রাণীনগরে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ৪০৯ Time View

আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

লক্ষ্মী মানে শ্রী সুরুচি ও তাঁর বাহন পেঁচক। লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী বলে মনে করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

নারী-পুরুষ উভয়েই এই পূজায় অংশগ্রহণ করেন। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে নওগাঁর রাণীনগরে দুইদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার কুজাইল বাজারে ছোট যমুনা নদীর তীরে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন ব্যাপী এ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে স্থানীয়রা লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজা শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুইশ’ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতীমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়।

মেলার প্রথম দিন শুক্রবার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর।

এদিন দুপুরের পর থেকে রাণীনগর উপজেলা, আত্রাই, মহাদেবপুর, নওগাঁ সদর সহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মী পূজা অনুসারীরা নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। নৌকায় সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে নৃত্যে মুখরীত হয়ে উঠে নদী।

এ সময় নদীর দুইপাড়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রায় শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবহরে মেতে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নদীতে।

এ মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। ধুম পড়ে যায় নানা মিষ্টি, মিঠাই ও পিঠা তৈরীতে। মেলা থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, সিলভারসহ বিভিন্ন মাছ, মিষ্টি, জিলাপিসহ হরেক রকমের খাবার জামাই তাদের শ্বশুর বাড়িতে কিনে নিয়ে যান।

মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।

কুজাইল গ্রামের বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের বড়ো উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মী পূজার আনন্দটা বেশি হয়। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা মেলা। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আগমনে যেন মূখরিত হয়ে উঠে।

শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে বিশাল নৌবহর শুরু হয়। পাশাপাশি থাকে আনন্দ উপভোগ করার নৌকাও। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রামের মেলা দেখা শুরু হয়।

মেলা কমিটির উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বাঘা বলেন, লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এখানে নৌবহর ও মেলা হয়েই থাকে। তাই শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা কমিটির সভাপতি ও কাশিমপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছায়ের আলী বিদ্যুৎ বলেন, এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে শতাধিক নৌকা ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর শুরু করে। নৌবহর দেখতে নদীর দু’পাড়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। তবে এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকেন।

Please Share This Post in Your Social Media

রাণীনগরে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

Update Time : ০৫:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

লক্ষ্মী মানে শ্রী সুরুচি ও তাঁর বাহন পেঁচক। লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী বলে মনে করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

নারী-পুরুষ উভয়েই এই পূজায় অংশগ্রহণ করেন। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে নওগাঁর রাণীনগরে দুইদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার কুজাইল বাজারে ছোট যমুনা নদীর তীরে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন ব্যাপী এ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে স্থানীয়রা লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজা শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুইশ’ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতীমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়।

মেলার প্রথম দিন শুক্রবার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর।

এদিন দুপুরের পর থেকে রাণীনগর উপজেলা, আত্রাই, মহাদেবপুর, নওগাঁ সদর সহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মী পূজা অনুসারীরা নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। নৌকায় সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে নৃত্যে মুখরীত হয়ে উঠে নদী।

এ সময় নদীর দুইপাড়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রায় শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবহরে মেতে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নদীতে।

এ মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। ধুম পড়ে যায় নানা মিষ্টি, মিঠাই ও পিঠা তৈরীতে। মেলা থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, সিলভারসহ বিভিন্ন মাছ, মিষ্টি, জিলাপিসহ হরেক রকমের খাবার জামাই তাদের শ্বশুর বাড়িতে কিনে নিয়ে যান।

মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।

কুজাইল গ্রামের বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের বড়ো উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মী পূজার আনন্দটা বেশি হয়। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা মেলা। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আগমনে যেন মূখরিত হয়ে উঠে।

শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে বিশাল নৌবহর শুরু হয়। পাশাপাশি থাকে আনন্দ উপভোগ করার নৌকাও। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রামের মেলা দেখা শুরু হয়।

মেলা কমিটির উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বাঘা বলেন, লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এখানে নৌবহর ও মেলা হয়েই থাকে। তাই শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা কমিটির সভাপতি ও কাশিমপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছায়ের আলী বিদ্যুৎ বলেন, এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে শতাধিক নৌকা ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর শুরু করে। নৌবহর দেখতে নদীর দু’পাড়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। তবে এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকেন।