভবনে যদি আপনি যান, দেখবেন, যে ক্লাসের ধারণক্ষমতা ৫০ জনের সেখানে ১৫০ জনের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

আবার আমাদের শিক্ষকদের অনেক সময়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সময় আমরা যেটা বেশি দেখছি। অর্থাৎ তাদের কোয়ালিটি সম্পর্কে একটা প্রশ্ন থেকে যায়।

এছাড়া আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের এখানে যখন কোনো শিক্ষার্থী আসে, তখন তার একটা সুন্দর থাকার জায়গার প্রয়োজন হয়, একটা পড়লেখার জায়গার প্রয়োজন হয়, একটা ভীতিমুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন হয় – যাতে তারা নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারে।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ছিটেফোঁটাও নেই। একজন নতুন শিক্ষার্থী আসলে তাকে ২-৩ বছর গণরুমে কাটাতে হবে। অর্থাৎ তার নিজস্ব একটা স্পেস তৈরি হওয়ার জায়গা থাকে না। প্রকৃতপক্ষে তার থাকারই জায়গা থাকে না।

আর হলগুলোতে যারা সিনিয়র আছে, রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয়, তারা জুনিয়রদেরকে কোণঠাসা করে রাখে। অর্থাৎ তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগটা থাকে না। কাজেই আমার মনে হয় যে এখানে শিক্ষার্থীবান্ধব যে পরিবেশ টা থাকা দরকার সেটা নেই৷ আর এটাই সবথেকে বড় বাধা।

জাননাহ : আপনি গণরুমের সমস্যার কথা বলেছেন। ছাত্রনেতাদের অবৈধভাবে হলের সিট দখলের কথাও উল্লেখ করেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে সমস্ত ছাত্রনেতারা হল দখলে রেখেছেন তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরেও, তারা যদি শিক্ষাজীবন শেষে সুনিশ্চিত ক্যারিয়ারের সন্ধান পেতেন, তবুও কী তারা ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে এভাবে হলে থাকতেন?

আখতার হোসেন : বর্তমানে যারা ছাত্ররাজনীতি করতেছেন, তাদের একেক জনের একেক ধরনের উদ্দেশ্য আছে। কেউ হয়তো দীর্ঘসময় পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্য রাজনীতি করছেন। আবার কেউ করছেন, যারা সরকারী দলের রাজনীতি করছেন- কিছু একটা বেনিফিট নেওয়ার জন্য।

অতএব, তারা হলে থাকতো কি থাকতো না,  এ প্রশ্নের উত্তর তারাই খুব ভালো দিতে পারবেন। এ উত্তর আমার দেওয়ার কথা না।

আমার কাছে মনে হয় যে তাদেরকে থাকতে দেওয়া উচিত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্য, যারা পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন, তাদেরকে হল থেকে বের করে দিয়ে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন, তাদেরকে হলে রাখা।

কারণ যে সমস্ত ছাত্রনেতা হল গুলোতে রয়েছেন, যাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে, তারা একাই একরুম দখল করে আছেন৷ এবং ঐ একই সাইজের একটা রুমে ফার্স্ট ইয়ারের ৩০-৩৫ জন থাকে। অতএব, এটা তো পিওরলি ইনজাস্টিস।

জাননাহ : গণরুমের সমস্যার কথা বারবারই উঠে আসছে। আর এ বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তির সময় এক হাজারটি আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তো এই গণরুম বন্ধ করার জন্য আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?

আখতার হোসেন : প্রথমত, হল গুলো প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে৷ অর্থাৎ হলে কোন রুমে কোন শিক্ষার্থী আছে, কতজন আছে তার ডাটাবেজ প্রশাসনের নিকট থাকতে হবে৷ প্রশাসনই হলে শিক্ষার্থী উঠাবে এবং প্রশাসনই শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ এই কাজটা প্রথম করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনের ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে৷ শুধু যার প্রয়োজন তাকেই সিট দিতে হবে৷ কারণ এখনও এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন, তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না।

আরেকটা যে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে সেটা হচ্ছে, আমাদের আরও ভবন বাড়াতে হবে। এটার জন্য খুব বেশি টাকা- পয়সার প্রয়োজন কিন্তু নেই। আমরা দেশের ভেতরেই বড় বড় স্থাপনা করতেছি৷ তো এত বড় বড় স্থাপনা যখন আমরা করতে পেরেছি, তখন ভবন বাড়ানো একটা মামুলি ব্যাপার৷ কিন্তু এটা করা হচ্ছে না৷ কারণ এই সমস্যাটাকে জিইয়ে রাখতে চাওয়া হয় যাতে নবাগত শিক্ষার্থী যারা সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে তাদেরকে পলিটিক্যালি ব্যবহার করা যায়৷

জাননাহ : গত বছর দি ডেইলি স্টার কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন‘ হিসেবে কাজ করার যে সংস্কৃতি, তা পূর্বে ছিল না এবং এটি সামরিক সরকার কর্তৃক সূচিত হয়েছে যা ছাত্র রাজনীতিকে বহুলাংশে ধবংস  করেছে৷ আপনারও কী মনে হয় দলীয় অন্তর্ভুক্তকরণ ছাত্র রাজনীতি কে আসলেই কলুষিত হয়েছে ?

আখতার হোসেন : ছাত্ররাজনীতিতে যারা যুক্ত আছেন, তাদের কাজ টা কী হওয়া দরকার – শিক্ষাবান্ধব কাজ করা,এটাই সবথেকে বড় ফোকাস হওয়া দরকার।  কিন্তু আমরা এখন কী দেখি?

যারা ছাত্ররাজনীতি করছেন তারা তাদের যে মাতৃসংগঠন বা পিতৃসংগঠন আছে, তাদের পারপাসকে খুব বাজে ভাবে সার্ভ করছে৷ তো আমার কাছেও তাই মনে হয় যে, ছাত্রসংগঠনগুলো যদি তাদের মাদার অর্গানাইজেশন বা ফাদার অর্গানাইজেশনকে চূড়ান্তভাবে সাপোর্ট করতে গিয়ে নিজেদের গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে আর ছাত্ররাজনীতি করার জায়গাটুকু থাকে না।

তো এই জায়গাটাতে আপনারা যদি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দিকে তাকান, আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের নেতৃত্ব আমাদের কাছেই রেখেছি৷ এখানে আমাদের মধ্যেই সম্মেলন হয়, আমাদের মধ্যেই ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়৷ এই জায়গাতে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব থাকার চেষ্টা করছি৷

এবং আমাদের এজেন্ডা হলো আমরা যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছে, তাদেরকেই আমরা আমাদের ছাত্রসংগঠনের মধ্যে রাখবো৷

কারণ অনিয়মিত যেসব শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয় তাদের উদ্দেশ্যেই থাকে যে কোনো ভাবে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নিজস্ব ফায়দা হাসিল করা৷

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন রয়েছে, সরকার দলীয়, বিরোধী দলীয় বা বামপন্থী-  তাদের মধ্যে যে কাঙ্ক্ষিত সহাবস্থান থাকা দরকার, সেটি রয়েছে কী?

আখতার হোসেন : না, কাঙ্ক্ষিত সহাবস্থান এখানে নেই। কারণটা হলো প্রথমত এখানে সরকার দলীয় রাজনীতির বাইরে যারা রাজনীতি করছেন, তারা হলে থাকতে পারেন না৷

তারা যদি কোনো প্রোগ্রাম দেয় তারা তা ঠিকমতো করতে পারে না, সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়৷ অনেকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পারে না, তাদের ঢুকতেই দেওয়া হয় না।

এবং সময়ে সময়ে দেখা যায়,  বিরোধী মতের যদি কেউ থাকে, তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং মারা হচ্ছে৷ যখন পরিস্থিতি এরকম, তখন বুঝতেই পারছেন, যে সহাবস্থান প্রয়োজন সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই৷

জাননাহ : এই সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কী কোনো ভূমিকা নেই ? তারা কী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে ?

আখতার হোসেন : আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখানে দায় আছে৷ তাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ তারা যদি তাদের এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতো তাহলে অটোমেটিকালি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সহাবস্থান তৈরি হতে পারতো৷ যেহেতু প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না, বা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে না, সেহেতু সহাবস্থান ও নিশ্চিত হচ্ছে না।

জাননাহ : অর্থাৎ এটি কী তাদের একটি বড় ব্যর্থতা?

আখতার হোসেন : অবশ্যই এটি তাদের একটি বড় ব্যর্থতা।

জাননাহ : ডাকসু প্রসঙ্গে আবারও ফিরে আসি৷ ২০১৯ এ যে ডাকসু নির্বাচন হলো, তাকে কী আমরা ফলপ্রসূ বলতে পারি?

আখতার হোসেন : ১৯ এ যে ডাকসু নির্বাচন হলো তাকে সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ বলা না গেলেও, এটির যে অনেক পজিটিভ দিক রয়েছে তা বলতেই হবে৷

২০১৬-২০১৭ বা ২০১৮ তে আমরা যে ক্যাম্পাস দেখেছি তার সাথে ২০১৯ এর ক্যাম্পাসের পরিবেশের একটা বড় পার্থক্য আমরা লক্ষ্য করেছি।

আগে একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কোনো একটা কমেণ্ট করলেও দেখা যেত তাকে গেস্টরুম নির্যাতনের স্বীকার হতে হচ্ছে৷

তবে ২০১৯ এ এসে ডাকসু নির্বাচনের পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের যে সংস্কৃতি আছে, সেটা ভাঙতে শুরু করেছিল৷ শিক্ষার্থীরা কথা বলতে শুরু করেছিল। তাদের যে অভিযোগ আছে, সেগুলো সার্কাস্টিক ওয়েতে হোক, বা সিরিয়াসলিই হোক, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে বা নিজেদের টাইমলাইনে লেখার একটা পরিবেশ খুঁজে পেয়েছিল। এটা কিন্তু নিঃসন্দেহে একটা ভালো পরিবর্তন।

আরও একটা ভালো পরিবর্তন হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলবে এরকম কেউ ছিল না৷ কিন্তু ডাকসুতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা যে দলেরই হোক, শিক্ষার্থীরা যখন তাদের কাছে গেছেন, তখন তারা এক ধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করেছেন৷ এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার একটা চেষ্টা তারা করেছেন। এই পরিবেশটাও কিন্তু ডাকসু হওয়ার আগে ছিল না৷

অর্থাৎ ডাকসু হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোই চিহ্নিত হতো না,সেগুলো স্বীকার করা হতো না। কিন্তু ডাকসু হওয়ার পরে এগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া শুরু হয়। সমস্যা চিহ্নিত হওয়া শুরু হয়। এটা খুবই পজিটিভ একটা দিক বলে আমার কাছে মনে হয়৷

জাননাহ : মাত্র একবার ডাকসু নির্বাচন হওয়ার পরই তা আবার বন্ধ আছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো একটি অটোনোমাস বডি। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে আপনার মনে হয় ?

আখতার হোসেন : বাস্তবতা এটাই। যদিও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অটোনোমাস বডি। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা নিজেরাই তো স্বায়ত্তশাসন চর্চা করবেন ; – এ মানসিকতা নিয়ে চেয়ারে বসেন নি। তারা কারও অনুগত থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চেয়ারে বসেছেন৷ এ কারণে তারা মুখিয়ে থাকেন যে, উনারা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন। উনাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা কাজ করেন।

আর তারা দেখেছেন যে ডাকসু নির্বাচন হলে একে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কর্তৃত্ব আছে,তা হারিয়ে যায় আর সেই সাথে সরকারে যারা আছেন তারাও যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন, এ বিষয়টিকেও তারা এড়াতে চান। মূলত এই দুইটা জিনিসকে মিলিয়েই আমার কাছে মনে হয়, তারা ডাকসু নির্বাচন দিতে আগ্রহী হয় না।

জাননাহ : টিএসসি তে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। টিএসসির মতো একটি জায়গায় এরকম একটি স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টিকে আপনার কাছে কেমন মনে হয় ?

আখতার হোসেন : আমার কাছে মনে হয় এটি সরকারের উন্নয়ন প্রদর্শন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। কারণ একটু সামনেই শাহবাগে একটা স্টেশন থাকছে, যেটিকে শিক্ষার্থীরা খুব স্মুথলি ব্যবহার করতে পারে।

আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন, টিএসসি এখনই এত জনাকীর্ণ থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এখানে ঠিকমতো এক্সেস পায় না। এখানে এসে নিজেরাই নিজেদেরকে বহিরাগত ফিল করতে শুরু করে।

তো এই পরিস্থিতিতে টিএসসির মতো জায়গায় স্টেশন স্থাপনকে মোটেই যুক্তিযুক্ত বলা যায় না।

এছাড়া মেট্রোরেল স্থাপনের কথা যখন বলা হলো তখন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অনেক রকম ক্যাম্পেইন করেছে এটা বন্ধ করার জন্য। তখন করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল এবং ক্যাম্পেইন থেকে বোঝা যায় শিক্ষার্থীরা চান না যে টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন হোক।

জাননাহ : ডাকসু নির্বাচনের সুফল সম্পর্কে অনেক কথাই আপনি বলেছেন। এছাড়া আপনাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আরও বৃহত্তর কোনো কর্মসূচি হাতে নিবেন কী ?

আখতার হোসেন : আমরা, যাতে একটা ফলপ্রসূ ডাকসু নির্বাবন আসে সেজন্য ধারাবাহিকভাবে আমাদের কর্মসূচি হাতে নেব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করা,  প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি চ্যান্সেলর আছেন, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, তার কাছে যাওয়া এবং অহিংস পদ্ধতিতে যে ধরনের কর্মসূচি করা যায়, সেসব করার আমাদের পরিকল্পনা আছে৷ আর আমরা আশা করি অতি সত্ত্বর আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচিগুলো নিয়ে মাঠে হাজির হবো।

জাননাহ : আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য বিডিসমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আখতার হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। বিডিসমাচারকে বিশেষ ধন্যবাদ এ কারণে যে,  তারা ডাকসুর মতো যে একটি প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ; এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই গুরুত্ব দেওয়ার ফলে আমরা বিশ্বাস করি যে, সামনের দিকে একটা ডাকসু নির্বাচন আমরা পেতে পারি।

বিডিসমাচারের এই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

‘ডাকসু নির্বাচনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের সংস্কৃতি ভাঙতে শুরু করেছিল’

Update Time : ০৪:০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২

কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রতিকূলতার সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছিল নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান,  “কী ভাবছেন তাঁরা ?” 

এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (সাবেক) সমাজসেবা সম্পাদক ও বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন । সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : যখন জানতে পারলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এবং ঐতিহ্যবাহী আইন বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন, তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল ?

আখতার হোসেন : সে অনুভূতি আসলে এককথায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারণ আমরা তো এসেছি একেবারে গ্রাম অঞ্চল থেকে৷ তো আমরা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পাবো সে ভাবনাটাও আমাদের সেই অর্থে ছিল না।

আর যখন জানতে পারলাম আমি আইন বিভাগে ভর্তি হতে পারবো তখন আমি খুশিতে আত্মহারা ছিলাম৷ কারণ আমার স্বপ্নই ছিল যে, আমি আইন অঙ্গনে কাজ করবো।

কাজেই আমার স্বপ্নের পথে আমি যে আমি ভালোভাবে প্রবেশ করতে পেরেছি সেটা আমাকে মনেপ্রাণে খুব অনুপ্রাণিত করেছিল।

জাননাহ : প্রথম বর্ষ থেকে আপনি কী স্বপ্ন দেখতেন ? আমরা জানি, ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থী যারা পা রাখে, তাদের বিচিত্র ধরনের স্বপ্ন থাকে এবং অভিভাবকরা তাকিয়ে থাকে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে৷ আপনার স্বপ্নটি কী ছিল?

No description available.

আখতার হোসেন : আমার শুরু থেকেই স্বপ্ন ছিল যে আমি আইন পেশায় যাবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করবো এবং পরবর্তীতে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হবো এবং এর মাধ্যমে আইন অঙ্গনে বাংলাদেশের জনসাধারণের উপকারে কাজ করবো। এই উদ্দেশ্যই আমার ছিল শুরু থেকে।

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সকলেরই নানা আশা-আকাঙ্খা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ, হলের আবাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি। তো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যে প্রত্যাশা আপনার মধ্যে ছিল, যে স্বপ্ন ছিল, যে ধরনের পরিবেশ আশা করেছিলেন, এখানে ভর্তির পরে সেই পূর্ব ধারণার সঙ্গে বাস্তবতার কতটুকু মিল পেয়েছেন ?

আখতার হোসেন : ভর্তির আগে আমার স্বপ্ন ছিল যে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো, আমার জন্য সুন্দর একটি বেড থাকবে, সুন্দর একটি টেবিল থাকবে৷ আমি আমার মতো করে পড়ালেখায় সময় দিতে পারবো। এবং যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে যাচ্ছি, আমার কথা বলা, চলাফেরার পর্যাপ্ত স্বাধীনতা থাকবে৷ এবং আমাকে কেউ রেগুলেট করবে না,  কারণ আমি বড় হয়েছি। আমার ধারণাটা ছিল এরকম৷

কিন্তু এই যে ধারণা, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পরের বাস্তবতার কোনো মিল আমি পাই নি।

এখানে আসার পরে আমাকে উঠতে হলো গণরুমে। এমন গণরুম যেটা তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ৪ জন শিক্ষার্থী থাকবে, কিন্তু ঐ রুমে আমাদের থাকতে হলো ৩৫ জন। রিডিং রুমে গিয়ে আমি জায়গা পাই না,  কারণ সিনিয়ররা সব সিট দখল করে আছেন।

অথবা, আপনি হয়তো একটি সিটে বসলেন, ১০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা পরে একজন এসে বলবে যে, তিনি এখানে বসে ছিলেন বা ঐ জায়গাটা তার। আপনাকে সেই জায়গা থেকে উঠে যেতে হচ্ছে।

রাতের বেলা স্বভাবতই গেস্টরুম। অর্থাৎ আপনার পড়ালেখার সুযোগটা নেই৷ গেস্টরুম শেষে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি রাতে সবাইকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে পাঠানো হতো। রাতের ঘুমও আপনার নেই। এর ফলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে না পারা এবং ক্লাসে এসে আপনি মনোযোগী হতে পারবেন না কারণ আপনার ঘুম পাচ্ছে।

তো এই যে পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে আমরা যাই, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে যে স্বপ্নটা আমাদের থাকে,  আমি বলবো সেটার সঙ্গে (একশ আশি ডিগ্রি) ১৮০° বিপরীত অবস্থানে থাকে

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আপনি ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক  নির্বাচিত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে আপনাদের কে দেওয়া হয় বিপুল সংবর্ধনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ছাত্রনেতাদেরকে কাছে টেনে নেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন ?

আখতার হোসেন : বাংলাদেশের রাজনীতিতে, যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন, বরাবরের মতোই তারা খুব বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছেন। দেশের গণতন্ত্রায়নের যুদ্ধ হিসেবে যদি আমি সেটাকে বলি, তাহলেও সেটা ছাত্রদের হাত ধরে শুরু হয়েছে। সেটা ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে যেমন,  ৭১ পরবর্তী সময়েও তাই। এবং যদি আমরা ৯০ এর দিকে তাকাই তাহলেও তাই৷

যদি আমরা ২০০৭-২০০৮ এর দিকেও তাকাই, তাহলেও আমরা ছাত্রদের ভূমিকাই সবার প্রথমে দেখতে পাই৷ সে জায়গা থেকে দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি – এবং তারা কিন্তু সংখ্যায় অল্প নন, অনেক ; তো এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে যখন তিনি কাছে ডাকেন,  আমার কাছে মনে হয় এটা অবশ্যই অনেক ভালো উদ্যোগ এবং ছাত্রসমাজের জন্য এটা একটা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে৷

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১০২ তম জন্মদিন পালন করছে। তবে এত বছর পরে এসেও এর অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয় বলেই মনে করেন প্রায় সকলেই। শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন সে অবস্থানে দেখতে পান কী ?

আখতার হোসেন : একটা কথা এখানে বারবার আসে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ঠিকমতো হচ্ছে না বা গুণগত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।

তবে আমার কাছে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ রিসার্চ হতে পারে এবং এখানে সেরকম মেধাসম্পন্ন অনেক শিক্ষার্থী আমাদের মধ্যে আছেন, অনেক শিক্ষক আছেন। তাহলে বাধার জায়গাটা কোথায় ?

আমার কাছে মনে হয়, আমরা এখানে যারা শিক্ষার্থী আছি তাদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ টা নেই। এটাই প্রধানতম সমস্যা।

ক্লাসরুম গুলোতে গাদাগাদি হয়। কলা ভবনে যদি আপনি যান, দেখবেন, যে ক্লাসের ধারণক্ষমতা ৫০ জনের সেখানে ১৫০ জনের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

আবার আমাদের শিক্ষকদের অনেক সময়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সময় আমরা যেটা বেশি দেখছি। অর্থাৎ তাদের কোয়ালিটি সম্পর্কে একটা প্রশ্ন থেকে যায়।

এছাড়া আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের এখানে যখন কোনো শিক্ষার্থী আসে, তখন তার একটা সুন্দর থাকার জায়গার প্রয়োজন হয়, একটা পড়লেখার জায়গার প্রয়োজন হয়, একটা ভীতিমুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন হয় – যাতে তারা নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারে।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ছিটেফোঁটাও নেই। একজন নতুন শিক্ষার্থী আসলে তাকে ২-৩ বছর গণরুমে কাটাতে হবে। অর্থাৎ তার নিজস্ব একটা স্পেস তৈরি হওয়ার জায়গা থাকে না। প্রকৃতপক্ষে তার থাকারই জায়গা থাকে না।

আর হলগুলোতে যারা সিনিয়র আছে, রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয়, তারা জুনিয়রদেরকে কোণঠাসা করে রাখে। অর্থাৎ তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগটা থাকে না। কাজেই আমার মনে হয় যে এখানে শিক্ষার্থীবান্ধব যে পরিবেশ টা থাকা দরকার সেটা নেই৷ আর এটাই সবথেকে বড় বাধা।

জাননাহ : আপনি গণরুমের সমস্যার কথা বলেছেন। ছাত্রনেতাদের অবৈধভাবে হলের সিট দখলের কথাও উল্লেখ করেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে সমস্ত ছাত্রনেতারা হল দখলে রেখেছেন তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরেও, তারা যদি শিক্ষাজীবন শেষে সুনিশ্চিত ক্যারিয়ারের সন্ধান পেতেন, তবুও কী তারা ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে এভাবে হলে থাকতেন?

আখতার হোসেন : বর্তমানে যারা ছাত্ররাজনীতি করতেছেন, তাদের একেক জনের একেক ধরনের উদ্দেশ্য আছে। কেউ হয়তো দীর্ঘসময় পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্য রাজনীতি করছেন। আবার কেউ করছেন, যারা সরকারী দলের রাজনীতি করছেন- কিছু একটা বেনিফিট নেওয়ার জন্য।

অতএব, তারা হলে থাকতো কি থাকতো না,  এ প্রশ্নের উত্তর তারাই খুব ভালো দিতে পারবেন। এ উত্তর আমার দেওয়ার কথা না।

আমার কাছে মনে হয় যে তাদেরকে থাকতে দেওয়া উচিত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্য, যারা পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন, তাদেরকে হল থেকে বের করে দিয়ে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন, তাদেরকে হলে রাখা।

কারণ যে সমস্ত ছাত্রনেতা হল গুলোতে রয়েছেন, যাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে, তারা একাই একরুম দখল করে আছেন৷ এবং ঐ একই সাইজের একটা রুমে ফার্স্ট ইয়ারের ৩০-৩৫ জন থাকে। অতএব, এটা তো পিওরলি ইনজাস্টিস।

জাননাহ : গণরুমের সমস্যার কথা বারবারই উঠে আসছে। আর এ বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তির সময় এক হাজারটি আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তো এই গণরুম বন্ধ করার জন্য আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?

আখতার হোসেন : প্রথমত, হল গুলো প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে৷ অর্থাৎ হলে কোন রুমে কোন শিক্ষার্থী আছে, কতজন আছে তার ডাটাবেজ প্রশাসনের নিকট থাকতে হবে৷ প্রশাসনই হলে শিক্ষার্থী উঠাবে এবং প্রশাসনই শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ এই কাজটা প্রথম করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনের ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে৷ শুধু যার প্রয়োজন তাকেই সিট দিতে হবে৷ কারণ এখনও এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন, তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না।

আরেকটা যে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে সেটা হচ্ছে, আমাদের আরও ভবন বাড়াতে হবে। এটার জন্য খুব বেশি টাকা- পয়সার প্রয়োজন কিন্তু নেই। আমরা দেশের ভেতরেই বড় বড় স্থাপনা করতেছি৷ তো এত বড় বড় স্থাপনা যখন আমরা করতে পেরেছি, তখন ভবন বাড়ানো একটা মামুলি ব্যাপার৷ কিন্তু এটা করা হচ্ছে না৷ কারণ এই সমস্যাটাকে জিইয়ে রাখতে চাওয়া হয় যাতে নবাগত শিক্ষার্থী যারা সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে তাদেরকে পলিটিক্যালি ব্যবহার করা যায়৷

জাননাহ : গত বছর দি ডেইলি স্টার কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন‘ হিসেবে কাজ করার যে সংস্কৃতি, তা পূর্বে ছিল না এবং এটি সামরিক সরকার কর্তৃক সূচিত হয়েছে যা ছাত্র রাজনীতিকে বহুলাংশে ধবংস  করেছে৷ আপনারও কী মনে হয় দলীয় অন্তর্ভুক্তকরণ ছাত্র রাজনীতি কে আসলেই কলুষিত হয়েছে ?

আখতার হোসেন : ছাত্ররাজনীতিতে যারা যুক্ত আছেন, তাদের কাজ টা কী হওয়া দরকার – শিক্ষাবান্ধব কাজ করা,এটাই সবথেকে বড় ফোকাস হওয়া দরকার।  কিন্তু আমরা এখন কী দেখি?

যারা ছাত্ররাজনীতি করছেন তারা তাদের যে মাতৃসংগঠন বা পিতৃসংগঠন আছে, তাদের পারপাসকে খুব বাজে ভাবে সার্ভ করছে৷ তো আমার কাছেও তাই মনে হয় যে, ছাত্রসংগঠনগুলো যদি তাদের মাদার অর্গানাইজেশন বা ফাদার অর্গানাইজেশনকে চূড়ান্তভাবে সাপোর্ট করতে গিয়ে নিজেদের গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে আর ছাত্ররাজনীতি করার জায়গাটুকু থাকে না।

তো এই জায়গাটাতে আপনারা যদি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দিকে তাকান, আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের নেতৃত্ব আমাদের কাছেই রেখেছি৷ এখানে আমাদের মধ্যেই সম্মেলন হয়, আমাদের মধ্যেই ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়৷ এই জায়গাতে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব থাকার চেষ্টা করছি৷

এবং আমাদের এজেন্ডা হলো আমরা যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছে, তাদেরকেই আমরা আমাদের ছাত্রসংগঠনের মধ্যে রাখবো৷

কারণ অনিয়মিত যেসব শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয় তাদের উদ্দেশ্যেই থাকে যে কোনো ভাবে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নিজস্ব ফায়দা হাসিল করা৷

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন রয়েছে, সরকার দলীয়, বিরোধী দলীয় বা বামপন্থী-  তাদের মধ্যে যে কাঙ্ক্ষিত সহাবস্থান থাকা দরকার, সেটি রয়েছে কী?

আখতার হোসেন : না, কাঙ্ক্ষিত সহাবস্থান এখানে নেই। কারণটা হলো প্রথমত এখানে সরকার দলীয় রাজনীতির বাইরে যারা রাজনীতি করছেন, তারা হলে থাকতে পারেন না৷

তারা যদি কোনো প্রোগ্রাম দেয় তারা তা ঠিকমতো করতে পারে না, সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়৷ অনেকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পারে না, তাদের ঢুকতেই দেওয়া হয় না।

এবং সময়ে সময়ে দেখা যায়,  বিরোধী মতের যদি কেউ থাকে, তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং মারা হচ্ছে৷ যখন পরিস্থিতি এরকম, তখন বুঝতেই পারছেন, যে সহাবস্থান প্রয়োজন সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই৷

জাননাহ : এই সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কী কোনো ভূমিকা নেই ? তারা কী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে ?

আখতার হোসেন : আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখানে দায় আছে৷ তাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ তারা যদি তাদের এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতো তাহলে অটোমেটিকালি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সহাবস্থান তৈরি হতে পারতো৷ যেহেতু প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না, বা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে না, সেহেতু সহাবস্থান ও নিশ্চিত হচ্ছে না।

জাননাহ : অর্থাৎ এটি কী তাদের একটি বড় ব্যর্থতা?

আখতার হোসেন : অবশ্যই এটি তাদের একটি বড় ব্যর্থতা।

জাননাহ : ডাকসু প্রসঙ্গে আবারও ফিরে আসি৷ ২০১৯ এ যে ডাকসু নির্বাচন হলো, তাকে কী আমরা ফলপ্রসূ বলতে পারি?

আখতার হোসেন : ১৯ এ যে ডাকসু নির্বাচন হলো তাকে সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ বলা না গেলেও, এটির যে অনেক পজিটিভ দিক রয়েছে তা বলতেই হবে৷

২০১৬-২০১৭ বা ২০১৮ তে আমরা যে ক্যাম্পাস দেখেছি তার সাথে ২০১৯ এর ক্যাম্পাসের পরিবেশের একটা বড় পার্থক্য আমরা লক্ষ্য করেছি।

আগে একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কোনো একটা কমেণ্ট করলেও দেখা যেত তাকে গেস্টরুম নির্যাতনের স্বীকার হতে হচ্ছে৷

তবে ২০১৯ এ এসে ডাকসু নির্বাচনের পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের যে সংস্কৃতি আছে, সেটা ভাঙতে শুরু করেছিল৷ শিক্ষার্থীরা কথা বলতে শুরু করেছিল। তাদের যে অভিযোগ আছে, সেগুলো সার্কাস্টিক ওয়েতে হোক, বা সিরিয়াসলিই হোক, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে বা নিজেদের টাইমলাইনে লেখার একটা পরিবেশ খুঁজে পেয়েছিল। এটা কিন্তু নিঃসন্দেহে একটা ভালো পরিবর্তন।

আরও একটা ভালো পরিবর্তন হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলবে এরকম কেউ ছিল না৷ কিন্তু ডাকসুতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা যে দলেরই হোক, শিক্ষার্থীরা যখন তাদের কাছে গেছেন, তখন তারা এক ধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করেছেন৷ এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার একটা চেষ্টা তারা করেছেন। এই পরিবেশটাও কিন্তু ডাকসু হওয়ার আগে ছিল না৷

অর্থাৎ ডাকসু হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোই চিহ্নিত হতো না,সেগুলো স্বীকার করা হতো না। কিন্তু ডাকসু হওয়ার পরে এগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া শুরু হয়। সমস্যা চিহ্নিত হওয়া শুরু হয়। এটা খুবই পজিটিভ একটা দিক বলে আমার কাছে মনে হয়৷

জাননাহ : মাত্র একবার ডাকসু নির্বাচন হওয়ার পরই তা আবার বন্ধ আছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো একটি অটোনোমাস বডি। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে আপনার মনে হয় ?

আখতার হোসেন : বাস্তবতা এটাই। যদিও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অটোনোমাস বডি। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা নিজেরাই তো স্বায়ত্তশাসন চর্চা করবেন ; – এ মানসিকতা নিয়ে চেয়ারে বসেন নি। তারা কারও অনুগত থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চেয়ারে বসেছেন৷ এ কারণে তারা মুখিয়ে থাকেন যে, উনারা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন। উনাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা কাজ করেন।

আর তারা দেখেছেন যে ডাকসু নির্বাচন হলে একে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কর্তৃত্ব আছে,তা হারিয়ে যায় আর সেই সাথে সরকারে যারা আছেন তারাও যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন, এ বিষয়টিকেও তারা এড়াতে চান। মূলত এই দুইটা জিনিসকে মিলিয়েই আমার কাছে মনে হয়, তারা ডাকসু নির্বাচন দিতে আগ্রহী হয় না।

জাননাহ : টিএসসি তে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। টিএসসির মতো একটি জায়গায় এরকম একটি স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টিকে আপনার কাছে কেমন মনে হয় ?

আখতার হোসেন : আমার কাছে মনে হয় এটি সরকারের উন্নয়ন প্রদর্শন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। কারণ একটু সামনেই শাহবাগে একটা স্টেশন থাকছে, যেটিকে শিক্ষার্থীরা খুব স্মুথলি ব্যবহার করতে পারে।

আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন, টিএসসি এখনই এত জনাকীর্ণ থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এখানে ঠিকমতো এক্সেস পায় না। এখানে এসে নিজেরাই নিজেদেরকে বহিরাগত ফিল করতে শুরু করে।

তো এই পরিস্থিতিতে টিএসসির মতো জায়গায় স্টেশন স্থাপনকে মোটেই যুক্তিযুক্ত বলা যায় না।

এছাড়া মেট্রোরেল স্থাপনের কথা যখন বলা হলো তখন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অনেক রকম ক্যাম্পেইন করেছে এটা বন্ধ করার জন্য। তখন করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল এবং ক্যাম্পেইন থেকে বোঝা যায় শিক্ষার্থীরা চান না যে টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন হোক।

জাননাহ : ডাকসু নির্বাচনের সুফল সম্পর্কে অনেক কথাই আপনি বলেছেন। এছাড়া আপনাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আরও বৃহত্তর কোনো কর্মসূচি হাতে নিবেন কী ?

আখতার হোসেন : আমরা, যাতে একটা ফলপ্রসূ ডাকসু নির্বাবন আসে সেজন্য ধারাবাহিকভাবে আমাদের কর্মসূচি হাতে নেব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করা,  প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি চ্যান্সেলর আছেন, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, তার কাছে যাওয়া এবং অহিংস পদ্ধতিতে যে ধরনের কর্মসূচি করা যায়, সেসব করার আমাদের পরিকল্পনা আছে৷ আর আমরা আশা করি অতি সত্ত্বর আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচিগুলো নিয়ে মাঠে হাজির হবো।

জাননাহ : আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য বিডিসমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আখতার হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। বিডিসমাচারকে বিশেষ ধন্যবাদ এ কারণে যে,  তারা ডাকসুর মতো যে একটি প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ; এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই গুরুত্ব দেওয়ার ফলে আমরা বিশ্বাস করি যে, সামনের দিকে একটা ডাকসু নির্বাচন আমরা পেতে পারি।

বিডিসমাচারের এই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ।