টুইন-টাওয়ার হামলার ২০ বছর আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৪৫ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার আজ ২০ বছর পূর্ণ হলো।

৯/১১ সারা বিশ্বকে এক মুহূর্তে বদলে দেওয়ার দিনের সংক্ষিপ্ত নাম। ছিনতাই করা যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে এ দিনটিতে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি এই অতর্কিত বিমান হামলায় পৃথিবীর মহাশক্তিধর বলে পরিচিত এ দেশটির নিরাপত্তা আর সামরিক বাহিনী নিয়ে সব অহংকার মুহূর্তে ধসে পড়ে।

নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার নামে একসময় পরিচিত বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ওপর হামলে পড়া দুই বিমানের হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্থাপনা দুটি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা স্থাপনা পেন্টাগনের ওপর হামলা করে আরেকটি ছিনতাই হওয়া যাত্রীবাহী বিমান। হোয়াইট হাউসের দিকে উড়ে যাওয়া আরেকটি বিমান মাঝ আকাশে ভূপাতিত হয় যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে। বিশ্ব তার ইতিহাসে এমন সমন্বিত আর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এর আগে আর কখনো দেখেনি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া এই সন্ত্রাসী ঘটনায় বদলে যায় আমেরিকা। এর জের ধরে বদলে গেছে বিশ্ব আর বৈশ্বিক রাজনীতি। বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিভাজন শুরু হয়ে ৯/১১’র মাধ্যমে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিলেন, ‘হয় তুমি আমার সঙ্গে, নয় তুমি আমার বিপক্ষে। মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না।’

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটান এলাকায় অবস্থিত ৭টি ভবনের একটি স্থাপনা ছিল। জাপানী স্থপতি মিওরু ইয়ামাসাকির নকশায় প্রণীত এই স্থাপনাটির সবচেয়ে উঁচু দুটি ভবনের নামছিল টুইন টাওয়ার। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির বন্দর কর্তৃপক্ষের জমিতে তাদেরই অর্থায়নে এই স্থাপনাটি নির্মিত হয়। দুটি ভবনই ছিল ১১০ তলা।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে অন্যদিনের মতই মানুষ ধীরেধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান প্রায় বিশহাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে নর্থ টাওয়ারে প্রথম আঘাত করে। ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় হামলে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভবনদুটির বিভিন্ন অংশ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রথম স্পষ্ট হয় যে আমেরিকার ওপর আক্রমণ হয়েছে।

পরবর্তীতে তদন্তে বলা হয়, ১৯ জন হামলাকারীর সবাই ছিলেন সৌদিআরবসহ কয়েকটি আরব দেশের নাগরিক। আরও বলা হয় সে সময়ের পলাতক ওসামা বিন লাদেন এ হামলায় সমর্থন ও অর্থায়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার ক্রমাগত সমর্থন, পারস্য উপসাগরে দেশটির ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা চালানো হয় বলে ধারনা করা হয়।

আমেরিকার সমস্ত গোয়েন্দা নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ৯/১১-এর হামলার ঘটনা ঘটেছিল, এ নিয়ে বহু জিজ্ঞাসা আজও অনেক মানুষকে তাড়া করছে। বিশ্বের মহাশক্তিধর বলে পরিচিত আমেরিকার অহংকার চ্যালেঞ্জ করা এ সন্ত্রাসী হামলায় ২৭৯৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের মানুষও।

ভয়াবহ এ হামলার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের ধর্মীয় পরিচয় বড় হয়ে ওঠে তদন্ত শেষে। আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনকে এ হামলার জন্য প্রধান দোষী করা হয়।

আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত এ হামলার পাল্টা জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিকশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। আফগানিস্তান থেকে তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়।

ইরাক-আফগানিস্তানের সরকার উৎখাত করার পর দেশ দুটির কর্তৃত্ব পরোক্ষভাবে অ্যামেরিকার কাছেই চলে যায়। পর্যায়ক্রমে ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেন, আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন, লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফিসহ আরও কয়েকজন নেতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়- ৯/১১ এর জেরে শুরু হওয়া মার্কিন প্রতিশোধে।

বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ধসে পড়া সে জায়গা- গ্রাউন্ড জিরোতে এখন গড়ে উঠেছে ফ্রিডম টাওয়ার। দালানের উচ্চতার দিক থেকে টুইন টাওয়ারকে ছাড়িয়ে যাওয়া ফ্রিডম টাওয়ারেই নির্মিত হয়েছে সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল স্থাপনা। যার স্থপতি ডেভিড চিল্ডস। বেদনা ও বিস্ময়ের সঙ্গে আমেরিকার সাথে বিশ্বের মানুষ এ দিনটিকে স্মরণ করে থাকে প্রতিবছর।

Please Share This Post in Your Social Media

টুইন-টাওয়ার হামলার ২০ বছর আজ

Update Time : ০১:২৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার আজ ২০ বছর পূর্ণ হলো।

৯/১১ সারা বিশ্বকে এক মুহূর্তে বদলে দেওয়ার দিনের সংক্ষিপ্ত নাম। ছিনতাই করা যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে এ দিনটিতে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি এই অতর্কিত বিমান হামলায় পৃথিবীর মহাশক্তিধর বলে পরিচিত এ দেশটির নিরাপত্তা আর সামরিক বাহিনী নিয়ে সব অহংকার মুহূর্তে ধসে পড়ে।

নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার নামে একসময় পরিচিত বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ওপর হামলে পড়া দুই বিমানের হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্থাপনা দুটি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা স্থাপনা পেন্টাগনের ওপর হামলা করে আরেকটি ছিনতাই হওয়া যাত্রীবাহী বিমান। হোয়াইট হাউসের দিকে উড়ে যাওয়া আরেকটি বিমান মাঝ আকাশে ভূপাতিত হয় যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে। বিশ্ব তার ইতিহাসে এমন সমন্বিত আর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এর আগে আর কখনো দেখেনি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া এই সন্ত্রাসী ঘটনায় বদলে যায় আমেরিকা। এর জের ধরে বদলে গেছে বিশ্ব আর বৈশ্বিক রাজনীতি। বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিভাজন শুরু হয়ে ৯/১১’র মাধ্যমে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিলেন, ‘হয় তুমি আমার সঙ্গে, নয় তুমি আমার বিপক্ষে। মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না।’

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটান এলাকায় অবস্থিত ৭টি ভবনের একটি স্থাপনা ছিল। জাপানী স্থপতি মিওরু ইয়ামাসাকির নকশায় প্রণীত এই স্থাপনাটির সবচেয়ে উঁচু দুটি ভবনের নামছিল টুইন টাওয়ার। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির বন্দর কর্তৃপক্ষের জমিতে তাদেরই অর্থায়নে এই স্থাপনাটি নির্মিত হয়। দুটি ভবনই ছিল ১১০ তলা।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে অন্যদিনের মতই মানুষ ধীরেধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান প্রায় বিশহাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে নর্থ টাওয়ারে প্রথম আঘাত করে। ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় হামলে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভবনদুটির বিভিন্ন অংশ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রথম স্পষ্ট হয় যে আমেরিকার ওপর আক্রমণ হয়েছে।

পরবর্তীতে তদন্তে বলা হয়, ১৯ জন হামলাকারীর সবাই ছিলেন সৌদিআরবসহ কয়েকটি আরব দেশের নাগরিক। আরও বলা হয় সে সময়ের পলাতক ওসামা বিন লাদেন এ হামলায় সমর্থন ও অর্থায়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার ক্রমাগত সমর্থন, পারস্য উপসাগরে দেশটির ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা চালানো হয় বলে ধারনা করা হয়।

আমেরিকার সমস্ত গোয়েন্দা নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ৯/১১-এর হামলার ঘটনা ঘটেছিল, এ নিয়ে বহু জিজ্ঞাসা আজও অনেক মানুষকে তাড়া করছে। বিশ্বের মহাশক্তিধর বলে পরিচিত আমেরিকার অহংকার চ্যালেঞ্জ করা এ সন্ত্রাসী হামলায় ২৭৯৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের মানুষও।

ভয়াবহ এ হামলার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের ধর্মীয় পরিচয় বড় হয়ে ওঠে তদন্ত শেষে। আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনকে এ হামলার জন্য প্রধান দোষী করা হয়।

আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত এ হামলার পাল্টা জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিকশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। আফগানিস্তান থেকে তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়।

ইরাক-আফগানিস্তানের সরকার উৎখাত করার পর দেশ দুটির কর্তৃত্ব পরোক্ষভাবে অ্যামেরিকার কাছেই চলে যায়। পর্যায়ক্রমে ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেন, আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন, লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফিসহ আরও কয়েকজন নেতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়- ৯/১১ এর জেরে শুরু হওয়া মার্কিন প্রতিশোধে।

বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ধসে পড়া সে জায়গা- গ্রাউন্ড জিরোতে এখন গড়ে উঠেছে ফ্রিডম টাওয়ার। দালানের উচ্চতার দিক থেকে টুইন টাওয়ারকে ছাড়িয়ে যাওয়া ফ্রিডম টাওয়ারেই নির্মিত হয়েছে সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল স্থাপনা। যার স্থপতি ডেভিড চিল্ডস। বেদনা ও বিস্ময়ের সঙ্গে আমেরিকার সাথে বিশ্বের মানুষ এ দিনটিকে স্মরণ করে থাকে প্রতিবছর।