অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্নাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটাই ঢাবির জন্মগত বৈশিষ্ট্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৮:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১
  • / ২৬২ Time View

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, – “কী ভাবছেন তাঁরা ?” 

এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্র সংসদের (সাবেক) সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুনেম শাহারিয়ার মুন।  সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : যখন জানতে পারলেন আপনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, কেমন অনুভূতি হয়েছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : এটা আসলেই অনেক ভালোলাগার একটা অনুভূতি ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আমার স্কুল জীবন, কলেজ জীবন থেকেই চেষ্টা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম গুলো ফলো-আপের মধ্যে রাখার। আমার চেষ্টা, ভাগ্যের সহায়তা সবকিছু মিলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

মুনেম শাহারিয়ার মুন
মুনেম শাহারিয়ার মুন

আর লড়াই-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সকল কিছু যে জায়গাটাতে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে সে জায়গাতে আসা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার এবং আমি আমার জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলবাদবিরোধী চেতনার যে সুর, সেই সুরে সুর মিলাতে পারছি, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারছি এবং ছাত্ররাজনীতিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি এগুলো আমার জন্য ভাগ্যের বিষয় এবং এ জায়গায় আসা সত্যিই  অনেক আনন্দের।

জাননাহ : বিচিত্র ধরনের স্বপ্ন নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা আসে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রথম বর্ষ থেকে আপনার কী ধরনের স্বপ্ন ছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : স্বপ্নাতুর চোখ নিয়েই সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে বলে আমি মনে করি এবং আমারও নিজস্ব কিছু স্বপ্ন ছিল। আমি বলব না যে স্বপ্নগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। স্বপ্ন হচ্ছে ধারণ করার বিষয়। আমি মনে করি, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছি সে জায়গা থেকে আমি ছিটকে যাই নি এবং সেই স্বপ্নের যে রোডম্যাপ সেই রোডম্যাপের মধ্যেই আমি আছি।

আমার স্বপ্ন ছিল- সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি আমি উপলব্ধি করতাম, বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে একজন তরুণ প্রজন্মের সন্তান হিসেবে আমি আমার পরিসর থেকে নিজেকে কতটুকু দেশের জন্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, আমার সমাজ,রাষ্ট্র পরিবেশকে কতটুকু দিতে পারছি এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল এবং আমার কাছে মনে হয়, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি সেই স্বপ্নের রোডম্যাপের মধ্যেই আমি আমার পথ চলতে পারছি।

জাননাহ : শততম বর্ষে পদার্পণ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। প্রথম বর্ষে ভর্তির পর আপনার আবাসন ব্যবস্থা কী রকম ছিল ? আপনাকেও কী গণরুমে থাকতে হয়েছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : হ্যাঁ, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ কালের একটি ব্যবস্থা – গণরুম, যেটি আসলে সত্যিকার অর্থেই খুবই দুঃখজনক । এবং আমি নিজেও গণরুমের একজন শিক্ষার্থী ছিলাম। গণরুম থেকেই আজকে আমার উঠে আসা।

তবে আমি যেটি বলতে চাচ্ছি,  গণরুমের বিষয়টি, এটি আমরা যে একান্তভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করি,  স্রেফ এটা আসলে দোষারোপের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়৷ এটি নিরসনের জন্য আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছাটাই মুখ্য। প্রশাসনের যদি সদিচ্ছা  থাকে তাহলে গণরুমে প্রথম বর্ষেই আমাদের শিক্ষার্থীদের যে দুর্ভোগ, ভোগান্তি সেটি নিরসন করা সম্ভব

এই কারনেই সম্ভব যে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার সপক্ষের দল,১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, উনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করেন, উনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে বিভিন্ন ধরনের লড়াই-সংগ্রামে তাঁর পদচারণা ছিল, সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সরকারের সাথে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে দাবি-দাওয়া গুলো সঠিকভাবে উত্থাপন করতো, তাহলে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসতো।  এজন্য আমি মনে করি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতিটাই প্রধান এবং মুখ্য কারণ

জাননাহ : তাহলে, একসময়ের গণরুমের বাসিন্দা এবং বর্তমানে স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে, গেস্টরুম কালচার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : গেস্টরুম কালচার, এটি আসলে অতিথি কক্ষ। গেস্টরুম বলতে যা আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বুঝি সেটা হলো অতিথি কক্ষ। এই অতিথি কক্ষের মধ্যে আমরা তথাকথিত যে কালচারের মধ্যে দিয়ে যাই, এই কালচারটা – আমি আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলবো, একে খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই !

এই কারণেই বলছি সু্যোগ নেই, এই গেস্টরুম কালচারের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজনের মাধ্যমে, নতুন ইনোভেটিভ কাজকর্ম বা জুনিয়রদের সাথে ইন্ট্রোডাকশন বা সার্বিকভাবে সিনিয়র-জুনিয়রের যে মেলবন্ধন এটা মূলত গেস্টরুম থেকেই তৈরি হয়

তবে ঐ যে বললাম,অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন, আমাদের ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সর্বদাই ঘটে থাকে। এরকম কিছু গেস্টরুম কেন্দ্রিক ঘটনা আমরা বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে শুনতে পাই। তবে আমার ব্যাক্তিগত চাওয়া গেস্টরুম কালচারকে আমরা যেভাবে নেগেটিভ একটা মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করি, বা রাজনৈতিক জায়গা থেকে যে মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করি,  এর বাহিরেও আমি মনে করি যে গেস্টরুম,  তথাকথিত যে গেস্টরুম সেই গেস্টরুমের কথা বলছি না,  আমাদের মেলবন্ধনের যে গেস্টরুম সেই গেস্টরুমের একটি সুদূরপ্রসারী ভালো প্রভাব রয়েছে।

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন । নির্বাচিত ডাকসু কমিটি কতটা সফল বলে আপনার মনে হয়েছে?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : অবশ্যই সফল বলে আমি মনে করি। দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে এবং শুধু কেন্দ্রীয় ডাকসু’র সফলতা নিয়ে কথা বললেই হবে না, আমাদের হলগুলোতে যে ধরনের কাজ হয়েছে, আমি আমার এফ রহমান হলে দায়িত্ব প্রাপ্ত পদে (সাংস্কৃতিক সম্পাদক) থেকে যতটুকু কাজ করেছি, আপনি সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজগুলো যদি লক্ষ্য করে থাকেন যে ডাকসুতে কালচারাল অনেক প্রোগ্রাম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু সংস্কৃতি চর্চার একটা মূল কেন্দ্রবিন্দু। সেই জায়গা থেকে আমাদের বিগত সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি আবৃত্তি থেকে শুরু করে বাঙালির যে ঐতিহ্য ধারণ করার ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল সেটা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা আমাদের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু সংস্কৃতির বিপ্লব হয়েছে তা বলব না, ডাকসুর প্রত্যেক প্রতিনিধি তাদের নিজ জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদা, আকাঙ্খা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে দর কষাকষির মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন। আমাদের কিছু জায়গায় প্রতিবন্ধকতা ছিল যেগুলি আমি মনে করি যে ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচন যথাযথ ভাবে ক্যালেন্ডার অনুসারে হলে আমরা এই প্রতিবন্ধকতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে পারবো।

আমি মনে করি, ডাকসু ২০১৯ সালের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন পুরোপুরি সফল হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ও ডাকসু নির্বাচন যদি নিয়মিত ভাবে হতে থাকে তাহলে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে আমরা একটি সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে রূপান্তর করতে পারবে।

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করেছে শততম বর্ষে। ১০০ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন, তার কতটুকু প্রতিফলন বাস্তবে লক্ষ্য করছেন?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির পরিধি আসলে বিশাল। আমি মনে করি, বোধগম্যতার মানচিত্র সৃষ্টি, মানবিক বিবেকবোধ জাগ্রত করা, অন্যায়-অবিচার-নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রশ্নাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। তবে আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি-অগ্রগতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল, যেটি আমরা নিয়ে যেতে পারি নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যাক্তি কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের হৃদয়

একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ বছর অতিবাহিত করছে, কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় আমরা আমাদের নিজেদের মাতৃভাষায় আমাদের পড়াশোনার চর্চা এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারি নি।  আমাদের বইগুলো যে মাধ্যমে পড়ানো হয় -ইংরেজী মাধ্যম,আমি মনে করি যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষায় যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবো অন্য মাধ্যমে তার চেয়ে অনেক বেশি  সময় ব্যয় হয়। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় একশ বছর পার হওয়ার পরও প্রধান যে বইগুলো সেগুলো এখনও অনুবাদ হয় নি, যা অনেক দুঃখের বিষয়।

এরপরে শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের অতীতে আমরা যে মধুরতম সম্পর্ক দেখতে পেয়েছি, সেই জায়গায় এখন অনেকটাই রাজনৈতিক সম্পর্ক। ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে সুমধুর সম্পর্ক থাকার কথা ছিল,কোনো একটি পর্দার আড়ালে সেটি এখন রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ খেলার মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়

আরেকটি কথা বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ বা প্রশাসনিক যে কার্যক্রম এই কার্যক্রমগুলোকে আমরা এখনও পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করতে পারি নি। এবং আমরা প্রতিনিয়ত পত্রিকা বা বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে দেখতে পাই শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে ৷

তবে আমি মনে করি সবকিছুকে ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যে নিজস্ব জায়গা সে জায়গা থেকে কখনও বিচ্যুত হয় নি। আমরা দেখেছি ছাত্র রাজনীতির সর্বশ্রেষ্ঠ যে জায়গা, যেখান থেকে সকল রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের সূচনা হয় সে জায়গাটিতে আমার কাছে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একই রূপে অবস্থান করছে।

জাননাহ : ক্ষমতাসীল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ক্যাম্পাসে  পূর্ণাঙ্গরূপে ক্রিয়াশীল। কিন্তু নেই তেমন কোনো বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতি। আর হলগুলোতে তাদের অবস্থান করতে না পারার পেছনে তারা বরাবরের মতোই ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগকে দোষারোপ করে আসছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : দেখুন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হলেও ছাত্রসংগঠন কখনোই ক্ষমতাসীন হয় না।  ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের কথা বলা, ছাত্রদের কথা বলা, মানুষের কথা বলা।

আর ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যা আমাদের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়। আর অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো যে দোষারোপ করছে, এটি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কে শাক দিয়ে মাছ ঢাকবার একটা বৃথা চেষ্টা বলেই আমি মনে করি৷

জাননাহ : অর্থাৎ ছাত্রলীগের উপর যে দায় চাপানো হচ্ছে, সেটি আপনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : কোনো ক্ষেত্রে সত্যতার বিষয় থাকলে, অস্বীকার শব্দটি ব্যবহার করাই যায়। আর আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার নিজের আদর্শিক রাজনীতি টাই চর্চা করে।

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পিছনের উদ্দেশ্য কী বলে আপনার মনে হয় ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : দেখুন ২০১৯ সালে আমাদের ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর,  তাকে আসলে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তার ১ বছর মেয়াদ কালীন সময়ে তার আসল চরিত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুখোশ খুলে উন্মোচিত হয়েছে। তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে, তিনি যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন সেটির কার্যক্রমের উপর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সুনজর রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তাহলেই তার চিন্তাধারা, তার এজেন্ডা, তার কার্যক্রম আমরা খুব সহজেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো।

জাননাহ : একশ বছর পরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী বলে আপনার মনে হয় ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : শতবর্ষে এসেও আমরা, আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় জায়গায় আমাদের নৈতিকতা, আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এবং আমাদের পারস্পরিক যে সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধাবোধ এই জায়গাটিতে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে আমি মনে করি।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষে এসেও আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম মাতৃভাষায় পরিচালনা করতে পারছি না, আমার দৃষ্টিতে এটিকেই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে হয়

জাননাহ : আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা। স্যার এ এফ রহমান ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হলে কী কী উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিবেন বলে ঠিক করেছেন ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : আমরা অনেকেই বর্তমানে ক্যান্ডিডেট অবস্থায় আছি। যদি আমি এফ রহমান ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমার ব্যাক্তিগত জায়গা থেকে কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে।

ইতিঃপূর্বে ডাকসু তে দায়িত্ব পালনকালীন আমাদের গণরুমে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্যানের বরাদ্দ চেয়ে প্রভোস্ট মহোদয় বরাবর বিশেষ ভাবে আবেদন করেছিলাম ; যার প্রেক্ষিতে প্রত্যেক গণরুমে ২ টি করে ফ্যান লাগানো হয়৷ এছাড়া আমাদের মেস এর খুবই দুরবস্থা ছিল। পরবর্তী সময়ে আমি মেসের দায়িত্বও নিয়েছিলাম। মেসের সার্বিক উন্ননয়নের ফলে আগে যেখানে ২৪০ জনের মতো মেস এ খেত, এখন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জনের মতো খাওয়া-দাওয়া করছে।

এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে মশার ঔষধ স্প্রে করা,  রিডিং রুম গুলোরে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা এ সব আমরা করেছি।

এফ রহমান হলে সাংস্কৃতিক যে কর্মকাণ্ড গুলো আছে সেগুলোকে আর ও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়া যায় কি না,  এটি আমার ভাবনা-চিন্তার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে মানসিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য সাইকোলজিস্ট থাকা উচিত

ইদানীং অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা খবর আমাদের কানে আসে। আমার হলেও ‘তরুন’ নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাই  আমি ডাকসু তে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকাকালীন সময়েও প্রতি সপ্তাহে, সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে (মানসিক স্বাস্থ্যের উপর)একটি করে সেশন পরিচালনা করে আসছিলাম, যেটি এখন বন্ধ আছে। এই প্রোগামটি আবারও শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে।

আর ছাত্রলীগের রাজনীতির যে আদর্শিক চিন্তাধারা রয়েছে সেটিকে, আমার হলের পরিসরে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে, তারা যেন বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ লালন করে নিজেদের জীবন গঠন করতে পারে এবং বাংলাদেশ কে একটি ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে তৈরি করতে পারে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার যে মিশন-ভিশন সেটির একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ কে মেলে ধরতে পারে এটি আমার তাগিদ থাকবে।

এছাড়া ডাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সময়মতো হতে পারে সে চেষ্টা থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের একটি বড় দুরত্ব লক্ষ্য করা যায় যেটি ডাকসু নির্বাচনের পরে অনেকটা কমে এসেছে। আমাদের হলগুলোতে শিক্ষকরা যেসব দায়িত্বে ছিলেন তা তারা যথাযথ ভাবে পালন করতেন না, ডাকসু আসার পর যা কিছুটা হলেও তারা পালন করেছে বলে আমি মনে করি।

এফ আর হল ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে আমি আমাদের হল প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের যে সুমধুর সম্পর্ক থাকার কথা সেটিকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।

জাননাহ : দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার পূর্বে ঢাবি প্রশাসন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ; – কোনো অছাত্রকে হলে উঠতে দেওয়া হবে না এবং গণরুমও বিলুপ্ত করা হবে – এগুলো কি শুধুই প্রতিশ্রুতি না এর বাস্তবায়নও হয়েছে ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : অছাত্রদের ব্যাপারে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে হলের প্রভোস্ট এ কে এম সাইফুল ইসলাম খান স্যারের সাথে কথা বলে যেটি জানতে পেরেছি, উনি ২৯ অক্টোবর যে বিসিএস (প্রিলি.) পরীক্ষা ছিল, সেই তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল শিক্ষার্থী অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছে তাদের থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন, যেটি তিনি পরবর্তী তে তাদের কে চিঠি দিয়ে হল ত্যাগের জন্য আহ্বান জানানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন৷ আমরা আশা করছি, যে সকল শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা স্যার এ এফ রহমান হলে সুন্দর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো এবং গণরুম ব্যবস্থাও বিলুপ্ত করতে পারবো।

জাননাহ : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডিসমাচারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মুনেম শাহারিয়ার মুন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্নাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটাই ঢাবির জন্মগত বৈশিষ্ট্য

Update Time : ০৮:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, – “কী ভাবছেন তাঁরা ?” 

এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্র সংসদের (সাবেক) সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুনেম শাহারিয়ার মুন।  সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : যখন জানতে পারলেন আপনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, কেমন অনুভূতি হয়েছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : এটা আসলেই অনেক ভালোলাগার একটা অনুভূতি ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আমার স্কুল জীবন, কলেজ জীবন থেকেই চেষ্টা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম গুলো ফলো-আপের মধ্যে রাখার। আমার চেষ্টা, ভাগ্যের সহায়তা সবকিছু মিলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

মুনেম শাহারিয়ার মুন
মুনেম শাহারিয়ার মুন

আর লড়াই-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সকল কিছু যে জায়গাটাতে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে সে জায়গাতে আসা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার এবং আমি আমার জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলবাদবিরোধী চেতনার যে সুর, সেই সুরে সুর মিলাতে পারছি, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারছি এবং ছাত্ররাজনীতিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি এগুলো আমার জন্য ভাগ্যের বিষয় এবং এ জায়গায় আসা সত্যিই  অনেক আনন্দের।

জাননাহ : বিচিত্র ধরনের স্বপ্ন নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা আসে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রথম বর্ষ থেকে আপনার কী ধরনের স্বপ্ন ছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : স্বপ্নাতুর চোখ নিয়েই সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে বলে আমি মনে করি এবং আমারও নিজস্ব কিছু স্বপ্ন ছিল। আমি বলব না যে স্বপ্নগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। স্বপ্ন হচ্ছে ধারণ করার বিষয়। আমি মনে করি, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছি সে জায়গা থেকে আমি ছিটকে যাই নি এবং সেই স্বপ্নের যে রোডম্যাপ সেই রোডম্যাপের মধ্যেই আমি আছি।

আমার স্বপ্ন ছিল- সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি আমি উপলব্ধি করতাম, বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে একজন তরুণ প্রজন্মের সন্তান হিসেবে আমি আমার পরিসর থেকে নিজেকে কতটুকু দেশের জন্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, আমার সমাজ,রাষ্ট্র পরিবেশকে কতটুকু দিতে পারছি এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল এবং আমার কাছে মনে হয়, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি সেই স্বপ্নের রোডম্যাপের মধ্যেই আমি আমার পথ চলতে পারছি।

জাননাহ : শততম বর্ষে পদার্পণ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। প্রথম বর্ষে ভর্তির পর আপনার আবাসন ব্যবস্থা কী রকম ছিল ? আপনাকেও কী গণরুমে থাকতে হয়েছিল ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : হ্যাঁ, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ কালের একটি ব্যবস্থা – গণরুম, যেটি আসলে সত্যিকার অর্থেই খুবই দুঃখজনক । এবং আমি নিজেও গণরুমের একজন শিক্ষার্থী ছিলাম। গণরুম থেকেই আজকে আমার উঠে আসা।

তবে আমি যেটি বলতে চাচ্ছি,  গণরুমের বিষয়টি, এটি আমরা যে একান্তভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করি,  স্রেফ এটা আসলে দোষারোপের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়৷ এটি নিরসনের জন্য আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছাটাই মুখ্য। প্রশাসনের যদি সদিচ্ছা  থাকে তাহলে গণরুমে প্রথম বর্ষেই আমাদের শিক্ষার্থীদের যে দুর্ভোগ, ভোগান্তি সেটি নিরসন করা সম্ভব

এই কারনেই সম্ভব যে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার সপক্ষের দল,১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, উনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করেন, উনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে বিভিন্ন ধরনের লড়াই-সংগ্রামে তাঁর পদচারণা ছিল, সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সরকারের সাথে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে দাবি-দাওয়া গুলো সঠিকভাবে উত্থাপন করতো, তাহলে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসতো।  এজন্য আমি মনে করি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতিটাই প্রধান এবং মুখ্য কারণ

জাননাহ : তাহলে, একসময়ের গণরুমের বাসিন্দা এবং বর্তমানে স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে, গেস্টরুম কালচার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : গেস্টরুম কালচার, এটি আসলে অতিথি কক্ষ। গেস্টরুম বলতে যা আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বুঝি সেটা হলো অতিথি কক্ষ। এই অতিথি কক্ষের মধ্যে আমরা তথাকথিত যে কালচারের মধ্যে দিয়ে যাই, এই কালচারটা – আমি আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলবো, একে খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই !

এই কারণেই বলছি সু্যোগ নেই, এই গেস্টরুম কালচারের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজনের মাধ্যমে, নতুন ইনোভেটিভ কাজকর্ম বা জুনিয়রদের সাথে ইন্ট্রোডাকশন বা সার্বিকভাবে সিনিয়র-জুনিয়রের যে মেলবন্ধন এটা মূলত গেস্টরুম থেকেই তৈরি হয়

তবে ঐ যে বললাম,অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন, আমাদের ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সর্বদাই ঘটে থাকে। এরকম কিছু গেস্টরুম কেন্দ্রিক ঘটনা আমরা বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে শুনতে পাই। তবে আমার ব্যাক্তিগত চাওয়া গেস্টরুম কালচারকে আমরা যেভাবে নেগেটিভ একটা মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করি, বা রাজনৈতিক জায়গা থেকে যে মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করি,  এর বাহিরেও আমি মনে করি যে গেস্টরুম,  তথাকথিত যে গেস্টরুম সেই গেস্টরুমের কথা বলছি না,  আমাদের মেলবন্ধনের যে গেস্টরুম সেই গেস্টরুমের একটি সুদূরপ্রসারী ভালো প্রভাব রয়েছে।

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন । নির্বাচিত ডাকসু কমিটি কতটা সফল বলে আপনার মনে হয়েছে?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : অবশ্যই সফল বলে আমি মনে করি। দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে এবং শুধু কেন্দ্রীয় ডাকসু’র সফলতা নিয়ে কথা বললেই হবে না, আমাদের হলগুলোতে যে ধরনের কাজ হয়েছে, আমি আমার এফ রহমান হলে দায়িত্ব প্রাপ্ত পদে (সাংস্কৃতিক সম্পাদক) থেকে যতটুকু কাজ করেছি, আপনি সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজগুলো যদি লক্ষ্য করে থাকেন যে ডাকসুতে কালচারাল অনেক প্রোগ্রাম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু সংস্কৃতি চর্চার একটা মূল কেন্দ্রবিন্দু। সেই জায়গা থেকে আমাদের বিগত সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি আবৃত্তি থেকে শুরু করে বাঙালির যে ঐতিহ্য ধারণ করার ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল সেটা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা আমাদের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু সংস্কৃতির বিপ্লব হয়েছে তা বলব না, ডাকসুর প্রত্যেক প্রতিনিধি তাদের নিজ জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদা, আকাঙ্খা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে দর কষাকষির মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন। আমাদের কিছু জায়গায় প্রতিবন্ধকতা ছিল যেগুলি আমি মনে করি যে ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচন যথাযথ ভাবে ক্যালেন্ডার অনুসারে হলে আমরা এই প্রতিবন্ধকতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে পারবো।

আমি মনে করি, ডাকসু ২০১৯ সালের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন পুরোপুরি সফল হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ও ডাকসু নির্বাচন যদি নিয়মিত ভাবে হতে থাকে তাহলে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে আমরা একটি সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে রূপান্তর করতে পারবে।

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করেছে শততম বর্ষে। ১০০ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন, তার কতটুকু প্রতিফলন বাস্তবে লক্ষ্য করছেন?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির পরিধি আসলে বিশাল। আমি মনে করি, বোধগম্যতার মানচিত্র সৃষ্টি, মানবিক বিবেকবোধ জাগ্রত করা, অন্যায়-অবিচার-নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রশ্নাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। তবে আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি-অগ্রগতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল, যেটি আমরা নিয়ে যেতে পারি নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যাক্তি কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের হৃদয়

একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ বছর অতিবাহিত করছে, কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় আমরা আমাদের নিজেদের মাতৃভাষায় আমাদের পড়াশোনার চর্চা এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারি নি।  আমাদের বইগুলো যে মাধ্যমে পড়ানো হয় -ইংরেজী মাধ্যম,আমি মনে করি যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষায় যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবো অন্য মাধ্যমে তার চেয়ে অনেক বেশি  সময় ব্যয় হয়। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় একশ বছর পার হওয়ার পরও প্রধান যে বইগুলো সেগুলো এখনও অনুবাদ হয় নি, যা অনেক দুঃখের বিষয়।

এরপরে শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের অতীতে আমরা যে মধুরতম সম্পর্ক দেখতে পেয়েছি, সেই জায়গায় এখন অনেকটাই রাজনৈতিক সম্পর্ক। ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে সুমধুর সম্পর্ক থাকার কথা ছিল,কোনো একটি পর্দার আড়ালে সেটি এখন রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ খেলার মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়

আরেকটি কথা বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ বা প্রশাসনিক যে কার্যক্রম এই কার্যক্রমগুলোকে আমরা এখনও পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করতে পারি নি। এবং আমরা প্রতিনিয়ত পত্রিকা বা বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে দেখতে পাই শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে ৷

তবে আমি মনে করি সবকিছুকে ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যে নিজস্ব জায়গা সে জায়গা থেকে কখনও বিচ্যুত হয় নি। আমরা দেখেছি ছাত্র রাজনীতির সর্বশ্রেষ্ঠ যে জায়গা, যেখান থেকে সকল রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের সূচনা হয় সে জায়গাটিতে আমার কাছে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একই রূপে অবস্থান করছে।

জাননাহ : ক্ষমতাসীল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ক্যাম্পাসে  পূর্ণাঙ্গরূপে ক্রিয়াশীল। কিন্তু নেই তেমন কোনো বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতি। আর হলগুলোতে তাদের অবস্থান করতে না পারার পেছনে তারা বরাবরের মতোই ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগকে দোষারোপ করে আসছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : দেখুন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হলেও ছাত্রসংগঠন কখনোই ক্ষমতাসীন হয় না।  ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের কথা বলা, ছাত্রদের কথা বলা, মানুষের কথা বলা।

আর ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যা আমাদের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়। আর অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো যে দোষারোপ করছে, এটি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কে শাক দিয়ে মাছ ঢাকবার একটা বৃথা চেষ্টা বলেই আমি মনে করি৷

জাননাহ : অর্থাৎ ছাত্রলীগের উপর যে দায় চাপানো হচ্ছে, সেটি আপনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : কোনো ক্ষেত্রে সত্যতার বিষয় থাকলে, অস্বীকার শব্দটি ব্যবহার করাই যায়। আর আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার নিজের আদর্শিক রাজনীতি টাই চর্চা করে।

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পিছনের উদ্দেশ্য কী বলে আপনার মনে হয় ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : দেখুন ২০১৯ সালে আমাদের ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর,  তাকে আসলে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তার ১ বছর মেয়াদ কালীন সময়ে তার আসল চরিত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুখোশ খুলে উন্মোচিত হয়েছে। তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে, তিনি যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন সেটির কার্যক্রমের উপর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সুনজর রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তাহলেই তার চিন্তাধারা, তার এজেন্ডা, তার কার্যক্রম আমরা খুব সহজেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো।

জাননাহ : একশ বছর পরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী বলে আপনার মনে হয় ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : শতবর্ষে এসেও আমরা, আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় জায়গায় আমাদের নৈতিকতা, আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এবং আমাদের পারস্পরিক যে সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধাবোধ এই জায়গাটিতে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে আমি মনে করি।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষে এসেও আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম মাতৃভাষায় পরিচালনা করতে পারছি না, আমার দৃষ্টিতে এটিকেই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে হয়

জাননাহ : আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা। স্যার এ এফ রহমান ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হলে কী কী উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিবেন বলে ঠিক করেছেন ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : আমরা অনেকেই বর্তমানে ক্যান্ডিডেট অবস্থায় আছি। যদি আমি এফ রহমান ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমার ব্যাক্তিগত জায়গা থেকে কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে।

ইতিঃপূর্বে ডাকসু তে দায়িত্ব পালনকালীন আমাদের গণরুমে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্যানের বরাদ্দ চেয়ে প্রভোস্ট মহোদয় বরাবর বিশেষ ভাবে আবেদন করেছিলাম ; যার প্রেক্ষিতে প্রত্যেক গণরুমে ২ টি করে ফ্যান লাগানো হয়৷ এছাড়া আমাদের মেস এর খুবই দুরবস্থা ছিল। পরবর্তী সময়ে আমি মেসের দায়িত্বও নিয়েছিলাম। মেসের সার্বিক উন্ননয়নের ফলে আগে যেখানে ২৪০ জনের মতো মেস এ খেত, এখন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জনের মতো খাওয়া-দাওয়া করছে।

এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে মশার ঔষধ স্প্রে করা,  রিডিং রুম গুলোরে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা এ সব আমরা করেছি।

এফ রহমান হলে সাংস্কৃতিক যে কর্মকাণ্ড গুলো আছে সেগুলোকে আর ও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়া যায় কি না,  এটি আমার ভাবনা-চিন্তার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে মানসিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য সাইকোলজিস্ট থাকা উচিত

ইদানীং অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা খবর আমাদের কানে আসে। আমার হলেও ‘তরুন’ নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাই  আমি ডাকসু তে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকাকালীন সময়েও প্রতি সপ্তাহে, সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে (মানসিক স্বাস্থ্যের উপর)একটি করে সেশন পরিচালনা করে আসছিলাম, যেটি এখন বন্ধ আছে। এই প্রোগামটি আবারও শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে।

আর ছাত্রলীগের রাজনীতির যে আদর্শিক চিন্তাধারা রয়েছে সেটিকে, আমার হলের পরিসরে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে, তারা যেন বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ লালন করে নিজেদের জীবন গঠন করতে পারে এবং বাংলাদেশ কে একটি ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে তৈরি করতে পারে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার যে মিশন-ভিশন সেটির একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ কে মেলে ধরতে পারে এটি আমার তাগিদ থাকবে।

এছাড়া ডাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সময়মতো হতে পারে সে চেষ্টা থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের একটি বড় দুরত্ব লক্ষ্য করা যায় যেটি ডাকসু নির্বাচনের পরে অনেকটা কমে এসেছে। আমাদের হলগুলোতে শিক্ষকরা যেসব দায়িত্বে ছিলেন তা তারা যথাযথ ভাবে পালন করতেন না, ডাকসু আসার পর যা কিছুটা হলেও তারা পালন করেছে বলে আমি মনে করি।

এফ আর হল ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে আমি আমাদের হল প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের যে সুমধুর সম্পর্ক থাকার কথা সেটিকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।

জাননাহ : দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার পূর্বে ঢাবি প্রশাসন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ; – কোনো অছাত্রকে হলে উঠতে দেওয়া হবে না এবং গণরুমও বিলুপ্ত করা হবে – এগুলো কি শুধুই প্রতিশ্রুতি না এর বাস্তবায়নও হয়েছে ?

মুনেম শাহারিয়ার মুন : অছাত্রদের ব্যাপারে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে হলের প্রভোস্ট এ কে এম সাইফুল ইসলাম খান স্যারের সাথে কথা বলে যেটি জানতে পেরেছি, উনি ২৯ অক্টোবর যে বিসিএস (প্রিলি.) পরীক্ষা ছিল, সেই তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল শিক্ষার্থী অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছে তাদের থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন, যেটি তিনি পরবর্তী তে তাদের কে চিঠি দিয়ে হল ত্যাগের জন্য আহ্বান জানানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন৷ আমরা আশা করছি, যে সকল শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা স্যার এ এফ রহমান হলে সুন্দর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো এবং গণরুম ব্যবস্থাও বিলুপ্ত করতে পারবো।

জাননাহ : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডিসমাচারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মুনেম শাহারিয়ার মুন : আপনাকেও ধন্যবাদ।