এরদোয়ানকে হারাতে একজোট বিরোধীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:১৬:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
  • / ৯২ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

তুরস্কের প্রবল ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের জন্য রোববারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই। কারণ এবার তাকে মোকাবিলা করতে একজোট হয়েছে বিরোধী সবগুলো দল। এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুলু শুক্রবার তার সমর্থকদের সঙ্গে সমাবেশে হাজির হন। সে সময় তার দুই পাশে ছিলেন সেদেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থেকে আসা মিত্ররা।

তুরস্কের রাজনীতিতে অনেকদিন এমনটা ঘটেনি। আঙ্কারায় তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। তার মধ্যেই সেই সমাবেশে কিলিচদারুলু ঘোষণা করলেন-তিনি দেশে ‌‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।

২০ বছর ধরে দেশ শাসন করা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য তিনি ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন। অপরদিকে এরদোয়ান বলছেন, বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তুরস্কের মাথা উঁচু রেখেছেন তিনি। চ্যালেঞ্জগুলোর একটি ছিল অর্থনীতি- যার ওপর দিয়ে দুই অংকের মুদ্রাস্ফীতি এবং ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের মতো বহু ঝড়-ঝাপটা বয়ে গিয়েছে।

তুরস্কের এবারের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় এ দুটিই ছিল প্রধান ইস্যু। কেমাল কিলিচদারুলুর বয়স এখন ৭৪ বছর এবং তাকে একজন মৃদুভাষী লোক হিসেবেই মনে করা হয়। কিন্তু শুক্রবারের সমাবেশে আগত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি এক জোরালো বক্তৃতা দিয়েছেন।

কিলিচদারুলুর সমর্থকরা মনে করছেন গত দুই দশক ধরে এরদোয়ান পার্লামেন্টের পরিবর্তে নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন এবং সেই ক্ষমতা কেড়ে নেবার জন্য এবারই সবচেয়ে বড় সুযোগ উপস্থিত।

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, সামান্য ব্যবধানে হলেও তাতে এগিয়ে আছেন কিলিচদারুলু। তার সমর্থকরা এখন এ স্বপ্ন দেখার সাহস করছেন যে, তিনি হয়তো ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সরাসরি নির্বাচিত হবেন এবং দ্বিতীয় দফায় ভোটাভুটির আর দরকার হবে না।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, হেরে গেলে তিনি কী করবেন? জবাবে এরদোয়ান বললেন, এটা একটা অর্থহীন প্রশ্ন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মত ভোট দেবেন ৫০ লাখ নতুন ভোটার। তাদের একজন হলেন ফিরাত।

তিনি বলছেন, এটা দেখে তিনি খুবই খুশি যে মধ্যবাম রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রধানের সঙ্গে একই মঞ্চে এবার রক্ষণশীল এবং জাতীয়তাবাদীদের দেখা যাচ্ছে। এখানে ছিলেন জাতীয়তাবাদী এবং ছয়দলীয় জোটের একমাত্র নারী নেত্রী মেরাল আকসেনার, আরও ছিলেন ইসলামপন্থী ফেলিসিটি পার্টির নেতা তেমেল কারামোল্লাওলু।

কিলিচদারুলুর দল মূলত ধর্মনিরপেক্ষ, কিন্তু তিনি হিজাব পরেন এমন নারীদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিতে অনেক পরিশ্রম করেছেন।ভোটের আগে উত্তেজনা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে আঙ্কারায় তার শেষ দুটি সমাবেশে কিলিচদারুলু বুলেটপ্রুফ পোশাক পরে মঞ্চে ওঠেন।

এ ভোটযুদ্ধ হয়ে উঠেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য চারজন প্রার্থীর একজন মুহাররেম ইন্স বৃহস্পতিবার ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে তাকে লক্ষ্য করে ভুয়া যৌন ভিডিও ছেড়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে।

বিরোধীরা এসব ভিডিওর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলে ক্রেমলিন থেকে এক বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়। অপরদিকে এরদোয়ান ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুতিনকে আক্রমণ করলে তা তিনি ভালোভাবে নেবেন না।

এরদোয়ানের সমাবেশগুলোতে নীল, কমলা ও সাদা রঙের একে পার্টির পতাকা নিয়ে বহু লোক আসেন। এসব সমাবেশে আগতরা একে পার্টিকে পুরোপুরি সমর্থন করেন বলেই মনে হয়।

সবুজ জ্যাকেট পরে মঞ্চে ওঠা এরদোয়ান তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল বানিয়েছি। শহরগুলোর চেহারা বদলে দিয়েছি, আমাদের নিজস্ব তেল ও গ্যাস আহরণ করেছি।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ানের কৌশল ছিল এটাই- বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প এবং প্রবৃদ্ধি অর্জন। বড় শহরগুলোতে তার চিহ্ন দেখা যায়, যদিও সিনক্যানের মতো ছোট শহরে ততটা নয়।

এরদোয়ানের একে পার্টির পক্ষে এখনো জোরালো সমর্থন আছে, তবে তিনি জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এবং তার পিপলস এলায়েন্সের ছোট ছোট দলগুলোর সমর্থনের ওপরও নির্ভরশীল। তার সমর্থনের সব বড় উৎস হচ্ছে রক্ষণশীল বা জাতীয় তুর্করা।

তাছাড়া এরদোয়ান তার বক্তৃতায় পশ্চিমা বিশ্ব এবং এলজিবিটি অর্থাৎ পুরুষ ও নারী সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ করেছেন। তুরস্কের রাজনৈতিক পদ্ধতিতে এসব জোট গুরুত্বপূর্ণ কারণ পার্লামেন্টে যেতে হলে একটি দলকে জাতীয় ভোটের ৭ শতাংশ পেতেই হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে দলই জয়লাভ করুক, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্টে যথেষ্ট সমর্থন পেতে হবে। আঙ্কারায় মধ্যবামপন্থী প্রার্থী আয়সুন পালালি কোক্তাস বলছিলেন, অর্থনীতির মতো ইস্যুগুলোর পাশাপাশি এবার নির্বাচনে তুরস্কের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের ভবিষ্যতের প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা যখন টুইট করি, তখন আমরা ভয়ে থাকতে চাই না। বিশেষ করে তরুণরা এটাই চাইছে। তবে একে পার্টির প্রার্থী জেহরানূর আয়দেমির বিশ্বাস করেন, তরুণ ভোটারদের প্রতি এ সরকারের মনোভাব খুবই অনুকূল। তিনি বলেন, আমাদের দলের সকল স্তরেই আপনি তরুণদের দেখতে পাবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

এরদোয়ানকে হারাতে একজোট বিরোধীরা

Update Time : ১০:১৬:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

তুরস্কের প্রবল ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের জন্য রোববারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই। কারণ এবার তাকে মোকাবিলা করতে একজোট হয়েছে বিরোধী সবগুলো দল। এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুলু শুক্রবার তার সমর্থকদের সঙ্গে সমাবেশে হাজির হন। সে সময় তার দুই পাশে ছিলেন সেদেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থেকে আসা মিত্ররা।

তুরস্কের রাজনীতিতে অনেকদিন এমনটা ঘটেনি। আঙ্কারায় তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। তার মধ্যেই সেই সমাবেশে কিলিচদারুলু ঘোষণা করলেন-তিনি দেশে ‌‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।

২০ বছর ধরে দেশ শাসন করা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য তিনি ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন। অপরদিকে এরদোয়ান বলছেন, বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তুরস্কের মাথা উঁচু রেখেছেন তিনি। চ্যালেঞ্জগুলোর একটি ছিল অর্থনীতি- যার ওপর দিয়ে দুই অংকের মুদ্রাস্ফীতি এবং ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের মতো বহু ঝড়-ঝাপটা বয়ে গিয়েছে।

তুরস্কের এবারের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় এ দুটিই ছিল প্রধান ইস্যু। কেমাল কিলিচদারুলুর বয়স এখন ৭৪ বছর এবং তাকে একজন মৃদুভাষী লোক হিসেবেই মনে করা হয়। কিন্তু শুক্রবারের সমাবেশে আগত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি এক জোরালো বক্তৃতা দিয়েছেন।

কিলিচদারুলুর সমর্থকরা মনে করছেন গত দুই দশক ধরে এরদোয়ান পার্লামেন্টের পরিবর্তে নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন এবং সেই ক্ষমতা কেড়ে নেবার জন্য এবারই সবচেয়ে বড় সুযোগ উপস্থিত।

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, সামান্য ব্যবধানে হলেও তাতে এগিয়ে আছেন কিলিচদারুলু। তার সমর্থকরা এখন এ স্বপ্ন দেখার সাহস করছেন যে, তিনি হয়তো ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সরাসরি নির্বাচিত হবেন এবং দ্বিতীয় দফায় ভোটাভুটির আর দরকার হবে না।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, হেরে গেলে তিনি কী করবেন? জবাবে এরদোয়ান বললেন, এটা একটা অর্থহীন প্রশ্ন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মত ভোট দেবেন ৫০ লাখ নতুন ভোটার। তাদের একজন হলেন ফিরাত।

তিনি বলছেন, এটা দেখে তিনি খুবই খুশি যে মধ্যবাম রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রধানের সঙ্গে একই মঞ্চে এবার রক্ষণশীল এবং জাতীয়তাবাদীদের দেখা যাচ্ছে। এখানে ছিলেন জাতীয়তাবাদী এবং ছয়দলীয় জোটের একমাত্র নারী নেত্রী মেরাল আকসেনার, আরও ছিলেন ইসলামপন্থী ফেলিসিটি পার্টির নেতা তেমেল কারামোল্লাওলু।

কিলিচদারুলুর দল মূলত ধর্মনিরপেক্ষ, কিন্তু তিনি হিজাব পরেন এমন নারীদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিতে অনেক পরিশ্রম করেছেন।ভোটের আগে উত্তেজনা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে আঙ্কারায় তার শেষ দুটি সমাবেশে কিলিচদারুলু বুলেটপ্রুফ পোশাক পরে মঞ্চে ওঠেন।

এ ভোটযুদ্ধ হয়ে উঠেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য চারজন প্রার্থীর একজন মুহাররেম ইন্স বৃহস্পতিবার ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে তাকে লক্ষ্য করে ভুয়া যৌন ভিডিও ছেড়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে।

বিরোধীরা এসব ভিডিওর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলে ক্রেমলিন থেকে এক বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়। অপরদিকে এরদোয়ান ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুতিনকে আক্রমণ করলে তা তিনি ভালোভাবে নেবেন না।

এরদোয়ানের সমাবেশগুলোতে নীল, কমলা ও সাদা রঙের একে পার্টির পতাকা নিয়ে বহু লোক আসেন। এসব সমাবেশে আগতরা একে পার্টিকে পুরোপুরি সমর্থন করেন বলেই মনে হয়।

সবুজ জ্যাকেট পরে মঞ্চে ওঠা এরদোয়ান তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল বানিয়েছি। শহরগুলোর চেহারা বদলে দিয়েছি, আমাদের নিজস্ব তেল ও গ্যাস আহরণ করেছি।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ানের কৌশল ছিল এটাই- বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প এবং প্রবৃদ্ধি অর্জন। বড় শহরগুলোতে তার চিহ্ন দেখা যায়, যদিও সিনক্যানের মতো ছোট শহরে ততটা নয়।

এরদোয়ানের একে পার্টির পক্ষে এখনো জোরালো সমর্থন আছে, তবে তিনি জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এবং তার পিপলস এলায়েন্সের ছোট ছোট দলগুলোর সমর্থনের ওপরও নির্ভরশীল। তার সমর্থনের সব বড় উৎস হচ্ছে রক্ষণশীল বা জাতীয় তুর্করা।

তাছাড়া এরদোয়ান তার বক্তৃতায় পশ্চিমা বিশ্ব এবং এলজিবিটি অর্থাৎ পুরুষ ও নারী সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ করেছেন। তুরস্কের রাজনৈতিক পদ্ধতিতে এসব জোট গুরুত্বপূর্ণ কারণ পার্লামেন্টে যেতে হলে একটি দলকে জাতীয় ভোটের ৭ শতাংশ পেতেই হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে দলই জয়লাভ করুক, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্টে যথেষ্ট সমর্থন পেতে হবে। আঙ্কারায় মধ্যবামপন্থী প্রার্থী আয়সুন পালালি কোক্তাস বলছিলেন, অর্থনীতির মতো ইস্যুগুলোর পাশাপাশি এবার নির্বাচনে তুরস্কের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের ভবিষ্যতের প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা যখন টুইট করি, তখন আমরা ভয়ে থাকতে চাই না। বিশেষ করে তরুণরা এটাই চাইছে। তবে একে পার্টির প্রার্থী জেহরানূর আয়দেমির বিশ্বাস করেন, তরুণ ভোটারদের প্রতি এ সরকারের মনোভাব খুবই অনুকূল। তিনি বলেন, আমাদের দলের সকল স্তরেই আপনি তরুণদের দেখতে পাবেন।