চুনারুঘাটে প্রতিটি চা বাগানেই দামোদর ব্রত পালন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
  • / ২৩৯ Time View
লিটন মুন্ডা, চুনারুঘাট প্রতিনিধি :
.
আজ ৩১ শে অক্টোবর রবিবার থেকে শুরু হলো পবিত্র দামোদর মাস পালন ও দীপদান উৎসব চুনারুঘাটের আমু , নালুয়া , চান্দঁপুর , লস্করপুর , রেমা , চন্ডী , দেউন্ডী , রামগঙ্গাসহ প্রতিটি চা বাগানেই প্রতিটি চা শ্রমিকেই যথাযথ মর্যাদার সাথে এই পবিত্র দামোদর ব্রত ও দীপ দান উৎসব পালন করা হচ্ছে।
.
হিন্দু ধর্মাবল্বীরা পরম মঙ্গলময় ভগবান দামোদর মাসকে অবহেলা করে না । পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বাবস্থাতেই সকলের করুণাময়, আর তাই তিনি কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার জন্যই এই দামোদর-মাস প্রদান করেছেন। ভগবানের প্রতি ভক্তিভাব বৃদ্ধির জন্য ভক্তি সহকারেই দামোদর মাস পালন করা হয়।
.
ইতোমধ্যে মাসব্যাপী দামোদর দীপদান উৎসবের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঐ অনুষ্টান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই মঙ্গলজনক একটি উৎসব। প্রতি বছর দীর্ঘ ১ মাস ব্রত পালন করার পর সকর রাধা-মাধব মন্দিরসহ বিভিন্ন পুজা মন্ডপে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা সহকারে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। উল্লেখ্য, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম দামোদর। দাম শব্দের অর্থ রশি এবং উদর হচ্ছে কোমর। মা যশোদা কর্তৃক যাঁর উদরে দাম বা রশি বন্ধন রয়েছে, তিনিই দামোদর।
.
বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্মালম্বীরা দূর্গাপুজার পরে পূণিমা থেকে পরের পূণিমা পর্যন্ত দামোদর মাস পালন করে থাকেন।দামোদর বা কার্তিক ব্রত সম্বন্ধে স্কন্দ পুরাণে ব্রহ্মা নারদকে বলেছিলেন, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম পেয়ে যে ব্যক্তি কার্তিক ব্রত করে না, সে নিদান্ত অভাগা বলে পরিগণিত হয়। এই বৈষ্ণব ব্রত না করলে জপ তপস্যা বিফল হয়, সাত জন্মের অর্জিত পুণ্য বৃথা হয়ে যায়। সমস্ত তীর্থে স্নান ও সমস্ত বস্তু দানে যে ফল কার্তিক ব্রতে তার থেকে বেশি পুণ্য লাভ হয়। কার্তিক মাসে শ্রীহরির যা কিছু পুণ্য করা হয় তা অক্ষয় হয়ে থাকে। এই মাসে পাপ কর্মেরও ক্ষয় নেই।
.
পদ্মপুরাণে নারদ মুনি শৌনক প্রমুখ মুনিদের বলেছিলেন, ভারতবর্ষে যে মানুষ শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় কার্তিক মাস নিয়ম ছাড়া অতিবাহিত করে, সে হাতের কাছে চিন্তামণি পেয়ে কাদাজলে নিক্ষেপ করে। দেবতা, ঋষি ও পিতৃগণ কার্তিক মাসের সেবা করেন। তাই কার্তিক ব্রত করলে অতি অল্পেও লোকের মহাফল লাভ হয়। রাতের শেষ প্রহরে হরি জাগরণ, স্তূতি ও গান, প্রাতঃস্নান, শ্রীহরির পূজা-অর্চনা, হরিনাম জপ, গীতা অধ্যয়ন, মন্দির প্রদক্ষিণ, শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য গীত করা, ব্রহ্মচর্য পালন, ভূমিতে শয়ন, দিবা ভাগে একবার হবিষ্য ভোজন -এইগুলি হচ্ছে ব্রতের নিয়ম।
.
ভগবান শ্রী দামোদরের প্রিয় মিছরি ও ঘি যুক্ত পায়েস নৈবেদ্য প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে ভাগ করে নিজে ভোজন করতে হয়। শ্রীহরির নৈবেদ্য অপরকে দান করতে হয়। কর্পূর, অগুরু, চন্দন, ধূপ, শ্রীহরির উদ্দেশ্যে দান করতে হয়। কার্তিক মাসে দামোদর অষ্টক গান, শ্রীহরির স্তোত্র, গজেন্দ্রমোক্ষণ পাঠ করলে শ্রীহরি প্রীত হন। শ্রীহরি সম্মুখে ভক্তিভরে হরিকথা শ্রবণ করতে হয়। একাদশীতে সূর্যের তুলারাশিতে অবস্থান অথবা পূর্ণিমাতে লক্ষ্মী সহিত ভগবান বিষ্ণুর প্রসন্নতা বিধানের জন্যই আকাশদীপ প্রদান করা উচিত।
.
নমো পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমো ধর্মায় বিষ্ণবে। নমো যমায় রুদ্রায় কান্তারপতয়ে নমঃ ॥ “পিতৃগণকে নমস্কার, প্রেতগণকে নমস্কার, ধর্মস্বরূপ বিষ্ণুকে প্রণাম, যমরাজকে নমস্কার তথা দুর্গম পথে রক্ষাকারী ইন্দ্রকে নমস্কার।” এ মন্ত্র উচ্চারণ করে যে মানুষ পিতৃগণের নিমিত্ত আকাশে দীপদান করেন, তার পিতৃগণ নরকে থাকলেও উত্তম গতি প্রাপ্ত হন। যে দেবালয়ে, নদীর তীরে, রাজপথে দীপদান করে সে সর্বতোভাবে লক্ষ্মীপ্রাপ্ত হয়।
.
যে কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম উঁচু নিচু পথে দীপ দান করে সে কখনো নরকে পতিত হয় না। পূর্বকালে রাজা ধর্মনন্দন আকাশদীপ দানের প্রভাবে বিষ্ণুলোকে প্রস্থান করেছিলেন। যিনি কার্তিক মাসে হরিবোধিনী একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর সম্মুখে কর্পূর দিয়ে দীপ প্রজ্জ্বলন করেন তার কুলে উৎপন্ন সমস্ত মানুষ ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় ভক্ত হন তথা অন্তঃকালে মোক্ষলাভ করেন। পূর্বকালে কোনো এক গোপ অমাবস্যা তিথিতে ভগবানের মন্দিরে দীপ প্রজ্জ্বলন করে তথা বারংবার জয়ধ্বনি উচ্চারণ করে রাজরাজেশ্বর হয়েছিলেন। এইভাবে স্বয়ং ব্রহ্মা নারদ মুনির কাছে কার্তিক মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিয়মিত দীপ দান ও আকাশদীপ দানের মহিমা ব্যক্ত করেছিলেন। সকলেরই এইভাবে কার্তিক মাসে দীপদান করা উচিত।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

চুনারুঘাটে প্রতিটি চা বাগানেই দামোদর ব্রত পালন শুরু

Update Time : ০১:১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
লিটন মুন্ডা, চুনারুঘাট প্রতিনিধি :
.
আজ ৩১ শে অক্টোবর রবিবার থেকে শুরু হলো পবিত্র দামোদর মাস পালন ও দীপদান উৎসব চুনারুঘাটের আমু , নালুয়া , চান্দঁপুর , লস্করপুর , রেমা , চন্ডী , দেউন্ডী , রামগঙ্গাসহ প্রতিটি চা বাগানেই প্রতিটি চা শ্রমিকেই যথাযথ মর্যাদার সাথে এই পবিত্র দামোদর ব্রত ও দীপ দান উৎসব পালন করা হচ্ছে।
.
হিন্দু ধর্মাবল্বীরা পরম মঙ্গলময় ভগবান দামোদর মাসকে অবহেলা করে না । পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বাবস্থাতেই সকলের করুণাময়, আর তাই তিনি কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার জন্যই এই দামোদর-মাস প্রদান করেছেন। ভগবানের প্রতি ভক্তিভাব বৃদ্ধির জন্য ভক্তি সহকারেই দামোদর মাস পালন করা হয়।
.
ইতোমধ্যে মাসব্যাপী দামোদর দীপদান উৎসবের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঐ অনুষ্টান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই মঙ্গলজনক একটি উৎসব। প্রতি বছর দীর্ঘ ১ মাস ব্রত পালন করার পর সকর রাধা-মাধব মন্দিরসহ বিভিন্ন পুজা মন্ডপে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা সহকারে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। উল্লেখ্য, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম দামোদর। দাম শব্দের অর্থ রশি এবং উদর হচ্ছে কোমর। মা যশোদা কর্তৃক যাঁর উদরে দাম বা রশি বন্ধন রয়েছে, তিনিই দামোদর।
.
বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্মালম্বীরা দূর্গাপুজার পরে পূণিমা থেকে পরের পূণিমা পর্যন্ত দামোদর মাস পালন করে থাকেন।দামোদর বা কার্তিক ব্রত সম্বন্ধে স্কন্দ পুরাণে ব্রহ্মা নারদকে বলেছিলেন, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম পেয়ে যে ব্যক্তি কার্তিক ব্রত করে না, সে নিদান্ত অভাগা বলে পরিগণিত হয়। এই বৈষ্ণব ব্রত না করলে জপ তপস্যা বিফল হয়, সাত জন্মের অর্জিত পুণ্য বৃথা হয়ে যায়। সমস্ত তীর্থে স্নান ও সমস্ত বস্তু দানে যে ফল কার্তিক ব্রতে তার থেকে বেশি পুণ্য লাভ হয়। কার্তিক মাসে শ্রীহরির যা কিছু পুণ্য করা হয় তা অক্ষয় হয়ে থাকে। এই মাসে পাপ কর্মেরও ক্ষয় নেই।
.
পদ্মপুরাণে নারদ মুনি শৌনক প্রমুখ মুনিদের বলেছিলেন, ভারতবর্ষে যে মানুষ শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় কার্তিক মাস নিয়ম ছাড়া অতিবাহিত করে, সে হাতের কাছে চিন্তামণি পেয়ে কাদাজলে নিক্ষেপ করে। দেবতা, ঋষি ও পিতৃগণ কার্তিক মাসের সেবা করেন। তাই কার্তিক ব্রত করলে অতি অল্পেও লোকের মহাফল লাভ হয়। রাতের শেষ প্রহরে হরি জাগরণ, স্তূতি ও গান, প্রাতঃস্নান, শ্রীহরির পূজা-অর্চনা, হরিনাম জপ, গীতা অধ্যয়ন, মন্দির প্রদক্ষিণ, শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য গীত করা, ব্রহ্মচর্য পালন, ভূমিতে শয়ন, দিবা ভাগে একবার হবিষ্য ভোজন -এইগুলি হচ্ছে ব্রতের নিয়ম।
.
ভগবান শ্রী দামোদরের প্রিয় মিছরি ও ঘি যুক্ত পায়েস নৈবেদ্য প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে ভাগ করে নিজে ভোজন করতে হয়। শ্রীহরির নৈবেদ্য অপরকে দান করতে হয়। কর্পূর, অগুরু, চন্দন, ধূপ, শ্রীহরির উদ্দেশ্যে দান করতে হয়। কার্তিক মাসে দামোদর অষ্টক গান, শ্রীহরির স্তোত্র, গজেন্দ্রমোক্ষণ পাঠ করলে শ্রীহরি প্রীত হন। শ্রীহরি সম্মুখে ভক্তিভরে হরিকথা শ্রবণ করতে হয়। একাদশীতে সূর্যের তুলারাশিতে অবস্থান অথবা পূর্ণিমাতে লক্ষ্মী সহিত ভগবান বিষ্ণুর প্রসন্নতা বিধানের জন্যই আকাশদীপ প্রদান করা উচিত।
.
নমো পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমো ধর্মায় বিষ্ণবে। নমো যমায় রুদ্রায় কান্তারপতয়ে নমঃ ॥ “পিতৃগণকে নমস্কার, প্রেতগণকে নমস্কার, ধর্মস্বরূপ বিষ্ণুকে প্রণাম, যমরাজকে নমস্কার তথা দুর্গম পথে রক্ষাকারী ইন্দ্রকে নমস্কার।” এ মন্ত্র উচ্চারণ করে যে মানুষ পিতৃগণের নিমিত্ত আকাশে দীপদান করেন, তার পিতৃগণ নরকে থাকলেও উত্তম গতি প্রাপ্ত হন। যে দেবালয়ে, নদীর তীরে, রাজপথে দীপদান করে সে সর্বতোভাবে লক্ষ্মীপ্রাপ্ত হয়।
.
যে কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম উঁচু নিচু পথে দীপ দান করে সে কখনো নরকে পতিত হয় না। পূর্বকালে রাজা ধর্মনন্দন আকাশদীপ দানের প্রভাবে বিষ্ণুলোকে প্রস্থান করেছিলেন। যিনি কার্তিক মাসে হরিবোধিনী একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর সম্মুখে কর্পূর দিয়ে দীপ প্রজ্জ্বলন করেন তার কুলে উৎপন্ন সমস্ত মানুষ ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় ভক্ত হন তথা অন্তঃকালে মোক্ষলাভ করেন। পূর্বকালে কোনো এক গোপ অমাবস্যা তিথিতে ভগবানের মন্দিরে দীপ প্রজ্জ্বলন করে তথা বারংবার জয়ধ্বনি উচ্চারণ করে রাজরাজেশ্বর হয়েছিলেন। এইভাবে স্বয়ং ব্রহ্মা নারদ মুনির কাছে কার্তিক মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিয়মিত দীপ দান ও আকাশদীপ দানের মহিমা ব্যক্ত করেছিলেন। সকলেরই এইভাবে কার্তিক মাসে দীপদান করা উচিত।