কোটা সংস্কার আন্দোলন : টানা ৩য় দিনের মতো বিক্ষোভ-অবস্থান, ছাত্রলীগের বাধার অভিযোগ

  • Update Time : ০৫:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • / 15

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিলের দাবিতে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩য় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাধিক হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এদিন হলের শিক্ষার্থীরা যেন কোটা আন্দোলনে যেতে না পারেন সে জন্য সূর্যসেন হলের গেটে তালা লাগানো হয়। বিজয় একাত্তর হল ও জহুরুল হক হল গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া কবি জসিম উদ্দিন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয় কিছু শিক্ষার্থীকে। এছাড়াও হলে কোটা আন্দোলনকারীরা প্রচারণা করতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সূর্যসেন হলে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয় আগামী এক ঘণ্টার জন্য বের হওয়া যাবে না। পরে আমি বলেছি, আমি মুহসীন হলে থাকি। তারপরও তারা জেরা করেছে৷ পরে জার্সিতে মুহসীন হল লেখা দেখে আমাকে ছাড়ে।

সূর্যসেন হলের গেটের নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, আমরা গেটের দায়িত্বে আছি ঠিকই কিন্তু হল গেটে ছাত্রলীগ তালা মেরেছে। ছেলেদের মিছিলে যেতে দিচ্ছে না।

তবে এসব বাধা পেরিয়েই বিক্ষোভ মিছিলে সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল ও স্লোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিলটি মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গেটের সামনে গেলে ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা গেটের তালা ভেঙে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হন। 

দুপুরে দেখা যায়, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শাহবাগ মোড় ও কাঁটাবনের আশপাশের এলাকায় মিরপুর ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হাঁটা দিচ্ছেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদাভাবে রাস্তা তৈরি করে দেন শিক্ষার্থীরা।

এ দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা ১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে স্লোগান দেন। অবরোধকালে দল নিরপেক্ষ ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্যসচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে ১ ঘণ্টার জন্য আসিনি। আমরা দাবি আদায় করার জন্য এসেছি। দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। শিক্ষার্থীরা জেগে উঠছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।’

তবে আন্দোলন যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আন্দোলন যাবে কি যাবে না, সেটা শিক্ষার্থীদের বিষয়। তবে কোটা নির্ধারণ তো আন্দোলনের বিষয় নয়, এটা আদালতের বিষয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কোটা সংস্কার আন্দোলন : টানা ৩য় দিনের মতো বিক্ষোভ-অবস্থান, ছাত্রলীগের বাধার অভিযোগ

Update Time : ০৫:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিলের দাবিতে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩য় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাধিক হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এদিন হলের শিক্ষার্থীরা যেন কোটা আন্দোলনে যেতে না পারেন সে জন্য সূর্যসেন হলের গেটে তালা লাগানো হয়। বিজয় একাত্তর হল ও জহুরুল হক হল গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া কবি জসিম উদ্দিন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয় কিছু শিক্ষার্থীকে। এছাড়াও হলে কোটা আন্দোলনকারীরা প্রচারণা করতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সূর্যসেন হলে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয় আগামী এক ঘণ্টার জন্য বের হওয়া যাবে না। পরে আমি বলেছি, আমি মুহসীন হলে থাকি। তারপরও তারা জেরা করেছে৷ পরে জার্সিতে মুহসীন হল লেখা দেখে আমাকে ছাড়ে।

সূর্যসেন হলের গেটের নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, আমরা গেটের দায়িত্বে আছি ঠিকই কিন্তু হল গেটে ছাত্রলীগ তালা মেরেছে। ছেলেদের মিছিলে যেতে দিচ্ছে না।

তবে এসব বাধা পেরিয়েই বিক্ষোভ মিছিলে সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল ও স্লোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিলটি মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গেটের সামনে গেলে ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা গেটের তালা ভেঙে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হন। 

দুপুরে দেখা যায়, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শাহবাগ মোড় ও কাঁটাবনের আশপাশের এলাকায় মিরপুর ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হাঁটা দিচ্ছেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদাভাবে রাস্তা তৈরি করে দেন শিক্ষার্থীরা।

এ দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা ১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে স্লোগান দেন। অবরোধকালে দল নিরপেক্ষ ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্যসচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে ১ ঘণ্টার জন্য আসিনি। আমরা দাবি আদায় করার জন্য এসেছি। দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। শিক্ষার্থীরা জেগে উঠছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।’

তবে আন্দোলন যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আন্দোলন যাবে কি যাবে না, সেটা শিক্ষার্থীদের বিষয়। তবে কোটা নির্ধারণ তো আন্দোলনের বিষয় নয়, এটা আদালতের বিষয়।