উড়ন্ত আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামাল সৌদি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৭:১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৩৯ Time View

স্পোর্টস ডেস্কঃ

বিশ্বকাপে মাঠে নেমেই গোল করলেন মেসি, গড়লেন রেকর্ডও। তবে বিরতির পর বাজিমাত করল সৌদি আরব। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল দিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেয় দলটি। সঙ্গে ২-১ ব্যবধানের দুর্দান্ত জয় নিয়ে রেকর্ডও গড়ে তারা।

এর আগে প্রথমার্ধেই চারবার বল জালে পাঠায় মেসি-মার্টিনেজরা। তবে মেসির পেনাল্টি ছাড়া অফসাইডের কারণে বাদ হয়ে যায় বাকি তিনটিই। যাতে হতাশ হয়ে পড়া আর্জেন্টাইনরা শত চেষ্টা করেও আর ভাঙতে পারেনি সৌদির দুর্গ।

দুর্দান্ত সব শট সেভ করে সৌদির জয়ের নায়ক মূলত গোলরক্ষক আল ওয়াইস।

মঙ্গলবার বিকেলে লুসাইল স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে র‌্যাংকিংয়ের তিনে থাকা আর্জেন্টিনাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ৫১তম স্থানে থাকা সৌদি আরব। আলবেসিলেস্তেদের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় এশিয়ার দলটির।

একইসঙ্গে আর্জেন্টিনার টানা ৩৬ ম্যাচের অপরাজিত থাকার দৌড় থামিয়ে দেয় তারা। এর আগে চারবারের দেখায় ২ হার ও ২ ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে সৌদি আরব।

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে সৌদির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা যখন মাঠে নামে, তখন ইতালির রেকর্ড নিয়ে গবেষণা করছিল সকলেই। সৌদিকে হারিয়ে ইতালির পর আর্জেন্টিনাও টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিজেদের করে নেবে- এমনটাই ধরে নিয়েছিল সবাই।

তবে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিতেই যেন প্রস্তুত ছিল লুসাইল স্টেডিয়াম। আর তাইতো প্রথমার্ধে চার বার বল জালে জড়িয়েও আর্জেন্টিনা মোটে গোল পেল ১টি। সেটাও আবার ভিএআর প্রযুক্তিতে পেনাল্টি পেয়ে।

অন্যদিকে প্রথমার্ধে সৌদি আরব ছিল সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে। কোনো আক্রমণ তো দূরে থাক ডিফেন্সটাও ঠিকমতো করতে পারছিল না আরবের দেশটি। অথচ বিরতি থেকে ফিরে রীতিমতো আগুনে ফুটবল উপহার দিতে থাকে সবুজ জার্সিধারীরা।

টানা ৫ মিনিটে দুই গোল দিয়ে আর্জেন্টাইনদের চেয়ে এগিয়ে যায় দলটি। সেই লিড টানা ৪৫ মিনিট ধরে রেখে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয় আরবীয়রা।

লুসাইলে এদিন অবশ্য শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে আর্জেন্টাইনরা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ১২ গজ দূর থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক আল ওয়াইস। বাম প্রান্ত দিয়ে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে বল পাস দেন লাউতারো মার্টিনেজকে। তবে তিনি বল গোলমুখে রাখতে ব্যর্থ হন। সেই মুহূর্তে পেছন থেকে এসে শটটি নেন মেসি।

এরপর আবারও আক্রমণে সৌদিয়ানদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখে আর্জেন্টিনা। এরমধ্যে খেলার ৮ম মিনিটে কর্ণার পায় লা আলবিসেলেস্তেরা। সেখান থেকে বল আর্জেন্টাইনদের পায়ে থাকতেই আচমকা বাঁশি বাজায় রেফারি।

ভিএআর চেক করেই আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি দেন স্লোভেনিয়ার এই রেফারি। মেসি কর্ণার কিক নেওয়ার সময় সৌদির ডিফেন্ডার বুলাইয়াহি ডি-বক্সের মধ্যে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফেলে দেন। আর তাতে পেনাল্টি পেয়ে সেখান থেকে সহজ গোলে দলকে এগিয়ে দেন মেসি।

বিশ্বকাপের মঞ্চে এটি মেসির ৭ম গোল। আর ৪টি গোল পেলেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হবেন সাত বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা। আর্জেন্টিনার ইতিহাসে দ্বিতীয় বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে গোল পেলেন মেসি।

এরপর আরেকবার সৌদির জালে বল জড়ান এই তারকা। ২২তম মিনিটে মেসি বল জালে জড়ালেও লাইন্সম্যান ফ্ল্যাগ তুললে হতাশায় ভাসতে হয় আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। কারণ, অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।

এর ঠিক ৭ মিনিট পর আবারও বল জালে জড়ায় লে আলবিসেলেস্তেরা। এবার বল জালে জড়ায় লাউতারো মার্টিনেজ। তবে নতুন যোগ হওয়া প্রযুক্তিতে দেখা যায়, এই আর্জেন্টাইনের একটি হাত সৌদি ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে ছিল। আর তাই আক্ষেপে পুড়তে হয় মার্টিনেজকে, সঙ্গে আর্জেন্টিনাকেও।

ঠিক ৫ মিনিট পর আবারও একই আক্ষেপ সঙ্গী হয় মার্টিনেজের। ফ্রন্টলাইনে থেকে মেসি এই স্ট্রাইকারের উদ্দেশ্যে সহজ বল বাড়িয়ে দেন। তবে গোলের জন্য মরিয়া মার্টিনেজ একটু দ্রুত দৌড় দেয়ায় আবারও অফসাইডের ফাঁদে পড়েন।

এদিকে, বিরতির পর মাঠে নেমে তিন মিনিটের মধ্যেই আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ায় সৌদি। খেলার ৪৮তম মিনিটে আলবিরাকানের অ্যাসিস্টে সৌদিকে ম্যাচে সমতায় ফেরান আল শেহরি। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরে দুর্দান্ত, দর্শনীয় এক গোল দিয়ে সৌদিকে এগিয়ে দেন আল দাউসারি।

এরপর আক্রমণের ধার বাড়ায় আর্জেন্টাইনরা। তবে সৌদির গোলরক্ষক এবং ডিফেন্সে হতাশ হতে হয় আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। ৬৩তম মিনিটে মার্টিনেজের দারুণ এক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন সৌদি গোলরক্ষক আল ওয়াইস। আরবীয় এই গোলরক্ষক ম্যাচের বাকি সময় যেন আর্জেন্টিনার জন্য মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। যতভাবেই আক্রমণ করুক না কেন ওয়াইস দুর্গ জয় করতেই পারেনি আর্জেন্টিনা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

উড়ন্ত আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামাল সৌদি

Update Time : ০৭:১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২

স্পোর্টস ডেস্কঃ

বিশ্বকাপে মাঠে নেমেই গোল করলেন মেসি, গড়লেন রেকর্ডও। তবে বিরতির পর বাজিমাত করল সৌদি আরব। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল দিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেয় দলটি। সঙ্গে ২-১ ব্যবধানের দুর্দান্ত জয় নিয়ে রেকর্ডও গড়ে তারা।

এর আগে প্রথমার্ধেই চারবার বল জালে পাঠায় মেসি-মার্টিনেজরা। তবে মেসির পেনাল্টি ছাড়া অফসাইডের কারণে বাদ হয়ে যায় বাকি তিনটিই। যাতে হতাশ হয়ে পড়া আর্জেন্টাইনরা শত চেষ্টা করেও আর ভাঙতে পারেনি সৌদির দুর্গ।

দুর্দান্ত সব শট সেভ করে সৌদির জয়ের নায়ক মূলত গোলরক্ষক আল ওয়াইস।

মঙ্গলবার বিকেলে লুসাইল স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে র‌্যাংকিংয়ের তিনে থাকা আর্জেন্টিনাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ৫১তম স্থানে থাকা সৌদি আরব। আলবেসিলেস্তেদের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় এশিয়ার দলটির।

একইসঙ্গে আর্জেন্টিনার টানা ৩৬ ম্যাচের অপরাজিত থাকার দৌড় থামিয়ে দেয় তারা। এর আগে চারবারের দেখায় ২ হার ও ২ ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে সৌদি আরব।

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে সৌদির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা যখন মাঠে নামে, তখন ইতালির রেকর্ড নিয়ে গবেষণা করছিল সকলেই। সৌদিকে হারিয়ে ইতালির পর আর্জেন্টিনাও টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিজেদের করে নেবে- এমনটাই ধরে নিয়েছিল সবাই।

তবে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিতেই যেন প্রস্তুত ছিল লুসাইল স্টেডিয়াম। আর তাইতো প্রথমার্ধে চার বার বল জালে জড়িয়েও আর্জেন্টিনা মোটে গোল পেল ১টি। সেটাও আবার ভিএআর প্রযুক্তিতে পেনাল্টি পেয়ে।

অন্যদিকে প্রথমার্ধে সৌদি আরব ছিল সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে। কোনো আক্রমণ তো দূরে থাক ডিফেন্সটাও ঠিকমতো করতে পারছিল না আরবের দেশটি। অথচ বিরতি থেকে ফিরে রীতিমতো আগুনে ফুটবল উপহার দিতে থাকে সবুজ জার্সিধারীরা।

টানা ৫ মিনিটে দুই গোল দিয়ে আর্জেন্টাইনদের চেয়ে এগিয়ে যায় দলটি। সেই লিড টানা ৪৫ মিনিট ধরে রেখে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয় আরবীয়রা।

লুসাইলে এদিন অবশ্য শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে আর্জেন্টাইনরা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ১২ গজ দূর থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক আল ওয়াইস। বাম প্রান্ত দিয়ে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে বল পাস দেন লাউতারো মার্টিনেজকে। তবে তিনি বল গোলমুখে রাখতে ব্যর্থ হন। সেই মুহূর্তে পেছন থেকে এসে শটটি নেন মেসি।

এরপর আবারও আক্রমণে সৌদিয়ানদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখে আর্জেন্টিনা। এরমধ্যে খেলার ৮ম মিনিটে কর্ণার পায় লা আলবিসেলেস্তেরা। সেখান থেকে বল আর্জেন্টাইনদের পায়ে থাকতেই আচমকা বাঁশি বাজায় রেফারি।

ভিএআর চেক করেই আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি দেন স্লোভেনিয়ার এই রেফারি। মেসি কর্ণার কিক নেওয়ার সময় সৌদির ডিফেন্ডার বুলাইয়াহি ডি-বক্সের মধ্যে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফেলে দেন। আর তাতে পেনাল্টি পেয়ে সেখান থেকে সহজ গোলে দলকে এগিয়ে দেন মেসি।

বিশ্বকাপের মঞ্চে এটি মেসির ৭ম গোল। আর ৪টি গোল পেলেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হবেন সাত বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা। আর্জেন্টিনার ইতিহাসে দ্বিতীয় বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে গোল পেলেন মেসি।

এরপর আরেকবার সৌদির জালে বল জড়ান এই তারকা। ২২তম মিনিটে মেসি বল জালে জড়ালেও লাইন্সম্যান ফ্ল্যাগ তুললে হতাশায় ভাসতে হয় আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। কারণ, অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।

এর ঠিক ৭ মিনিট পর আবারও বল জালে জড়ায় লে আলবিসেলেস্তেরা। এবার বল জালে জড়ায় লাউতারো মার্টিনেজ। তবে নতুন যোগ হওয়া প্রযুক্তিতে দেখা যায়, এই আর্জেন্টাইনের একটি হাত সৌদি ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে ছিল। আর তাই আক্ষেপে পুড়তে হয় মার্টিনেজকে, সঙ্গে আর্জেন্টিনাকেও।

ঠিক ৫ মিনিট পর আবারও একই আক্ষেপ সঙ্গী হয় মার্টিনেজের। ফ্রন্টলাইনে থেকে মেসি এই স্ট্রাইকারের উদ্দেশ্যে সহজ বল বাড়িয়ে দেন। তবে গোলের জন্য মরিয়া মার্টিনেজ একটু দ্রুত দৌড় দেয়ায় আবারও অফসাইডের ফাঁদে পড়েন।

এদিকে, বিরতির পর মাঠে নেমে তিন মিনিটের মধ্যেই আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ায় সৌদি। খেলার ৪৮তম মিনিটে আলবিরাকানের অ্যাসিস্টে সৌদিকে ম্যাচে সমতায় ফেরান আল শেহরি। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরে দুর্দান্ত, দর্শনীয় এক গোল দিয়ে সৌদিকে এগিয়ে দেন আল দাউসারি।

এরপর আক্রমণের ধার বাড়ায় আর্জেন্টাইনরা। তবে সৌদির গোলরক্ষক এবং ডিফেন্সে হতাশ হতে হয় আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। ৬৩তম মিনিটে মার্টিনেজের দারুণ এক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন সৌদি গোলরক্ষক আল ওয়াইস। আরবীয় এই গোলরক্ষক ম্যাচের বাকি সময় যেন আর্জেন্টিনার জন্য মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। যতভাবেই আক্রমণ করুক না কেন ওয়াইস দুর্গ জয় করতেই পারেনি আর্জেন্টিনা।