কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে প্রাচীন নগরীতে একদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:৪৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ১৭৮ Time View

মো. আনিসুল ইসলাম:

পাখির কলতান আর হৃদয় ছোঁয়া নৈসর্গিক পরিবেশ। যেন এক শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতির লীলাভূমি। অসাধারণ ও মনোরম স্থাপত্যশিল্প। বলছিলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও আর পানাম নগরের কথা। সম্প্রতি চাঁদপুর পুরান বাজার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ নগরীকে কাছ থেকে দেখতে।

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শীত উপেক্ষা করে সবাই আসতে শুরু করল ক্যাম্পাসে। সব বিভাগের নবীণ ও প্রবীণ শিক্ষার্থীর আগমনে পুরো ক্যাম্পাস ছিল মুখরিত। অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে জীবনের প্রথম শিক্ষা সফর বলে অন্যরকম অনূভূতি কাজ করছিল। ডিপার্টমেন্ট থেকে নবীন ১২-১৪ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম। সবাইকে এক রঙের টি-শার্ট দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সব ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং কর্মচারীরা।

যাতায়াতের জন্য লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা লঞ্চে উঠলেন। লঞ্চটি সুন্দর করে সাজানো। ৯টার সময় ক্যাম্পাসের পাশ থেকে লঞ্চ ছাড়লো। চাঁদপুর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনারগাঁও। ক্যাম্পাসের কাছ থেকে ডাকাতিয়া নদী হয়ে লঞ্চটি ছুটলো সোনারগাঁওয়ের দিকে। সে কী আনন্দ আর উদ্দীপনা! লঞ্চ থেকে নদীর দু’পাশের প্রকৃতি সবাই উপভোগ করছিলেন। শান্ত সকালে নদীপথে ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ!

লঞ্চ ছাড়ামাত্রই সবাই গানে আর নাচে মত্ত হয়ে গেলেন। যার যার মতো মজা করছেন। সবাই ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি। সকালের নাস্তা দেওয়া হলো। নদীর দু’পাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে সবাই নাস্তা সেরে নিলেন। নাস্তার পর ডিপার্টমেন্টের নবীন-প্রবীণরা একত্রিত হলাম। শিক্ষকরা নবীনদের মোটামুটি পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হলো।

jagonews24

যাত্রাপথে প্রায় তিন ঘণ্টা আনন্দেই চলে গেল। পূর্ব দিগন্ত থেকে সূর্যের আভা যখন মাথার উপরে; তখন পৌঁছলাম সোনারগাঁওয়ের কাছে একটি ঘাটে। লঞ্চ থেকে নামলাম। যার যার মতো টেম্পু ভাড়া করে সোনারগাঁওয়ে চলে গেলাম। শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য দেখতে এবার ভেতরে ঢোকার পালা। ঢুকতে বিশাল গেইট। গেইটে দীর্ঘ লাইন। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী এসেছে।

সবাই ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল জলাধার আর নান্দনিক জলসিঁড়ি। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠিত লোকশিল্প জাদুঘর।

তিন তলা বিশিষ্ট জাদুঘরটি নৈসর্গিক আবহে তৈরি। এখানে স্থান পেয়েছে গ্রামবাংলার শিল্পীদের হস্তশিল্প, নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, কাঠ খোদাই কারুশিল্প, পটাচিত্ত ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ আসবাবসহ অনেক কিছু। এসবে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র ফুটে উঠেছে। তারপরই বিস্তৃত সবুজ-শ্যামল মাঠ। মাঠে চলছে মেলা। হরেকরকম পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। খেলনা, তাঁতপণ্য, বাঁশ-কাঠ-বেতের তৈরি সামগ্রী, লোহা ও পিতলের জিনিসপত্র, নকশি কাঁথা ও বিভিন্ন রকমের খাবার কিনতে পাওয়া যায়।

এ পর্ব শেষে ছুটে চলা প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী পানামে। যেখানে ইতিহাস কথা বলে। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, শত শত বছরের ইতিহাস, ধ্বংসপ্রায় নগরীর ইতিহাস। ইশা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী ছিল পানাম নগর। এর নির্মাণশৈলী অপূর্ব এবং পরিকল্পনা দুর্বেধ্য ও সুরক্ষিত।

বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁওয়ের এ তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরোনো ভবন রয়েছে, যা বাংলার বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। পানাম নগরে ঢুকতেই হাতের বামে রয়েছে ইটের তৈরি একটি বইয়ের ফলক। সেখানে লেখা রয়েছে এর ইতিহাস। হাতের ডানে রয়েছে পানাম সিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। পানাম নগরীর দু’ধারে ঔপনিবেশিক আমলের ৫২টি স্থাপনা। উত্তরদিকে ৩১টি এবং দক্ষিণদিকে ২১টি স্থাপনা। স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। পানাম নগরী নিখুঁত নকশার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন রয়েছে। নগরীর পানি সরবরাহের জন্য দু’পাশে খাল ও পুকুর রয়েছে।

jagonews24

আবাসিক ভবন ছাড়াও উপাসনালয়, গোসলখানা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ ইত্যাদি রয়েছে। পানাম নগরের আশপাশে আরও স্থাপনা আছে, যেমন- ছোট সর্দারবাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুরবাড়ি, পানাম নগর সেতু ইত্যাদি। দলবেঁধে ঘুরে ঘুরে দেখলাম সব।

শহরের প্রতিটি ইট-পাথরই যেন একটি ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে সবাই নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিল। কীভাবে যে বিকেল ঘনিয়ে এলো, তা বুঝতেই পারলাম না। নিজেরা যেন মিশে গিয়েছিলাম এ শহরের প্রতিটি নৈসর্গিক স্থাপত্যে।

এবার ফেরার পালা। বিকাল ৪টার মধ্যে সবাই লঞ্চে উপস্থিত হন। তখন সবাইকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। লঞ্চ ছাড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশে। সূর্য ডুবে সন্ধ্যা নেমে আসে। শুরু হয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। নারীদের বালিশ বদলের পাশাপাশি পুরুষরাও অংশ নেয় বালিশ বদল খেলায়। বালিশ বদলে তিন নারী ও তিন পুরুষকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া উপহার হিসেবে পুরুষদের টি-শার্ট এবং নারীদের তোয়ালে দেওয়া হয়। শেষে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাইকে মগ উপহার দেওয়া হয়।

রাত ৯টায় লঞ্চ ক্যাম্পাসের পাশে ডাকাতিয়া নদীর তীরে থামে। লঞ্চ থেকে সবাই নেমে পড়েন। সেখান থেকে সবাই বিদায় নেন। একটি আনন্দঘন মুহূর্ত সবার জন্য স্মৃতি হয়ে ওঠে। সবার সৌহার্দ বাড়াতে একদিনের আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে।

দিনশেষে ফিরলাম একগাদা স্মৃতিকে সঙ্গী করে। দিন পেরোলেও সোনারগাঁওয়ের সফেদ প্রাসাদ আর পানামের পুরোনো ইটের স্মৃতির রেশ থেকে যাবে বহুবছর। একটি সোনালি ও স্মৃতিময় দিন কাটলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, চাঁদপুর পুরান বাজার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে প্রাচীন নগরীতে একদিন

Update Time : ০৫:৪৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

মো. আনিসুল ইসলাম:

পাখির কলতান আর হৃদয় ছোঁয়া নৈসর্গিক পরিবেশ। যেন এক শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতির লীলাভূমি। অসাধারণ ও মনোরম স্থাপত্যশিল্প। বলছিলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও আর পানাম নগরের কথা। সম্প্রতি চাঁদপুর পুরান বাজার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ নগরীকে কাছ থেকে দেখতে।

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শীত উপেক্ষা করে সবাই আসতে শুরু করল ক্যাম্পাসে। সব বিভাগের নবীণ ও প্রবীণ শিক্ষার্থীর আগমনে পুরো ক্যাম্পাস ছিল মুখরিত। অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে জীবনের প্রথম শিক্ষা সফর বলে অন্যরকম অনূভূতি কাজ করছিল। ডিপার্টমেন্ট থেকে নবীন ১২-১৪ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম। সবাইকে এক রঙের টি-শার্ট দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সব ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং কর্মচারীরা।

যাতায়াতের জন্য লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা লঞ্চে উঠলেন। লঞ্চটি সুন্দর করে সাজানো। ৯টার সময় ক্যাম্পাসের পাশ থেকে লঞ্চ ছাড়লো। চাঁদপুর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনারগাঁও। ক্যাম্পাসের কাছ থেকে ডাকাতিয়া নদী হয়ে লঞ্চটি ছুটলো সোনারগাঁওয়ের দিকে। সে কী আনন্দ আর উদ্দীপনা! লঞ্চ থেকে নদীর দু’পাশের প্রকৃতি সবাই উপভোগ করছিলেন। শান্ত সকালে নদীপথে ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ!

লঞ্চ ছাড়ামাত্রই সবাই গানে আর নাচে মত্ত হয়ে গেলেন। যার যার মতো মজা করছেন। সবাই ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি। সকালের নাস্তা দেওয়া হলো। নদীর দু’পাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে সবাই নাস্তা সেরে নিলেন। নাস্তার পর ডিপার্টমেন্টের নবীন-প্রবীণরা একত্রিত হলাম। শিক্ষকরা নবীনদের মোটামুটি পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হলো।

jagonews24

যাত্রাপথে প্রায় তিন ঘণ্টা আনন্দেই চলে গেল। পূর্ব দিগন্ত থেকে সূর্যের আভা যখন মাথার উপরে; তখন পৌঁছলাম সোনারগাঁওয়ের কাছে একটি ঘাটে। লঞ্চ থেকে নামলাম। যার যার মতো টেম্পু ভাড়া করে সোনারগাঁওয়ে চলে গেলাম। শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য দেখতে এবার ভেতরে ঢোকার পালা। ঢুকতে বিশাল গেইট। গেইটে দীর্ঘ লাইন। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী এসেছে।

সবাই ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল জলাধার আর নান্দনিক জলসিঁড়ি। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠিত লোকশিল্প জাদুঘর।

তিন তলা বিশিষ্ট জাদুঘরটি নৈসর্গিক আবহে তৈরি। এখানে স্থান পেয়েছে গ্রামবাংলার শিল্পীদের হস্তশিল্প, নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, কাঠ খোদাই কারুশিল্প, পটাচিত্ত ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ আসবাবসহ অনেক কিছু। এসবে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র ফুটে উঠেছে। তারপরই বিস্তৃত সবুজ-শ্যামল মাঠ। মাঠে চলছে মেলা। হরেকরকম পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। খেলনা, তাঁতপণ্য, বাঁশ-কাঠ-বেতের তৈরি সামগ্রী, লোহা ও পিতলের জিনিসপত্র, নকশি কাঁথা ও বিভিন্ন রকমের খাবার কিনতে পাওয়া যায়।

এ পর্ব শেষে ছুটে চলা প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী পানামে। যেখানে ইতিহাস কথা বলে। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, শত শত বছরের ইতিহাস, ধ্বংসপ্রায় নগরীর ইতিহাস। ইশা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী ছিল পানাম নগর। এর নির্মাণশৈলী অপূর্ব এবং পরিকল্পনা দুর্বেধ্য ও সুরক্ষিত।

বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁওয়ের এ তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরোনো ভবন রয়েছে, যা বাংলার বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। পানাম নগরে ঢুকতেই হাতের বামে রয়েছে ইটের তৈরি একটি বইয়ের ফলক। সেখানে লেখা রয়েছে এর ইতিহাস। হাতের ডানে রয়েছে পানাম সিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। পানাম নগরীর দু’ধারে ঔপনিবেশিক আমলের ৫২টি স্থাপনা। উত্তরদিকে ৩১টি এবং দক্ষিণদিকে ২১টি স্থাপনা। স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। পানাম নগরী নিখুঁত নকশার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন রয়েছে। নগরীর পানি সরবরাহের জন্য দু’পাশে খাল ও পুকুর রয়েছে।

jagonews24

আবাসিক ভবন ছাড়াও উপাসনালয়, গোসলখানা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ ইত্যাদি রয়েছে। পানাম নগরের আশপাশে আরও স্থাপনা আছে, যেমন- ছোট সর্দারবাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুরবাড়ি, পানাম নগর সেতু ইত্যাদি। দলবেঁধে ঘুরে ঘুরে দেখলাম সব।

শহরের প্রতিটি ইট-পাথরই যেন একটি ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে সবাই নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিল। কীভাবে যে বিকেল ঘনিয়ে এলো, তা বুঝতেই পারলাম না। নিজেরা যেন মিশে গিয়েছিলাম এ শহরের প্রতিটি নৈসর্গিক স্থাপত্যে।

এবার ফেরার পালা। বিকাল ৪টার মধ্যে সবাই লঞ্চে উপস্থিত হন। তখন সবাইকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। লঞ্চ ছাড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশে। সূর্য ডুবে সন্ধ্যা নেমে আসে। শুরু হয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। নারীদের বালিশ বদলের পাশাপাশি পুরুষরাও অংশ নেয় বালিশ বদল খেলায়। বালিশ বদলে তিন নারী ও তিন পুরুষকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া উপহার হিসেবে পুরুষদের টি-শার্ট এবং নারীদের তোয়ালে দেওয়া হয়। শেষে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাইকে মগ উপহার দেওয়া হয়।

রাত ৯টায় লঞ্চ ক্যাম্পাসের পাশে ডাকাতিয়া নদীর তীরে থামে। লঞ্চ থেকে সবাই নেমে পড়েন। সেখান থেকে সবাই বিদায় নেন। একটি আনন্দঘন মুহূর্ত সবার জন্য স্মৃতি হয়ে ওঠে। সবার সৌহার্দ বাড়াতে একদিনের আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে।

দিনশেষে ফিরলাম একগাদা স্মৃতিকে সঙ্গী করে। দিন পেরোলেও সোনারগাঁওয়ের সফেদ প্রাসাদ আর পানামের পুরোনো ইটের স্মৃতির রেশ থেকে যাবে বহুবছর। একটি সোনালি ও স্মৃতিময় দিন কাটলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, চাঁদপুর পুরান বাজার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।