এ একুশে খুঁজি সে একুশের চেতনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:২২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ২৮৫ Time View
শাহরিয়ার ইমরান:
একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং বাংলার ইতিহাসে ‘একুশ’ হলো একটি চেতনার বীজমন্ত্র, ভাষা প্রীতি ও চেতনায় দীপ্তমান সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমাময় একটি ভাস্বর।
.
১৯৫২ সাল থেকে আজ অব্দি প্রতি ফেব্রুয়ারিতেই, সায়াহ্নের রক্তিম সূর্যেরমত গগন ললাটে উদয় হয় এক মহা প্রবর্তনার প্রত্যাদেশ। কানে বাজে এক ঐতিহাসিক স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। ইতিহাসের পাতা থেকে উপগতকালে খুঁজতে থাকি ৫২র দ্যোতনা।
.
একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে।১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগেই শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ সবাই যেন এ সংগ্রামের সৈনিক। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি জোরদার হয়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার শফিকরা ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা-তপ্ত লহু ঢেলে দেন। সূচনা হয় এই দুর্লভ ইতিহাসের। আর সেখান থেকেই ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
.
এ দিবস একদিকে যেমন গভীর শোকের অন্যদিকে তেমনই বিশাল গৌরবের। আমাদের চেতনায় বিদ্রোহ-বিপ্লবে একুশ জড়িয়ে আছে। একুশ বাঙালির সাহস, একুশ মানে মাথা নত না করা। ৫২র সেদিনের সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, এই দুই ধারাকে এক সূত্রে গ্রথিত করে মুক্তি সংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে জাতিকে, আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের মাতৃভাষা নয়, প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশে সমর্থন নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
.
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। এবং একবিংশ শতাব্দী তথা ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আর এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী হাতিয়ার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের বর্তমান স্রোতধারায় নতুন তাৎপর্যের দাবি রাখে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের এই আকাঙ্ক্ষা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং বর্তমান সময়ে অনেক বাঙালির হাতেই বাংলা ভাষা উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, অফিস-আদালতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে, ইংরেজি ভাষার দখলদারি ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
.
আমাদের ভুললে চলবে না যে, একুশের চেতনাই আমাদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের প্রেরণা। এই চেতনা অম্লান রেখে জাতির সব ধরনের কল্যাণ ও অগ্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত, আমাদের জাতীয় ভাষাকে সম্মান করে সকল কর্ম ও দক্ষতায় নিজেদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশ্বময় ফুটিয়ে তোলা।
.
লেখক: শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ (৩য় বর্ষ) ,সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

এ একুশে খুঁজি সে একুশের চেতনা

Update Time : ০২:২২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
শাহরিয়ার ইমরান:
একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং বাংলার ইতিহাসে ‘একুশ’ হলো একটি চেতনার বীজমন্ত্র, ভাষা প্রীতি ও চেতনায় দীপ্তমান সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমাময় একটি ভাস্বর।
.
১৯৫২ সাল থেকে আজ অব্দি প্রতি ফেব্রুয়ারিতেই, সায়াহ্নের রক্তিম সূর্যেরমত গগন ললাটে উদয় হয় এক মহা প্রবর্তনার প্রত্যাদেশ। কানে বাজে এক ঐতিহাসিক স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। ইতিহাসের পাতা থেকে উপগতকালে খুঁজতে থাকি ৫২র দ্যোতনা।
.
একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে।১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগেই শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ সবাই যেন এ সংগ্রামের সৈনিক। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি জোরদার হয়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার শফিকরা ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা-তপ্ত লহু ঢেলে দেন। সূচনা হয় এই দুর্লভ ইতিহাসের। আর সেখান থেকেই ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
.
এ দিবস একদিকে যেমন গভীর শোকের অন্যদিকে তেমনই বিশাল গৌরবের। আমাদের চেতনায় বিদ্রোহ-বিপ্লবে একুশ জড়িয়ে আছে। একুশ বাঙালির সাহস, একুশ মানে মাথা নত না করা। ৫২র সেদিনের সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, এই দুই ধারাকে এক সূত্রে গ্রথিত করে মুক্তি সংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে জাতিকে, আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের মাতৃভাষা নয়, প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশে সমর্থন নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
.
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। এবং একবিংশ শতাব্দী তথা ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আর এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী হাতিয়ার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের বর্তমান স্রোতধারায় নতুন তাৎপর্যের দাবি রাখে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের এই আকাঙ্ক্ষা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং বর্তমান সময়ে অনেক বাঙালির হাতেই বাংলা ভাষা উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, অফিস-আদালতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে, ইংরেজি ভাষার দখলদারি ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
.
আমাদের ভুললে চলবে না যে, একুশের চেতনাই আমাদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের প্রেরণা। এই চেতনা অম্লান রেখে জাতির সব ধরনের কল্যাণ ও অগ্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত, আমাদের জাতীয় ভাষাকে সম্মান করে সকল কর্ম ও দক্ষতায় নিজেদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশ্বময় ফুটিয়ে তোলা।
.
লেখক: শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ (৩য় বর্ষ) ,সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।