লামার আজিজনগরে মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম ইউপি চেয়ারম্যান জসিম 

  • Update Time : ০৩:৩২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / 28

বিপ্লব দাশ,বান্দরবান প্রতিনিধিঃ

বান্দরবান লামা উপজেলার আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো.জসিম উদ্দীন। ছিলেন সিনেমা হলের একজন সাধারণ টিকেট (কালোবাজারি) বিক্রেতা। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পেতে না পেতেই নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এলাকায় বেপরোয়া নিয়ন্ত্রণ ও একক কর্তৃত্ব। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি,নারী কেলেঙ্কারি,স্থানীয়দের ভূমি জবর-দখল,পাহাড় কাটা, জায়গা উদ্ধার করিয়ে দেয়ার নামে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর,মাদক কারবারি ও নারী পাচার সহ বনের গাছ কেটে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একাধিক মামলা ও এলাকা সূত্রে জানা যায়,ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইউপির সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেন চেয়ারম্যান জসিম। বিভিন্ন সময় তার পোষা বাহিনী দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ নির্বাক হয়ে পড়েছে।


অবৈধ আয়ে ভাড়াটিয়া থেকে কোটিপতি, রয়েছে একাধিক বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়িসহ নামে বেনামে বিশাল সহায় সম্পদ। তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস না পেয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকই। এমনকি তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এলাকার দলীয় লোকসহ মুক্তিযোদ্ধারাও তার আক্রান্ত থেকে নিস্তার পায়নি। 

ইতিপূর্বে চাঁদাবাজি, জবরদখল,ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও গৃহকর্মীকে মারধর সহ একাধিক মামলা হয় চেয়ারম্যান জসিমের বিরুদ্ধে। কিন্তু টাকা আর ক্ষমতার জোরে বিচারধিকার থেকে বঞ্চিত হন ভুক্তভোগীরা। প্রত্যেক মামলার বাদীরা জানিয়েছেন আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচারের আসায় বান্দরবান জেলা-উপজেলায় ঘুরছি। 

গোপন সূত্রে, গত ১৫ জুন ভিজিএফ চাউল নয়ছয় এর তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন এই চেয়ারম্যান। পরে চেয়ারম্যানের লালিত ক্যাডাররা সাংবাদিকের মোবাইল ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেই। এবিষয়ে জেলা উপসচিব কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে একটি মিনি ট্রাকে করে চাউল পাছারের ভিডিও (সিসিটিভি ফুটেজ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

এছাড়া গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে জসিম চেয়ারম্যান গা-ঢাকা দিলেও তার লালিত বাহিনীদের টাকার প্রস্তাব দিয়ে ছাত্র-জনতার নাম ভাঙ্গিয়ে মন্দিরে হামলা সহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার গোপন ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে রীতিমত। 

এদিকে গা-ঢাকা দেওয়া চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় গতকাল ১৮ আগস্ট বহিরাগত ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় ঢুকে। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থকদের পরিষদ মাঠে দেখতে পেয়ে ধারালো দা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি মারধর করে জখম করেন। পরে তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপরও ছড়াও হয়। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে আহতদের চিকিৎসার জন্য লামা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে ১নং আসামি করে লামা থানায় মোট ২২জনের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করেন হামলার শিকার মাহমুদুল হাসান বাবু। অজ্ঞাত আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।

সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণের দাবিতে আজ (১৯ আগস্ট’২৪) সোমবার অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন ইউপির ছাত্রজনতা।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

লামার আজিজনগরে মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম ইউপি চেয়ারম্যান জসিম 

Update Time : ০৩:৩২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

বিপ্লব দাশ,বান্দরবান প্রতিনিধিঃ

বান্দরবান লামা উপজেলার আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো.জসিম উদ্দীন। ছিলেন সিনেমা হলের একজন সাধারণ টিকেট (কালোবাজারি) বিক্রেতা। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পেতে না পেতেই নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এলাকায় বেপরোয়া নিয়ন্ত্রণ ও একক কর্তৃত্ব। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি,নারী কেলেঙ্কারি,স্থানীয়দের ভূমি জবর-দখল,পাহাড় কাটা, জায়গা উদ্ধার করিয়ে দেয়ার নামে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর,মাদক কারবারি ও নারী পাচার সহ বনের গাছ কেটে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একাধিক মামলা ও এলাকা সূত্রে জানা যায়,ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইউপির সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেন চেয়ারম্যান জসিম। বিভিন্ন সময় তার পোষা বাহিনী দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ নির্বাক হয়ে পড়েছে।


অবৈধ আয়ে ভাড়াটিয়া থেকে কোটিপতি, রয়েছে একাধিক বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়িসহ নামে বেনামে বিশাল সহায় সম্পদ। তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস না পেয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকই। এমনকি তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এলাকার দলীয় লোকসহ মুক্তিযোদ্ধারাও তার আক্রান্ত থেকে নিস্তার পায়নি। 

ইতিপূর্বে চাঁদাবাজি, জবরদখল,ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও গৃহকর্মীকে মারধর সহ একাধিক মামলা হয় চেয়ারম্যান জসিমের বিরুদ্ধে। কিন্তু টাকা আর ক্ষমতার জোরে বিচারধিকার থেকে বঞ্চিত হন ভুক্তভোগীরা। প্রত্যেক মামলার বাদীরা জানিয়েছেন আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচারের আসায় বান্দরবান জেলা-উপজেলায় ঘুরছি। 

গোপন সূত্রে, গত ১৫ জুন ভিজিএফ চাউল নয়ছয় এর তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন এই চেয়ারম্যান। পরে চেয়ারম্যানের লালিত ক্যাডাররা সাংবাদিকের মোবাইল ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেই। এবিষয়ে জেলা উপসচিব কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে একটি মিনি ট্রাকে করে চাউল পাছারের ভিডিও (সিসিটিভি ফুটেজ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

এছাড়া গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে জসিম চেয়ারম্যান গা-ঢাকা দিলেও তার লালিত বাহিনীদের টাকার প্রস্তাব দিয়ে ছাত্র-জনতার নাম ভাঙ্গিয়ে মন্দিরে হামলা সহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার গোপন ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে রীতিমত। 

এদিকে গা-ঢাকা দেওয়া চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় গতকাল ১৮ আগস্ট বহিরাগত ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় ঢুকে। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থকদের পরিষদ মাঠে দেখতে পেয়ে ধারালো দা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি মারধর করে জখম করেন। পরে তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপরও ছড়াও হয়। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে আহতদের চিকিৎসার জন্য লামা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে ১নং আসামি করে লামা থানায় মোট ২২জনের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করেন হামলার শিকার মাহমুদুল হাসান বাবু। অজ্ঞাত আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।

সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণের দাবিতে আজ (১৯ আগস্ট’২৪) সোমবার অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন ইউপির ছাত্রজনতা।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।