কেউ ফোন-ম্যাসেজের রিপ্লাই না দিলে কি করবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:২৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০
  • / ২৭৮ Time View

ফিচার ডেস্কঃ যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি সাধনের ফলে এখন আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকারো সাথে নিমিষেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। কিন্তু প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার অনেক সম্পর্ক নষ্টও করে দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো কারো ফোন না ধরা কিংবা ম্যাসেজের রিপ্লাই না দেওয়া। আমাদের প্রায় সবাই প্রাত্যহিক এই বিষয়টির সাথে কমবেশি পরিচিত। অনেক একবার ফোন না ধরলে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে অনবরত ফোন বা ম্যাসেজ দিতেই থাকেন। অনেক সময় ফোন না ধরাকে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। এমনকি মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ার আগেই জেনে নেওয়া যাকে কিছু বিষয়:
ক. কেউ যদি আপনার ফোন বা ম্যাসেজের রিপ্লাই না দেন তাহলে প্রথমেই ধারণাপ্রসূত নেতিবাচক সিদ্ধান্তে না এসে তার ব্যক্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। তার সাথে আপনার সম্পর্কের মাত্রা জানার চেষ্টা করুন। যেমন ধরা যাক: চৌধুরী সাহেবের সাথে আপনার নতুন সম্পর্ক। সেখানে প্রথমবার ফোন দেওয়াই যথেষ্ট। ফোন না ধরলে ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠিয়ে রাখা যেতে পারেন। সুযোগ মতো হয়তো তিনি কলব্যাক করবেন। আবার সম্পর্কের মাত্রা অনুযায়ী আপনি চাইলে কাউকে একবারের বেশিও ফোন দিতে পারেন। কারণ আপনারা পরস্পর পরস্পরের দীর্ঘদিনের পরিচিত। এখানে আনুষ্ঠানিকতার কিছু নাই।

খ. স্বল্প বা অপরিচিত কাউকে বিরতিহীন কল দেওয়া বা ম্যাসেজ পাঠানো ও প্রান্তের ব্যক্তির কাছে নাইটম্যায়ার বা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। বিশেষ করে গভীর রাতে কাউকে ফোন দিলে এমনটি হয়। প্রথমবার ফোন না ধরলে বেশি প্রয়োজন হলে ম্যাসেজ দিন বা আশেপাশে পরিচিত কারো দ্বারা খোঁজ নিন।

গ. বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় ননস্টপ কলের এক পর্যায়ে ব্যক্তি ফোন ধরলে বা পরে অনেকগুলো মিসড কল দেখে কলব্যাক করলেও দুইজনের মধ্যকার আলাপচারিতা বন্ধুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। যাকে কল দিয়েছেন তিনি বিরক্তি প্রকাশ করতে পারেন। তাই ননস্টপ কল দেওয়ার বদাভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ কে জানে আপনি যাকে কল বা ম্যাসেজ দিচ্ছেন তিনি হয়তো ফোনের কাছেই নেই।

ঘ. অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা বা কল দেন। সেক্ষেত্রে অল্পপরিচিত বা অপিরিচত কাউকে অনুমতি ছাড়া ভিডিও বা অডিও কল না দেওয়াই ভদ্রতা। আবার ইনবক্সে কেউ ম্যাসেজ পাঠালে সেটি দেখে রেখে দিলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। উত্তর না দিলে প্রেরক মনে করতে পারেন তাকে ইগনোর বা পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। এ থেকে সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।

ঙ. কেউ ফোন না ধরলে সাক্ষাতে বা পরবর্তী কলে আগের ফোন না ধরার কারণ জানতে চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না। এতে ব্যক্তি বিব্রত বা লজ্জিত হতে পারেন। কথা বলার মাঝে প্রসঙ্গক্রমে ইতিবাচকভাবে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটি নির্ভও কওে উপস্থাপনার ওপর।

চ. যদি কেউ একটা লম্বা সময়ের জন্য ফোন না ধরেন তাহলে বিপদ আঁচ করে তার খোঁজ নিন। ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান তাহলে ভিন্ন কথা। তাহলে কারণ অনুসন্ধান করে সমাধান খুঁজুন। অযথা ফোন না ধরলে বুঝতে হবে ব্যক্তি সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয়। এমন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারটি আপনিও পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। কারণ একটা সম্পর্ক আগায় পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে।

ছ. কেউ যদি আপনার ফোন না ধরেন তাহলে সেকথা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো উচিত না। ফোন না ধরা ব্যক্তি পরবর্তীতে জানতে পারলে আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারেন।

জ. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একপেশে কাউকে ফোন বা ম্যাসেজ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভার্চুয়াল মানুষটিকে বাস্তবজীবনে জানার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, ব্যক্তি মানুষের ওপর ভিত্তি করে তার ভার্চুয়াল ভাবমূর্তি গড়ে উঠে। আপনাকে পাত্তা দেওয়ার মতো ইতিবাচক কাজ করতে থাকুন দেখবেন ঠিকই একদিন সে আপনাকে খুঁজে নেবে। অযথা সারাদিন অনলাইনে পড়ে থেকে অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

পরিশেষে একবার ভাবুন তো এত্তোসব প্রযুক্তির সুবিধা যখন ছিল না তখনও কিন্তু সমাজ ছিল, সম্পর্কগুলো টিকে ছিল। সেটির মাত্রা কেমন ছিল এটি বিতর্কের বিষয়। কারণ এখন মানুষ ভার্চুয়াল জগতের সাথে এতোটাই আসক্ত হয়ে পড়েছেন যে বাস্তব জগত থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছেন। এই অতি আসক্তি সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশা বাড়াচ্ছে। তাইতো বর্তমান বিশ্বের এখন কেউ কেউ ইন্টারনেটবিহীন আগের জগতে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। এই সংখ্যাটাও কিন্তু কম না।

লেখক:
সাবেক শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে যোগাযোগ বিষয়ে কর্মরত।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কেউ ফোন-ম্যাসেজের রিপ্লাই না দিলে কি করবেন?

Update Time : ০৫:২৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০

ফিচার ডেস্কঃ যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি সাধনের ফলে এখন আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকারো সাথে নিমিষেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। কিন্তু প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার অনেক সম্পর্ক নষ্টও করে দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো কারো ফোন না ধরা কিংবা ম্যাসেজের রিপ্লাই না দেওয়া। আমাদের প্রায় সবাই প্রাত্যহিক এই বিষয়টির সাথে কমবেশি পরিচিত। অনেক একবার ফোন না ধরলে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে অনবরত ফোন বা ম্যাসেজ দিতেই থাকেন। অনেক সময় ফোন না ধরাকে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। এমনকি মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ার আগেই জেনে নেওয়া যাকে কিছু বিষয়:
ক. কেউ যদি আপনার ফোন বা ম্যাসেজের রিপ্লাই না দেন তাহলে প্রথমেই ধারণাপ্রসূত নেতিবাচক সিদ্ধান্তে না এসে তার ব্যক্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। তার সাথে আপনার সম্পর্কের মাত্রা জানার চেষ্টা করুন। যেমন ধরা যাক: চৌধুরী সাহেবের সাথে আপনার নতুন সম্পর্ক। সেখানে প্রথমবার ফোন দেওয়াই যথেষ্ট। ফোন না ধরলে ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠিয়ে রাখা যেতে পারেন। সুযোগ মতো হয়তো তিনি কলব্যাক করবেন। আবার সম্পর্কের মাত্রা অনুযায়ী আপনি চাইলে কাউকে একবারের বেশিও ফোন দিতে পারেন। কারণ আপনারা পরস্পর পরস্পরের দীর্ঘদিনের পরিচিত। এখানে আনুষ্ঠানিকতার কিছু নাই।

খ. স্বল্প বা অপরিচিত কাউকে বিরতিহীন কল দেওয়া বা ম্যাসেজ পাঠানো ও প্রান্তের ব্যক্তির কাছে নাইটম্যায়ার বা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। বিশেষ করে গভীর রাতে কাউকে ফোন দিলে এমনটি হয়। প্রথমবার ফোন না ধরলে বেশি প্রয়োজন হলে ম্যাসেজ দিন বা আশেপাশে পরিচিত কারো দ্বারা খোঁজ নিন।

গ. বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় ননস্টপ কলের এক পর্যায়ে ব্যক্তি ফোন ধরলে বা পরে অনেকগুলো মিসড কল দেখে কলব্যাক করলেও দুইজনের মধ্যকার আলাপচারিতা বন্ধুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। যাকে কল দিয়েছেন তিনি বিরক্তি প্রকাশ করতে পারেন। তাই ননস্টপ কল দেওয়ার বদাভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ কে জানে আপনি যাকে কল বা ম্যাসেজ দিচ্ছেন তিনি হয়তো ফোনের কাছেই নেই।

ঘ. অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা বা কল দেন। সেক্ষেত্রে অল্পপরিচিত বা অপিরিচত কাউকে অনুমতি ছাড়া ভিডিও বা অডিও কল না দেওয়াই ভদ্রতা। আবার ইনবক্সে কেউ ম্যাসেজ পাঠালে সেটি দেখে রেখে দিলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। উত্তর না দিলে প্রেরক মনে করতে পারেন তাকে ইগনোর বা পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। এ থেকে সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।

ঙ. কেউ ফোন না ধরলে সাক্ষাতে বা পরবর্তী কলে আগের ফোন না ধরার কারণ জানতে চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না। এতে ব্যক্তি বিব্রত বা লজ্জিত হতে পারেন। কথা বলার মাঝে প্রসঙ্গক্রমে ইতিবাচকভাবে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটি নির্ভও কওে উপস্থাপনার ওপর।

চ. যদি কেউ একটা লম্বা সময়ের জন্য ফোন না ধরেন তাহলে বিপদ আঁচ করে তার খোঁজ নিন। ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান তাহলে ভিন্ন কথা। তাহলে কারণ অনুসন্ধান করে সমাধান খুঁজুন। অযথা ফোন না ধরলে বুঝতে হবে ব্যক্তি সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয়। এমন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারটি আপনিও পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। কারণ একটা সম্পর্ক আগায় পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে।

ছ. কেউ যদি আপনার ফোন না ধরেন তাহলে সেকথা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো উচিত না। ফোন না ধরা ব্যক্তি পরবর্তীতে জানতে পারলে আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারেন।

জ. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একপেশে কাউকে ফোন বা ম্যাসেজ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভার্চুয়াল মানুষটিকে বাস্তবজীবনে জানার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, ব্যক্তি মানুষের ওপর ভিত্তি করে তার ভার্চুয়াল ভাবমূর্তি গড়ে উঠে। আপনাকে পাত্তা দেওয়ার মতো ইতিবাচক কাজ করতে থাকুন দেখবেন ঠিকই একদিন সে আপনাকে খুঁজে নেবে। অযথা সারাদিন অনলাইনে পড়ে থেকে অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

পরিশেষে একবার ভাবুন তো এত্তোসব প্রযুক্তির সুবিধা যখন ছিল না তখনও কিন্তু সমাজ ছিল, সম্পর্কগুলো টিকে ছিল। সেটির মাত্রা কেমন ছিল এটি বিতর্কের বিষয়। কারণ এখন মানুষ ভার্চুয়াল জগতের সাথে এতোটাই আসক্ত হয়ে পড়েছেন যে বাস্তব জগত থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছেন। এই অতি আসক্তি সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশা বাড়াচ্ছে। তাইতো বর্তমান বিশ্বের এখন কেউ কেউ ইন্টারনেটবিহীন আগের জগতে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। এই সংখ্যাটাও কিন্তু কম না।

লেখক:
সাবেক শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে যোগাযোগ বিষয়ে কর্মরত।