যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সংঙ্গে সংলাপে

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

  • Update Time : ১০:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / 18

মোঃ সাইফুদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে কোনোভাবে অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করেছে বলে জানিয়েছে দলটির আমির মুফতি রেজাউল করিম। সেই সাথে জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ড জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিও জানান তারা।

শনিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘এই দেশে ৫ আগস্ট হয়েছে বহু রক্তের বিনিময়ে, আপনারাতো জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতেছেন। আপনাদের তো কোনো দুর্বলতা নেই, তাহলে কেন যারা নাকি খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী তারা কিভাবে দেশ থেকে পালালো এটা আমাদের বোধগম্য না। এতে আপনাদের দুর্বলতায় প্রকাশ পেতে চায়। বিধায় আপনারা খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারীদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিবেন।’

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী ফ্যাসিস্টরা যেন বাংলাদেশে নির্বাচন করার সুযোগ না পায়। এছাড়া ৬ কমিশনের পরেও দেশ সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আরও কমিশন বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ হতে সংস্কার কমিশনের প্রতি কতিপয় লিখিত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করেন।

০১। নির্বাচন সংস্কার:

ক) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। খ) আরপিও এর সর্বশেষ সংশোধনী বাদ দিয়ে আরপিও পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গ) ইসি নিয়োগে সাবেক বিচারপতি, আমলা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে উলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করা। ঘ) সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ইসি নিযোগ দেয়া। ইসি’র কার্যক্রম জবাবদিহীতার আওতায় আনা। ঙ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতায় মোতায়েন রাখা। চ) দুর্গম না হলে ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো। ছ) ব্যালটে নির্বাচন হওয়া। আপাতত ইভিএম-এ নয়। জ) সম্পদ পাচারকারী ও দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে যে কোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

০২। পুলিশ সংস্কার:

ক) পুলিশ সংক্রান্ত উপনিবেশন আমলের সকল আইন বাতিল করা এবং পুলিশের ব্রিটিশ লিগ্যাসি বাদ দেয়া। কারণ তা ছিলো নিপীড়ক ধরণের বাহিনী। খ) দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র বিবেচনা করে সেবা জনসহায়ক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। গ) অজ্ঞাত সংখ্যায় আসামী দিয়ে মামলা করার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। ঘ) রাত্রিকালীন টহল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টহলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবেশদ্বার গুলোতে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ।

০৩। বিচার বিভাগ:

ক) উপনিবেশিক লিগ্যাসি ও আইন বাদ দেয়া। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহকে গ্রহণ করা গ) উচ্চ আদালতে আলাদা শরিয়া বেঞ্চ গঠন করা। ঘ) বিচারপ্রার্থীর শরিয়া আইনে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

০৪। দূর্নীতি দমন:

ক) দুদককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা। খ) দুদক কমিশনার হিসেবে উলামা, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়োগ করা। গ) দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আলাদা আদালত স্থাপন করা। ঘ) বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার সক্ষমতা ক্সতরী করা।

০৫। প্রশাসন সংস্কার:

ক) উপনিবেশিক ধারাবাহিকতার আমলাতন্ত্র আমূল বদলে দেয়া। পদবিন্যাস, পদবীর নাম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা। খ) বর্তমান প্রশাসন নির্দেশনা ও পদ্ধতি নির্ভর, সেখান থেকে সরে এসে কর্ম ও প্রকল্প কেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করা। গ) ইসলামের ধারণা এবং সংবিধানের মর্ম মতে জনপ্রশাসন জনতার সেবক। কিন্তু নাম হলো “প্রশাসন”। এখান থেকে সরে আসতে হবে। ঘ) প্রশাসনের সর্বস্থরকে দূর্নীতি মুক্ত করা এবং দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা। ঙ) চিহ্নিত দলবাজ, বিতর্কিত ও দূর্নীতিবাজ সচিবদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা।

০৬। সংবিধান সংস্কার:

ক) আওয়ামী আমলের সংশোধনীগুলো বাতিল করা। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহ-র প্রধান্য নিশ্চিত করা। গ) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ঘ) দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকারের প্রধান না হওয়া। ঙ) বর্তমান সংবিধানে ধারা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। চ) ন্যায়পাল কার্যকর করা, এবং তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিধানকে ভিত্তি হিসেবে রাখা। ছ) সংবিধান সংস্কার কমিটিতে উলামাদের থেকে একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা। জ) সংস্কার অবশ্যই গণভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ঝ) সংবিধানে ইসলামের মৌলিকত্ব লংঘন হয় এমন কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ঞ) দেশের যুব চরিত্র নস্ট করে এমন কোনো উপাদান (যে কোনো মদ বা মাদকতা সৃষ্টিকারী উপাদান) বা আচরণের (পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল চলচ্চিত্র, জুয়া ইত্যাদির) ক্সবধতা সম্বলিত কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ট) নারী ও শিশু পাচার বন্ধে এবং অসহায় নারীদের সুস্থধারায় পুর্নবাসনের সুস্পষ্ট ধারা-বিধান থাকতে হবে।

০৭। শিক্ষা কমিশন সংস্কার:

ক) নীতি -নৈতিকতা, সুঅভ্যাস- সুআচরন ও দেশপ্রেম গড়ে উঠে এমন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরী করতে হবে। খ) দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিগত সোয়া দুইশত বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। গ) এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। ঘ) সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঙ) অনৈতিক আচরণে দোষী ব্যক্তিদের শিক্ষাঙ্গনে অনুপযুক্ত ঘোষণা করতে হবে। চ) গতানুগতিক বৃটিশ প্রবর্তিত লেজুরবৃত্তিক চাকুরীজীবি ক্সতরির শিক্ষা ব্যবস্থা হতে বের হয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশের প্রবীণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ আলেম ও দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছ) প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী ও ক্সনতিকতা সমৃদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তৃতীয় দফায় সংলাপ করতে বিএনপি ও জামায়াতের পর বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আসেন গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতারা।

পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম ও গণ অধিকার পরিষদসহ বাকি রাজনৈতিক দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে কোনভাবে অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে প্রধান উদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। সেই সাথে জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ড জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিও জানান তারা।

বিকেলে ৫টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় বৈঠক। পরে বৈঠক শেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি গার্মেন্টস খাতের অস্থিরতা তুলে ধরা হয়েছে। ফ্যাসিবাদ সরকার যাতে ফিরতে না পারে সেটিরও আহবান জানানো হয়েছে।

নির্বাচনের রোড ম্যাপ চেয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গনঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামি দল। তবে, নির্বাচনের আগে সংস্কারের পাশাপাশি পোশাক শিল্পখাত ও জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে জোড় দেয়ার আহবান তাদের। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপে এ আহ্বান জানান তারা।

তারা জানান, রাজনৈতিক দল গুলো সাথে সরকারের নিয়মিত বৈঠকের জন্য একটি কাঠামো তৈরির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এদিকে আজকের সংলাপে ছিলো না জাতীয় পার্টি।

Please Share This Post in Your Social Media

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সংঙ্গে সংলাপে

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

Update Time : ১০:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

মোঃ সাইফুদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে কোনোভাবে অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করেছে বলে জানিয়েছে দলটির আমির মুফতি রেজাউল করিম। সেই সাথে জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ড জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিও জানান তারা।

শনিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘এই দেশে ৫ আগস্ট হয়েছে বহু রক্তের বিনিময়ে, আপনারাতো জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতেছেন। আপনাদের তো কোনো দুর্বলতা নেই, তাহলে কেন যারা নাকি খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী তারা কিভাবে দেশ থেকে পালালো এটা আমাদের বোধগম্য না। এতে আপনাদের দুর্বলতায় প্রকাশ পেতে চায়। বিধায় আপনারা খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারীদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিবেন।’

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘খুনি, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী ফ্যাসিস্টরা যেন বাংলাদেশে নির্বাচন করার সুযোগ না পায়। এছাড়া ৬ কমিশনের পরেও দেশ সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আরও কমিশন বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ হতে সংস্কার কমিশনের প্রতি কতিপয় লিখিত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করেন।

০১। নির্বাচন সংস্কার:

ক) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। খ) আরপিও এর সর্বশেষ সংশোধনী বাদ দিয়ে আরপিও পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গ) ইসি নিয়োগে সাবেক বিচারপতি, আমলা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে উলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করা। ঘ) সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ইসি নিযোগ দেয়া। ইসি’র কার্যক্রম জবাবদিহীতার আওতায় আনা। ঙ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতায় মোতায়েন রাখা। চ) দুর্গম না হলে ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো। ছ) ব্যালটে নির্বাচন হওয়া। আপাতত ইভিএম-এ নয়। জ) সম্পদ পাচারকারী ও দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে যে কোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

০২। পুলিশ সংস্কার:

ক) পুলিশ সংক্রান্ত উপনিবেশন আমলের সকল আইন বাতিল করা এবং পুলিশের ব্রিটিশ লিগ্যাসি বাদ দেয়া। কারণ তা ছিলো নিপীড়ক ধরণের বাহিনী। খ) দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র বিবেচনা করে সেবা জনসহায়ক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। গ) অজ্ঞাত সংখ্যায় আসামী দিয়ে মামলা করার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। ঘ) রাত্রিকালীন টহল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টহলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবেশদ্বার গুলোতে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ।

০৩। বিচার বিভাগ:

ক) উপনিবেশিক লিগ্যাসি ও আইন বাদ দেয়া। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহকে গ্রহণ করা গ) উচ্চ আদালতে আলাদা শরিয়া বেঞ্চ গঠন করা। ঘ) বিচারপ্রার্থীর শরিয়া আইনে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

০৪। দূর্নীতি দমন:

ক) দুদককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা। খ) দুদক কমিশনার হিসেবে উলামা, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়োগ করা। গ) দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আলাদা আদালত স্থাপন করা। ঘ) বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার সক্ষমতা ক্সতরী করা।

০৫। প্রশাসন সংস্কার:

ক) উপনিবেশিক ধারাবাহিকতার আমলাতন্ত্র আমূল বদলে দেয়া। পদবিন্যাস, পদবীর নাম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা। খ) বর্তমান প্রশাসন নির্দেশনা ও পদ্ধতি নির্ভর, সেখান থেকে সরে এসে কর্ম ও প্রকল্প কেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করা। গ) ইসলামের ধারণা এবং সংবিধানের মর্ম মতে জনপ্রশাসন জনতার সেবক। কিন্তু নাম হলো “প্রশাসন”। এখান থেকে সরে আসতে হবে। ঘ) প্রশাসনের সর্বস্থরকে দূর্নীতি মুক্ত করা এবং দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা। ঙ) চিহ্নিত দলবাজ, বিতর্কিত ও দূর্নীতিবাজ সচিবদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা।

০৬। সংবিধান সংস্কার:

ক) আওয়ামী আমলের সংশোধনীগুলো বাতিল করা। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহ-র প্রধান্য নিশ্চিত করা। গ) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ঘ) দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকারের প্রধান না হওয়া। ঙ) বর্তমান সংবিধানে ধারা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। চ) ন্যায়পাল কার্যকর করা, এবং তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিধানকে ভিত্তি হিসেবে রাখা। ছ) সংবিধান সংস্কার কমিটিতে উলামাদের থেকে একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা। জ) সংস্কার অবশ্যই গণভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ঝ) সংবিধানে ইসলামের মৌলিকত্ব লংঘন হয় এমন কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ঞ) দেশের যুব চরিত্র নস্ট করে এমন কোনো উপাদান (যে কোনো মদ বা মাদকতা সৃষ্টিকারী উপাদান) বা আচরণের (পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল চলচ্চিত্র, জুয়া ইত্যাদির) ক্সবধতা সম্বলিত কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ট) নারী ও শিশু পাচার বন্ধে এবং অসহায় নারীদের সুস্থধারায় পুর্নবাসনের সুস্পষ্ট ধারা-বিধান থাকতে হবে।

০৭। শিক্ষা কমিশন সংস্কার:

ক) নীতি -নৈতিকতা, সুঅভ্যাস- সুআচরন ও দেশপ্রেম গড়ে উঠে এমন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরী করতে হবে। খ) দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিগত সোয়া দুইশত বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। গ) এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। ঘ) সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঙ) অনৈতিক আচরণে দোষী ব্যক্তিদের শিক্ষাঙ্গনে অনুপযুক্ত ঘোষণা করতে হবে। চ) গতানুগতিক বৃটিশ প্রবর্তিত লেজুরবৃত্তিক চাকুরীজীবি ক্সতরির শিক্ষা ব্যবস্থা হতে বের হয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশের প্রবীণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ আলেম ও দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছ) প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী ও ক্সনতিকতা সমৃদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তৃতীয় দফায় সংলাপ করতে বিএনপি ও জামায়াতের পর বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আসেন গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতারা।

পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম ও গণ অধিকার পরিষদসহ বাকি রাজনৈতিক দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে কোনভাবে অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে প্রধান উদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। সেই সাথে জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ড জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিও জানান তারা।

বিকেলে ৫টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় বৈঠক। পরে বৈঠক শেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি গার্মেন্টস খাতের অস্থিরতা তুলে ধরা হয়েছে। ফ্যাসিবাদ সরকার যাতে ফিরতে না পারে সেটিরও আহবান জানানো হয়েছে।

নির্বাচনের রোড ম্যাপ চেয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গনঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামি দল। তবে, নির্বাচনের আগে সংস্কারের পাশাপাশি পোশাক শিল্পখাত ও জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে জোড় দেয়ার আহবান তাদের। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপে এ আহ্বান জানান তারা।

তারা জানান, রাজনৈতিক দল গুলো সাথে সরকারের নিয়মিত বৈঠকের জন্য একটি কাঠামো তৈরির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এদিকে আজকের সংলাপে ছিলো না জাতীয় পার্টি।