কোটা সংস্কার আন্দোলন : সারজিসকে হলে ফিরিয়ে নিয়ে ক্ষমা চাইলেন ছাত্রলীগ নেতারা

  • Update Time : ০২:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • / 18

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) অমর একুশে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে উক্ত হলের ছাত্রলীগের নেতারা। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তা করতে পারেননি তারা।

শুক্রবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে এ ঘটনা ঘটেছে। 
সারজিস আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। পঞ্চগড় জেলায় বাড়ি তার। তিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সারজিসকে হলছাড়া করার চেষ্টা করেন ঐ হলের শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতারা। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অমর একুশে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে একুশে হলের পাশাপাশি অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। তখন একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা সারজিসের কাছে ক্ষমা চান।

এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে দিবাগত রাত ১ টার দিকে একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। সারজিস হলে থাকবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হন। পরে সারজিসের সহযোগীরা তাকে তার হলের কক্ষে পৌঁছে দিয়ে আসেন।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল মধ্যরাতে সারজিস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর রুমমেটকে হল শাখা ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে, তিনি যেন বৃহস্পতিবারের মধ্যে হল ছেড়ে যান। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তিনি। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের কাছে জানতে চান, এমন কিছু বলা হয়েছে কি না। তাঁরা ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এই উত্তর পেয়ে তিনি কক্ষে এসে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কারণ, তিনি চাননি কোনো ঝামেলা হোক। হল ফটকে এসে দেখেন, পাঁচ থেকে সাত শ শিক্ষার্থী দাঁড়ানো। তাঁরা তাঁকে যেতে দিচ্ছিলেন না। কারণ, তিনি ছাত্রসমাজের একটা যৌক্তিক দাবির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন। খবর পেয়ে আশপাশের হল থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন।

সারজিস আরও বলেন, একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হল শাখার কোন শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা তাঁর সঙ্গে এই কাজ করেছেন। তাঁকে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান। তাঁরা স্বীকার করেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাঁরা তাঁকে হল থেকে বের করে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন।

তবে ক্ষমা চাওয়ায় একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম সাংবাদিকদের কাছে বলতে চাননি সারজিস আলম । ছাত্রলীগের শীর্য পর্যায় থেকে কে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা-ও তিনি বলেননি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর আবাসিক হলে থাকা না-থাকাটা হল প্রশাসনের বিষয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সহনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইশতিয়াক এম সৈয়দ বিষয়টিকে একটি মিস ইনফরমেশন হিসেবে উল্লেখ করেন । যারা সারজিসকে হল ছাড়ার কথা বলেছিলো তারাই তার সাথে ব্যাপারটি মিটিয়ে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কোটা সংস্কার আন্দোলন : সারজিসকে হলে ফিরিয়ে নিয়ে ক্ষমা চাইলেন ছাত্রলীগ নেতারা

Update Time : ০২:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) অমর একুশে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে উক্ত হলের ছাত্রলীগের নেতারা। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তা করতে পারেননি তারা।

শুক্রবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে এ ঘটনা ঘটেছে। 
সারজিস আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। পঞ্চগড় জেলায় বাড়ি তার। তিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সারজিসকে হলছাড়া করার চেষ্টা করেন ঐ হলের শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতারা। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অমর একুশে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে একুশে হলের পাশাপাশি অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। তখন একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা সারজিসের কাছে ক্ষমা চান।

এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে দিবাগত রাত ১ টার দিকে একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। সারজিস হলে থাকবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হন। পরে সারজিসের সহযোগীরা তাকে তার হলের কক্ষে পৌঁছে দিয়ে আসেন।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল মধ্যরাতে সারজিস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর রুমমেটকে হল শাখা ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে, তিনি যেন বৃহস্পতিবারের মধ্যে হল ছেড়ে যান। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তিনি। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের কাছে জানতে চান, এমন কিছু বলা হয়েছে কি না। তাঁরা ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এই উত্তর পেয়ে তিনি কক্ষে এসে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কারণ, তিনি চাননি কোনো ঝামেলা হোক। হল ফটকে এসে দেখেন, পাঁচ থেকে সাত শ শিক্ষার্থী দাঁড়ানো। তাঁরা তাঁকে যেতে দিচ্ছিলেন না। কারণ, তিনি ছাত্রসমাজের একটা যৌক্তিক দাবির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন। খবর পেয়ে আশপাশের হল থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন।

সারজিস আরও বলেন, একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হল শাখার কোন শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা তাঁর সঙ্গে এই কাজ করেছেন। তাঁকে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান। তাঁরা স্বীকার করেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাঁরা তাঁকে হল থেকে বের করে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন।

তবে ক্ষমা চাওয়ায় একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম সাংবাদিকদের কাছে বলতে চাননি সারজিস আলম । ছাত্রলীগের শীর্য পর্যায় থেকে কে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা-ও তিনি বলেননি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর আবাসিক হলে থাকা না-থাকাটা হল প্রশাসনের বিষয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সহনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইশতিয়াক এম সৈয়দ বিষয়টিকে একটি মিস ইনফরমেশন হিসেবে উল্লেখ করেন । যারা সারজিসকে হল ছাড়ার কথা বলেছিলো তারাই তার সাথে ব্যাপারটি মিটিয়ে নিয়েছে বলে জানান তিনি।