সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ পর্যটক

  • Update Time : ১১:৩৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 200

অন্তর দে বিশাল, কক্সবাজারঃ

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিনে কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আগন্তুক পর্যটক এবং দ্বীপের বাসিন্দারা।

দ্বীপে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ‘বেওয়ারিশ কুকুর’। এমন অভিযোগ দ্বীপের বাসিন্দা ও দেশি-বিদেশি আগত ভ্রমণকারী পর্যটকদের।
প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে ৫ হাজারের বেশি কুকুর রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবী।
জানা যায়, দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস সেখানে ৫ হাজারের বেশি কুকুর পর্যটক এবং স্থানীয়দের রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে।
এদিকে কুকুরের কারণে দ্বীপের অনেক অভিভাবক, ছেলে-মেয়েদের স্কুল মাদরাসায় পাঠাতেও ভয় করছেন। বেওয়ারিশ কুকুর তাদের ছেলে মেয়েদের যদি কামড় দেন। এই ভয়ে অনেকে ছেলে মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হতে দেন না।

অন্যদিকে দ্বীপ এলাকার সবচেয়ে বেশি বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব রয়েছে দ্বীপ এলাকার বাজার, সীবীচ এবং জেটির পার্শ্ববর্তী অংশে।
এই এলাকা গুলাতেই পযর্টক তো দূরের কথা স্থায়ীয়রা ও যেতে ভয় করছে এখন।
বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্কে পর্যটনের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
দ্বীপ এলাকার সীবিচ, বাজার ও জেটি ঘাট অংশে গিয়ে দেখা মিলে স্থানীয়রা ও পযর্টকরা কি পরিমাণ বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে।

যেসময় পযর্টকরা সমুদ্রে অবাধে বিচরণ করবে সেই সময়ই কুকুরের উৎপাত সবচেয়ে বেশি।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম জানান, জীবনের প্রথম দেখলাম এত কুকুর রয়েছে দ্বীপে অঞ্চলে।
সেন্টমার্টিনের মত এত ছোট জায়গায় এত্ত গুলি কুকুর! যা একেবারেই অকল্পনীয়। পরিবার পরিজন নিয়ে কুকুরের জ্বালায় বীচে ঘুরাঘুরি করাটা আতংকের ব্যাপার বটে।

দ্বীপে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক সাদ্দাম হোসেন জানান,জীবনেও দেখিনি এত কুকুর! পর্যটক এরিয়ায় এত সংখ্যা বেওয়ারিশ কুকুর! জরুরি ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের এর নিধন করা উচিত।
না হলে যারা একবার প্রবালদ্বীপে ঘুরতে আসছে তারা দ্বিতীয়বার আসার চিন্তা তো দূরের কথা নামও ধরবে না।

দ্বীপের হোটেল ব্যবসায়ী মাহাবুব জানান, সেন্টমাটিন দ্বীপটিতে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ৮ হাজারের মত। পাশাপাশি দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত লোকজনসহ বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস।

কিন্তু অন্যদিকে দ্বীপটিতে ৫ হাজারের অধিক কুকুরের আনাগোনায় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এই কুকুরের উপদ্রবের কারণে বর্তমানে দ্বীপবাসীকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

সেন্টমাটিনের বাসিন্দারা জানান, পর্যটকরা ভোর এবং বৈকালিন সময়ে সমুদ্রে অবাধে বিচরণ করতে পারে। সেই সময় কুকুরের উপদ্রব বেশি বলা চলে।
সেই জন্য দ্রুত সময়ে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া শুরুর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাদের অভিযোগ, পরিবেশসম্মত কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে কুকুরের প্রজনন সবচেয়ে বেশি। একটি মা কুকুর পাঁচ-ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে। কুকুর নিধন নিষেধাজ্ঞার কারণে ৪/৩ বছর ধরে সেন্টমাটিন দ্বীপে বংশবিস্তার হচ্ছে উদ্বেগজনকভাবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এই কারণে কুকুরের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ফলে দ্বীপের সমুদ্র সৈকত এলাকায় বিচরণ করে দলে দলে বেওয়ারিশ কুকুর। আবার বাজার ও জেটির পাশের এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায়ও এই কুকুরের উপদ্রব লক্ষণীয়। কুকুর নিধন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আতংকও বেড়েই চলছে। এর জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বিগত ৪-৩ বছর ধরে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কুকুরের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিযন্ত্রণে আনা জরুরি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ পর্যটক

Update Time : ১১:৩৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

অন্তর দে বিশাল, কক্সবাজারঃ

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিনে কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আগন্তুক পর্যটক এবং দ্বীপের বাসিন্দারা।

দ্বীপে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ‘বেওয়ারিশ কুকুর’। এমন অভিযোগ দ্বীপের বাসিন্দা ও দেশি-বিদেশি আগত ভ্রমণকারী পর্যটকদের।
প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে ৫ হাজারের বেশি কুকুর রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবী।
জানা যায়, দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস সেখানে ৫ হাজারের বেশি কুকুর পর্যটক এবং স্থানীয়দের রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে।
এদিকে কুকুরের কারণে দ্বীপের অনেক অভিভাবক, ছেলে-মেয়েদের স্কুল মাদরাসায় পাঠাতেও ভয় করছেন। বেওয়ারিশ কুকুর তাদের ছেলে মেয়েদের যদি কামড় দেন। এই ভয়ে অনেকে ছেলে মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হতে দেন না।

অন্যদিকে দ্বীপ এলাকার সবচেয়ে বেশি বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব রয়েছে দ্বীপ এলাকার বাজার, সীবীচ এবং জেটির পার্শ্ববর্তী অংশে।
এই এলাকা গুলাতেই পযর্টক তো দূরের কথা স্থায়ীয়রা ও যেতে ভয় করছে এখন।
বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্কে পর্যটনের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
দ্বীপ এলাকার সীবিচ, বাজার ও জেটি ঘাট অংশে গিয়ে দেখা মিলে স্থানীয়রা ও পযর্টকরা কি পরিমাণ বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে।

যেসময় পযর্টকরা সমুদ্রে অবাধে বিচরণ করবে সেই সময়ই কুকুরের উৎপাত সবচেয়ে বেশি।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম জানান, জীবনের প্রথম দেখলাম এত কুকুর রয়েছে দ্বীপে অঞ্চলে।
সেন্টমার্টিনের মত এত ছোট জায়গায় এত্ত গুলি কুকুর! যা একেবারেই অকল্পনীয়। পরিবার পরিজন নিয়ে কুকুরের জ্বালায় বীচে ঘুরাঘুরি করাটা আতংকের ব্যাপার বটে।

দ্বীপে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক সাদ্দাম হোসেন জানান,জীবনেও দেখিনি এত কুকুর! পর্যটক এরিয়ায় এত সংখ্যা বেওয়ারিশ কুকুর! জরুরি ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের এর নিধন করা উচিত।
না হলে যারা একবার প্রবালদ্বীপে ঘুরতে আসছে তারা দ্বিতীয়বার আসার চিন্তা তো দূরের কথা নামও ধরবে না।

দ্বীপের হোটেল ব্যবসায়ী মাহাবুব জানান, সেন্টমাটিন দ্বীপটিতে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ৮ হাজারের মত। পাশাপাশি দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত লোকজনসহ বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস।

কিন্তু অন্যদিকে দ্বীপটিতে ৫ হাজারের অধিক কুকুরের আনাগোনায় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এই কুকুরের উপদ্রবের কারণে বর্তমানে দ্বীপবাসীকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

সেন্টমাটিনের বাসিন্দারা জানান, পর্যটকরা ভোর এবং বৈকালিন সময়ে সমুদ্রে অবাধে বিচরণ করতে পারে। সেই সময় কুকুরের উপদ্রব বেশি বলা চলে।
সেই জন্য দ্রুত সময়ে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া শুরুর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাদের অভিযোগ, পরিবেশসম্মত কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে কুকুরের প্রজনন সবচেয়ে বেশি। একটি মা কুকুর পাঁচ-ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে। কুকুর নিধন নিষেধাজ্ঞার কারণে ৪/৩ বছর ধরে সেন্টমাটিন দ্বীপে বংশবিস্তার হচ্ছে উদ্বেগজনকভাবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এই কারণে কুকুরের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ফলে দ্বীপের সমুদ্র সৈকত এলাকায় বিচরণ করে দলে দলে বেওয়ারিশ কুকুর। আবার বাজার ও জেটির পাশের এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায়ও এই কুকুরের উপদ্রব লক্ষণীয়। কুকুর নিধন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আতংকও বেড়েই চলছে। এর জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বিগত ৪-৩ বছর ধরে কুকুর নিধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কুকুরের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিযন্ত্রণে আনা জরুরি।