মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানির এ কেমন বিজনেস স্ট্র্যাটিজি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:১৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২৬৪ Time View

রিয়াজুল হক:

আমাদের দেশে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না, এমন মানুষই এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে, মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোর কারবার দেখলে একটু অবাক লাগে। এমনিতেই আমরা হুজুগের জাতি। প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক, তারপরেও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি আমাদের দুর্বলতা থাকে। আর মোবাইল কোম্পানিগুলো এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।

ধরুন, পহেলা জানুয়ারি একটি নামি দামী মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি বিশাল ঢাকঢোল পিটিয়ে একটি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়লো। মূল্য ২০ হাজার টাকা। এই ফোনের কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ১৬ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা, ৩২ মেগাপিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা, ৪ জিবি জঅগ, ৬ জিবি জঙগ, হ্যালিও জি৮৫ প্রসেসর, ৬.৫৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে। ক্রেতারা আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে, এই সেট কেনার জন্য হুমরি খেয়ে পড়লো।

৩০ দিন পর ঐ কোম্পানি আরেকটি হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়লো। আগের সেটের সব বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রয়েছে। শুধুমাত্র ফ্রন্ট ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেলের পরিবর্তে ৩২ মেগাপিক্সেল করা হয়েছে। আর বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, আকর্ষণীয় সেলফি পাবেন। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৯৯৯ টাকা। আর পূর্বের অর্থাৎ ৩০ দিন আগে যে হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়া হয়েছিল, সেটাতে মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

আবার ১৫/২০ দিন পর নতুন সেট বাজারে এনে বলা হচ্ছে, এই সেটের চার্জ বেশি সময় থাকবে। কারণ ব্যাটারির সক্ষমতা ৫০০০ সধয, আগেরটির ব্যাটারি ছিল ৪২০০ সধয. অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্য কিন্তু একই আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পনের দিন কিংবা তিরিশ দিনের মধ্যেই কেন সামান্য একটু কনফিগারেশন পরিবর্তন করে নতুন নতুন মডেল নাম দিয়ে মোবাইল সেট বাজারে আনতে হবে? এই পরিবর্তন এক/দেড় বছর পরে হতে পারতো। আপডেট ভার্সন হওয়া উচিত আপডেট হওয়ার মতই। সব কনফিগারেশনের আপডেট হওয়া উচিত। আর দ্রুত ভার্সন চেঞ্জ হওয়াতে ফোনের কোয়ালিটি কি ঠিক থাকছে? এখন কিন্তু মোবাইল সেটে অভিযোগ বেশি পাওয়া যায়।

অল্প সময়ের ব্যবধানে সামান্য কনফিগারেশন পরিবর্তন করে নতুন হ্যান্ডসেট বাজারে আনার কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্মের উপরে একটা নেগেটিভ প্রভাব পরছে। অনেক সময় বড়দের উপরও পড়ছে।

আমাদের দেশে মোবাইল কিনে না দেওয়ার কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে। আমি নিজে দেখেছি, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের খুবই ভালো মানের মোবাইল সেট কিনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সামান্য আপডেট ভার্সন (হয়তো প্রসেসর হ্যালিও জি৮৫ থেকে বাড়িয়ে জি৯০ করা হয়েছে) যখনই বাজারে আসছে, তখনই তাদের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। দুই চার মাসের ব্যবধানে সেই নতুন সেট পাওয়ার জন্য আবার ঘরের মধ্যে অশান্তি তৈরি করছে।

মোবাইল সেট কোম্পানিগুলোর এই স্ট্র্যাটিজি পরিবর্তন হওয়া উচিত। একই সাথে আমরা যারা মোবাইল ব্যবহার করছি, আমাদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। গেম, ফেসবুকিং কিংবা ইউটিউব দেখার জন্য, তিন/চার মাস পর পর মোবাইল সেট পরিবর্তন করার দরকার হয় না।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

Please Share This Post in Your Social Media

মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানির এ কেমন বিজনেস স্ট্র্যাটিজি!

Update Time : ১১:১৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

রিয়াজুল হক:

আমাদের দেশে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না, এমন মানুষই এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে, মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোর কারবার দেখলে একটু অবাক লাগে। এমনিতেই আমরা হুজুগের জাতি। প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক, তারপরেও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি আমাদের দুর্বলতা থাকে। আর মোবাইল কোম্পানিগুলো এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।

ধরুন, পহেলা জানুয়ারি একটি নামি দামী মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি বিশাল ঢাকঢোল পিটিয়ে একটি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়লো। মূল্য ২০ হাজার টাকা। এই ফোনের কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ১৬ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা, ৩২ মেগাপিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা, ৪ জিবি জঅগ, ৬ জিবি জঙগ, হ্যালিও জি৮৫ প্রসেসর, ৬.৫৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে। ক্রেতারা আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে, এই সেট কেনার জন্য হুমরি খেয়ে পড়লো।

৩০ দিন পর ঐ কোম্পানি আরেকটি হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়লো। আগের সেটের সব বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রয়েছে। শুধুমাত্র ফ্রন্ট ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেলের পরিবর্তে ৩২ মেগাপিক্সেল করা হয়েছে। আর বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, আকর্ষণীয় সেলফি পাবেন। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৯৯৯ টাকা। আর পূর্বের অর্থাৎ ৩০ দিন আগে যে হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়া হয়েছিল, সেটাতে মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

আবার ১৫/২০ দিন পর নতুন সেট বাজারে এনে বলা হচ্ছে, এই সেটের চার্জ বেশি সময় থাকবে। কারণ ব্যাটারির সক্ষমতা ৫০০০ সধয, আগেরটির ব্যাটারি ছিল ৪২০০ সধয. অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্য কিন্তু একই আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পনের দিন কিংবা তিরিশ দিনের মধ্যেই কেন সামান্য একটু কনফিগারেশন পরিবর্তন করে নতুন নতুন মডেল নাম দিয়ে মোবাইল সেট বাজারে আনতে হবে? এই পরিবর্তন এক/দেড় বছর পরে হতে পারতো। আপডেট ভার্সন হওয়া উচিত আপডেট হওয়ার মতই। সব কনফিগারেশনের আপডেট হওয়া উচিত। আর দ্রুত ভার্সন চেঞ্জ হওয়াতে ফোনের কোয়ালিটি কি ঠিক থাকছে? এখন কিন্তু মোবাইল সেটে অভিযোগ বেশি পাওয়া যায়।

অল্প সময়ের ব্যবধানে সামান্য কনফিগারেশন পরিবর্তন করে নতুন হ্যান্ডসেট বাজারে আনার কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্মের উপরে একটা নেগেটিভ প্রভাব পরছে। অনেক সময় বড়দের উপরও পড়ছে।

আমাদের দেশে মোবাইল কিনে না দেওয়ার কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে। আমি নিজে দেখেছি, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের খুবই ভালো মানের মোবাইল সেট কিনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সামান্য আপডেট ভার্সন (হয়তো প্রসেসর হ্যালিও জি৮৫ থেকে বাড়িয়ে জি৯০ করা হয়েছে) যখনই বাজারে আসছে, তখনই তাদের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। দুই চার মাসের ব্যবধানে সেই নতুন সেট পাওয়ার জন্য আবার ঘরের মধ্যে অশান্তি তৈরি করছে।

মোবাইল সেট কোম্পানিগুলোর এই স্ট্র্যাটিজি পরিবর্তন হওয়া উচিত। একই সাথে আমরা যারা মোবাইল ব্যবহার করছি, আমাদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। গেম, ফেসবুকিং কিংবা ইউটিউব দেখার জন্য, তিন/চার মাস পর পর মোবাইল সেট পরিবর্তন করার দরকার হয় না।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।