কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলাশয়ে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনার খাত!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:১০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • / 18

স্টাফ রিপোর্টার,কক্সবাজার:

বিজ্ঞানের প্রযুক্তির এই যুগে কক্সবাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা উদ্ভাবন ও সম্ভাবনা। এবার কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলাশয়ে চাষ হচ্ছে ওয়েস্টার, গ্রীন মাসেল, সীউইড।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের রাস্তার পাড়া এবং মহেশখালী বাঁকখালী নদীর চ্যানেলে নোনা জলাশয়ে এসব চাষ করা হচ্ছে।
এতে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র বাঁশের ভেলা, প্লাস্টিক ড্রাম, রশি, প্লাস্টিকের নেটের খাচা। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে সফলতা পাচ্ছে উদ্যোক্তারাও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়েস্টার, (সাদা বড় ঝিনুক) গ্রীণ মাসেল (সবুজ ঝিনুক) ও সীউইড (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বিস্তারের মাধ্যমে উপকূলীয় অগভীর জলাশয় চাষে আওতায় আসবে এবং জলজ সম্পদ উৎপাদন বাড়বে।
ফলে, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র লোকের র্কমসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। একইভাবে গ্রীণ মাসেল চাষে আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ অনুসরণ করে রপ্তানিতে নতুন পণ্য যোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।

গত ২০২২ সাল থেকে পল্লী র্কম-সহায়ক ফাউন্ডশেন এবং আইডিএফ গ্রীণ মাসেল উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে স্থানীয় দরিদ্র জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং ও চাষী-বান্ধব কলাকৌশল উদ্ভাবন করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে গ্রীণ মাসেল চাষে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল শিখানো হয়। একইসঙ্গে গ্রীণ মাসেল বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে, উপকূলীয় অঞ্চলরে দরিদ্র জনগোষ্ঠী নতুন র্কমসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, বেড়েছে তাদের আয়। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।

কক্সবাজারের নোনা জলাশয়ে সবুজ ঝিনুক চাষী আনোয়ার মিয়া জানান, ‘আমি আইডিএফ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাম, বাশঁ, রশি ইত্যাদি দিয়ে ভেলা তৈরি করে গ্রীন মাসেল ও ওয়েস্টার চাষ কওে থাকি এবং এগুলো বিক্রি করে সংসার চালায়। প্রতি মৌসুমে ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি করি। একারণে সংসারে এসেছে স্বচ্ছতা।’

কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকার একজন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সুনীল অর্থনীতিতে সফল চাষী রিজিয়া বেগম। তিনি জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের পাশাপাশি সবুজ ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষ করে সফলতা পেয়েছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এই কাজ করতে গিয়ে বেশী সময়ের প্রয়োজন পড়েনি। শৈবাল, ওয়েস্টার ও ঝিনুক বিক্রি করে ভাল লাভ হয়েছি আমি। এখন আমার সংসারে অভাব নেই।

আরেক জন শৈবাল চাষী গিয়াস উদ্দিন জানান, ‘অল্প পুঁজিতে বেশী লাভ। প্রথমে বড় বড় বাঁশ, ড্রাম ও রশিতে পুঁজির দরকার পড়ে। এরপর ‘আইডিএফ’ এর পরামর্শক্রমে বাঁশের ভেলাগুলো পাহারা দিতে হয়, যাতে নদীতে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যাতায়াত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন নষ্ট না হয় শুধু সেদিকে খেয়াল রাখা। এতে তেমন কোন সময় অপচয় হয় না। উৎপাদিত পন্যগুলো বিক্রিতে বাজারে যেতে হয় না, বাসা থেকে কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।’

‘আইডিএফ’র মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার গ্রামীন নারী ও যুবকদের সাবলম্বী করে তোলার জন্য সবুজ ঝিনুক, সীউইড, ওয়েস্টার ইত্যাদি চাষের উপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। কারিগরি সহায়তা এবং মার্কেট লিংকেজ করে দেওয়া হয়। এতে করে মাঠ পর্যায়ে ঝিনুক চাষিরা পাচ্ছে ব্যাপক সফলতা। অগভীর নোনা জলাশয়ে ঝিনুক চাষ একে অপরের কাছ থেকে দেখে উক্ত ঝিনুক চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে হতদরিদ্র মানুষেরা।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলাশয়ে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনার খাত!

Update Time : ০৬:১০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার,কক্সবাজার:

বিজ্ঞানের প্রযুক্তির এই যুগে কক্সবাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা উদ্ভাবন ও সম্ভাবনা। এবার কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলাশয়ে চাষ হচ্ছে ওয়েস্টার, গ্রীন মাসেল, সীউইড।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের রাস্তার পাড়া এবং মহেশখালী বাঁকখালী নদীর চ্যানেলে নোনা জলাশয়ে এসব চাষ করা হচ্ছে।
এতে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র বাঁশের ভেলা, প্লাস্টিক ড্রাম, রশি, প্লাস্টিকের নেটের খাচা। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে সফলতা পাচ্ছে উদ্যোক্তারাও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়েস্টার, (সাদা বড় ঝিনুক) গ্রীণ মাসেল (সবুজ ঝিনুক) ও সীউইড (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বিস্তারের মাধ্যমে উপকূলীয় অগভীর জলাশয় চাষে আওতায় আসবে এবং জলজ সম্পদ উৎপাদন বাড়বে।
ফলে, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র লোকের র্কমসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। একইভাবে গ্রীণ মাসেল চাষে আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ অনুসরণ করে রপ্তানিতে নতুন পণ্য যোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।

গত ২০২২ সাল থেকে পল্লী র্কম-সহায়ক ফাউন্ডশেন এবং আইডিএফ গ্রীণ মাসেল উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে স্থানীয় দরিদ্র জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং ও চাষী-বান্ধব কলাকৌশল উদ্ভাবন করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে গ্রীণ মাসেল চাষে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল শিখানো হয়। একইসঙ্গে গ্রীণ মাসেল বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে, উপকূলীয় অঞ্চলরে দরিদ্র জনগোষ্ঠী নতুন র্কমসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, বেড়েছে তাদের আয়। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।

কক্সবাজারের নোনা জলাশয়ে সবুজ ঝিনুক চাষী আনোয়ার মিয়া জানান, ‘আমি আইডিএফ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাম, বাশঁ, রশি ইত্যাদি দিয়ে ভেলা তৈরি করে গ্রীন মাসেল ও ওয়েস্টার চাষ কওে থাকি এবং এগুলো বিক্রি করে সংসার চালায়। প্রতি মৌসুমে ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি করি। একারণে সংসারে এসেছে স্বচ্ছতা।’

কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকার একজন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সুনীল অর্থনীতিতে সফল চাষী রিজিয়া বেগম। তিনি জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের পাশাপাশি সবুজ ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষ করে সফলতা পেয়েছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এই কাজ করতে গিয়ে বেশী সময়ের প্রয়োজন পড়েনি। শৈবাল, ওয়েস্টার ও ঝিনুক বিক্রি করে ভাল লাভ হয়েছি আমি। এখন আমার সংসারে অভাব নেই।

আরেক জন শৈবাল চাষী গিয়াস উদ্দিন জানান, ‘অল্প পুঁজিতে বেশী লাভ। প্রথমে বড় বড় বাঁশ, ড্রাম ও রশিতে পুঁজির দরকার পড়ে। এরপর ‘আইডিএফ’ এর পরামর্শক্রমে বাঁশের ভেলাগুলো পাহারা দিতে হয়, যাতে নদীতে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যাতায়াত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন নষ্ট না হয় শুধু সেদিকে খেয়াল রাখা। এতে তেমন কোন সময় অপচয় হয় না। উৎপাদিত পন্যগুলো বিক্রিতে বাজারে যেতে হয় না, বাসা থেকে কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।’

‘আইডিএফ’র মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার গ্রামীন নারী ও যুবকদের সাবলম্বী করে তোলার জন্য সবুজ ঝিনুক, সীউইড, ওয়েস্টার ইত্যাদি চাষের উপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। কারিগরি সহায়তা এবং মার্কেট লিংকেজ করে দেওয়া হয়। এতে করে মাঠ পর্যায়ে ঝিনুক চাষিরা পাচ্ছে ব্যাপক সফলতা। অগভীর নোনা জলাশয়ে ঝিনুক চাষ একে অপরের কাছ থেকে দেখে উক্ত ঝিনুক চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে হতদরিদ্র মানুষেরা।’