Homeজেলাশিশু টিকা কার্ডের মূল্য ১০০ টাকা, রমরমা বাণিজ্যে মেতেছেন স্বাস্থ্য সহকারী

শিশু টিকা কার্ডের মূল্য ১০০ টাকা, রমরমা বাণিজ্যে মেতেছেন স্বাস্থ্য সহকারী

এনামুল হক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)সংবাদদাতা:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের হাসানগঞ্জ বাজারের নমিতা কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডুপ্লিকেট ভাবে তৈরি করা শিশুদের টিকার কার্ড।
.
এতে অসহায় হয়ে পড়েছে সকল শ্রেণির মানুষ। তারা জন্ম নিবন্ধনের জন্য চড়া দাম দিয়ে টিকার কার্ড নিতে বাধ্য হচ্ছে। পুরনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও তারিখ দিয়ে এসব কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য সহকারী টিকাদান কর্মী ছালমা বেগম ও জগদীশ মহন্ত নামের এক কম্পিউটার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
.
হাতিবান্ধা গ্রামের শেখ ফরিদ আলী অভিযোগ করেন, তার মেয়ে মোছাঃ জান্নাতি আক্তারের টিকার কার্ড আনতে গেলে ব্লক-ঘ/২ এর বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী টিকাদানকর্মী ছালমা বেগমের যোগসাজশে কম্পিউটার ব্যবসায়ী জগদীশ মহন্ত ২’শ টাকা দাবি করে। পরে অনেক অনুনয় বিনয়ী করে ১০০ টাকা দিয়ে টিকার কার্ড সংগ্রহ করেন। তার কার্ডে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ লেখা আছে ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল।
.
তিনি আরো বলেন, আরো ৭ জনের কাছ থেকে টিকার কার্ড নিতে ১০০ টাকা নিয়েছেন। আমি ১০০ টাকার কম দিতে চাইলেও তিনি (দোকানী) তা নিতে রাজি হননি।পরে বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি সহ অনেক অবৈধ কাজ এই কম্পিউটার দোকানি জগদীশ মহন্ত করে থাকেন। সেই সাথে পর্ণগ্রাফি ভিডিও কম্পিউটার থেকে বিক্রি করা হয়।
.
অন্যদিকে, গোপন তথ্যসুত্রে জানা যায়, বিনামূল্যে সরকারি টিকা কার্ড সাপ্লাই না থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী টিকাদান কর্মী ছালমা বেগমের যোগসাজশে কম্পিউটার ব্যবসায়ী জগদীশ মহন্ত স্ক্যান করার মাধ্যমে টিকা কার্ড ১০০ টাকায় বিক্রি করেন।
.
এতে কমিশন হিসেবে ভাগ পায় সাস্থ্য কর্মী ছালমা বেগম। এছাড়াও এ নমিতা কম্পিউটারে বিভিন্ন রকমের ডুপ্লিকেট কাজ করা হয়। জন্ম নিবন্ধন কার্ডের নাম, বয়স পরিবর্তন করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।
.
জামাল হাট এক ব্যবসায়ী মমিনুল মিয়া জানান, শেখ ফরিদ আলী শনিবার দুপুরে তার দোকানে এসে দুঃখ করে বলেন, ভাই আমার মোটেও দিন চলেনা তার ওপরে ১০০ টাকা দিয়ে আমাকে টিকার কার্ড নিতে হলো। একশত টাকার নিচে দেবেই না। কম দেয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করে লাভ না হওয়ায় ১০০ টাকা দিয়ে টিকার কার্ড সংগ্রহ করেছি।
.
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সহকারী টিকাদান কর্মী ছালমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে এসে কথা বলতে রাজি নন তবে তার সহজ সরল সত্যে স্বীকারোক্তি গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
.
এ বিষয়ে কম্পিউটার ব্যবসায়ী জগদীশ চন্দ্র মোহন্ত এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ফোনে ১০০ টাকার কথা স্বীকার করেন। পরে দ্বিতীয় বার ফোন করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন এখানে এখন এসবকাজ করা হয় না। কাজটি এখন করা হয় না কেন জানতে চাইলে বলেন ওরা নিষেধ করে দিয়েছে কাজটি না করতে।
.
এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান সরকার জানান, টিকার কার্ড বাইরে বিক্রি হওয়ার কোনো বিধান বা সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সংশ্লিস্ট স্বাস্থ্য সহকারি ও কম্পিউটার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ কে অবগত করা হলে তিনি বলেন,শিশুদের টিকা কার্ড খোলা বাজারে বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই তবে কেউ যদি খোলা বাজারে এ টিকা কার্ড বিক্রি করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
উল্লেখ্য, সাংবাদিক জাহিদ হাসান তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে আটকিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এমনকি তাকে অনেকভাবে হয়রানি ও হেনস্তা করার চেষ্টা করেন তাদের নিজ ক্যামেরায় ধারণ করেন কম্পিউটার ব্যবসায়ী জগদীশ চন্দ্র মহন্ত।পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্রই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কম্পিউটার ব্যবসায়ী পালিয়ে যান।এবিষয়টি নিশ্চিত করেন সাংবাদিক জাহিদ হাসান।
RELATED ARTICLES

Most Popular