কোটা বহালের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:৫৭:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
  • / ২০৯ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি চূড়ান্ত স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন, জামুকায় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি বন্ধ, বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ, ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল ও রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৩ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও এবং স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

No description available.

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর সচিবালয় লিংক রোডে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পরে দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যেয়ে মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের নিকট পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শাহীন সিকদার, মুহাম্মদ নুর আলম সরদার, শোয়েব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন ও বংশাল থানার সভাপতি জয়নাল আবেদীন জনি।

এর আগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও পর্যন্ত প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকায় যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রতিনিয়ত অনেক প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে যা কখনোই কাম্য নয়। জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, “বিএনপি-জামাতের শাসনামলে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের নাম আজও পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়নি। আবার নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের কারণে অনেক অমুক্তিযোদ্ধার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা সমাজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সম্প্রতি হঠাৎ করে ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বন্ধ হওয়ায় নতুন করে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, “বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আজও পর্যন্ত রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি যা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির নিকট কখনোই কাম্য নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রাখতে হবে। বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আজ কেন আমাদেরকে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তির দল এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তানরা এখন আওয়ামী লীগ করে যা দেখে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।”

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসরদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করেছে যা প্রশাসনকে দিন দিন জামাতিকরণের দিকে ধাবিত করছে। অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা নিয়ে আর কোন কালক্ষেপণ সহ্য করা হবে না। আমলাদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পরিচালনা করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করে অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন হচ্ছে। কিন্তু কোন বিচার হচ্ছে না। এবছরে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের বসতবাড়ি দখল, হামলা, মামলা, নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রশাসনের ঘুষ বাণিজ্য ও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের ষড়যন্ত্রের কারণে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, বিচারের বাণী যেনো নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর এসব হামলা, মামলা, নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নির্যাতন প্রতিরোধ সেল গঠন করতে হবে। কারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নৈতিক দায়িত্ব। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান জামুকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব গাফিলতি ও অবহেলা মেনে নিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদেরকে চিহ্নিত করে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবশ্যই যথাযথ সম্মানের সাথে সেবা প্রদান করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যথাযথ সম্মান ও সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বদলী করে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মামুন বলেন, দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন, জামুকায় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হয়রানি বন্ধ, বিএনপি-জামাতের শাসনামলে তৈরীকৃত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ, চাকুরির সকল শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করে এদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর ৫ দফা দাবিসমূহ:

১। দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।

২। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ করতে হবে।
৩। ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করতে হবে।

৪। রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করে এদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে।

৫। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

কোটা বহালের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও

Update Time : ০৪:৫৭:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি চূড়ান্ত স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন, জামুকায় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি বন্ধ, বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ, ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল ও রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৩ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও এবং স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

No description available.

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর সচিবালয় লিংক রোডে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পরে দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যেয়ে মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের নিকট পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শাহীন সিকদার, মুহাম্মদ নুর আলম সরদার, শোয়েব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন ও বংশাল থানার সভাপতি জয়নাল আবেদীন জনি।

এর আগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও পর্যন্ত প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকায় যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রতিনিয়ত অনেক প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে যা কখনোই কাম্য নয়। জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, “বিএনপি-জামাতের শাসনামলে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের নাম আজও পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়নি। আবার নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের কারণে অনেক অমুক্তিযোদ্ধার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা সমাজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সম্প্রতি হঠাৎ করে ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বন্ধ হওয়ায় নতুন করে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, “বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আজও পর্যন্ত রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি যা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির নিকট কখনোই কাম্য নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রাখতে হবে। বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আজ কেন আমাদেরকে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তির দল এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তানরা এখন আওয়ামী লীগ করে যা দেখে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।”

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসরদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করেছে যা প্রশাসনকে দিন দিন জামাতিকরণের দিকে ধাবিত করছে। অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা নিয়ে আর কোন কালক্ষেপণ সহ্য করা হবে না। আমলাদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পরিচালনা করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করে অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন হচ্ছে। কিন্তু কোন বিচার হচ্ছে না। এবছরে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের বসতবাড়ি দখল, হামলা, মামলা, নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রশাসনের ঘুষ বাণিজ্য ও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের ষড়যন্ত্রের কারণে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, বিচারের বাণী যেনো নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর এসব হামলা, মামলা, নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নির্যাতন প্রতিরোধ সেল গঠন করতে হবে। কারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নৈতিক দায়িত্ব। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান জামুকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব গাফিলতি ও অবহেলা মেনে নিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদেরকে চিহ্নিত করে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবশ্যই যথাযথ সম্মানের সাথে সেবা প্রদান করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যথাযথ সম্মান ও সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বদলী করে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মামুন বলেন, দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন, জামুকায় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হয়রানি বন্ধ, বিএনপি-জামাতের শাসনামলে তৈরীকৃত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ, চাকুরির সকল শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করে এদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর ৫ দফা দাবিসমূহ:

১। দ্রুত যাচাই-বাছাইপূর্বক অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করে একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।

২। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে গঠিত জামুকার কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অপসারণ করতে হবে।
৩। ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করতে হবে।

৪। রাজাকারদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করে এদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে।

৫। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।