অভিজিৎ হত্যার রায় আজ: ৬ আসামির ফাঁসি চায় রাষ্ট্রপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ১৭৫ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তের হাতে খুন হয়েছিলেন লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায়। প্রায় ছয় বছর পর সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত আজ দুপুরে এ রায় ঘোষণা করবেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ঠিক করে দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধানসহ মামলার ছয় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলার আসামিরা হলেন— আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সাবেক মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল (সাংগঠনিক নাম সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান, সাংগঠনিক নাম সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস), শফিউর রহমান ফারাবি ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহ। ছয় আসামির মধ্যে মেজর জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন পলাতক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যার মামলাতে কোনো ধরনের ত্রুটি নেই। এই হত্যাকাণ্ডে ছয় আসামি জড়িত ছিল, তা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তুলে ধরেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’

তিনি বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের একেকজনের ভূমিকা একেকরকম। ফারাবীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। মামলাতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি, যুক্তি-তর্ক ও মামলার অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে গেছে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলামের দাবি, মামলাটিতে শুরু থেকেই অনেক ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকে তদন্ত, অভিযোগপত্র তৈরি, অভিযোগ গঠন ও বিচারিক পর্যায়ে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। এ মামলার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী (আই উইটনেস) নেই। এ ঘটনার কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দেননি। কেবল তদন্ত কর্মকর্তা যা শুনেছেন, তাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিতও ছিলেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ফর্মাল সাক্ষী বলা যায় মাত্র। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবে।

এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায়। সেদিন তিনি বলেন, আমরা আশা করব নিরপরাধ কেউ শাস্তি পাবে না, কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে। আমাদের চাওয়া একটাই— অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারীরা যেন সাজা পায়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

২০১৯ সালের ১ আগস্ট মাসে পলাতক ও সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২১ জানুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি কারাগারে থাকা চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। দুই আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেননি। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর মামলাটির রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

অভিজিৎ হত্যার রায় আজ: ৬ আসামির ফাঁসি চায় রাষ্ট্রপক্ষ

Update Time : ০১:০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তের হাতে খুন হয়েছিলেন লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায়। প্রায় ছয় বছর পর সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত আজ দুপুরে এ রায় ঘোষণা করবেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ঠিক করে দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধানসহ মামলার ছয় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলার আসামিরা হলেন— আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সাবেক মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল (সাংগঠনিক নাম সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান, সাংগঠনিক নাম সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস), শফিউর রহমান ফারাবি ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহ। ছয় আসামির মধ্যে মেজর জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন পলাতক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যার মামলাতে কোনো ধরনের ত্রুটি নেই। এই হত্যাকাণ্ডে ছয় আসামি জড়িত ছিল, তা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তুলে ধরেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’

তিনি বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের একেকজনের ভূমিকা একেকরকম। ফারাবীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। মামলাতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি, যুক্তি-তর্ক ও মামলার অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে গেছে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলামের দাবি, মামলাটিতে শুরু থেকেই অনেক ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকে তদন্ত, অভিযোগপত্র তৈরি, অভিযোগ গঠন ও বিচারিক পর্যায়ে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। এ মামলার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী (আই উইটনেস) নেই। এ ঘটনার কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দেননি। কেবল তদন্ত কর্মকর্তা যা শুনেছেন, তাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিতও ছিলেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ফর্মাল সাক্ষী বলা যায় মাত্র। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবে।

এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায়। সেদিন তিনি বলেন, আমরা আশা করব নিরপরাধ কেউ শাস্তি পাবে না, কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে। আমাদের চাওয়া একটাই— অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারীরা যেন সাজা পায়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

২০১৯ সালের ১ আগস্ট মাসে পলাতক ও সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২১ জানুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি কারাগারে থাকা চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। দুই আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেননি। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর মামলাটির রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।