তিন বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কুড়িগ্রামের রাসেলের

  • Update Time : ১২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 142

রোকন মিয়া, কুড়িগ্রাম :

মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল মিয়ার বয়স এখন ২০ বছর। আদরের বড় ছেলেকে তিন বছর ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তারা।

জানা গেছে, রাসেল মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছুটাছুটি করে এদিক ওদিক চলে যায়। বোঝেনা শীত, গরম। রাখতে চায় না গায়ে জামা-কাপড়। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে ঢিল ছোড়ে অন্যের দিকে। সন্তানের এমন আচরণের কারণে তিন বছর ধরে বাড়ির একটি টিনের ঘরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন বাবা-মা।

মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল মিয়া কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রীফলগাতি গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। তার বাবা যাদুরচর ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে মাসিক চার হাজার টাকা সম্মানীর অস্থায়ী পোস্টম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিনের একটি ঘরে রাসেলের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখানেই সারাক্ষণ ছুটাছুটি আর চিৎকারের মধ্য দিয়ে কাটছে রাসেলের জীবন।

রাসেল মিয়ার বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, আমার দুই ছেলে। তার মধ্যে রাসেল বড়। রাসেল তিন বছর আগে হঠাৎ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অভাবের সংসারে যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না তার।

তিনি বলেন, আমিই একমাত্র সংসারের উপার্জনকারী। বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে অস্থায়ী পোস্টম্যান হিসেবে মাসিক চার হাজার টাকা সম্মানী পাই। তা দিয়েই চালাতেই হয় পরিবারের চার সদস্যের যাবতীয় খরচ। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বরাদ্দ পাই না। এগুলো উপজেলা প্রশাসন করে থাকে। আমি তাকে সামান্য অর্থিক সহযোগিতা করেছি।

রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, তাকে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে সামান্য টাকাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। তার ভাতার প্রক্রিয়া অলরেডি কমপ্লিট। আশা করি আগামী সপ্তাহ থেকে সে ভাতার অন্তর্ভুক্ত হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

তিন বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কুড়িগ্রামের রাসেলের

Update Time : ১২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

রোকন মিয়া, কুড়িগ্রাম :

মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল মিয়ার বয়স এখন ২০ বছর। আদরের বড় ছেলেকে তিন বছর ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তারা।

জানা গেছে, রাসেল মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছুটাছুটি করে এদিক ওদিক চলে যায়। বোঝেনা শীত, গরম। রাখতে চায় না গায়ে জামা-কাপড়। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে ঢিল ছোড়ে অন্যের দিকে। সন্তানের এমন আচরণের কারণে তিন বছর ধরে বাড়ির একটি টিনের ঘরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন বাবা-মা।

মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল মিয়া কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রীফলগাতি গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। তার বাবা যাদুরচর ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে মাসিক চার হাজার টাকা সম্মানীর অস্থায়ী পোস্টম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিনের একটি ঘরে রাসেলের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখানেই সারাক্ষণ ছুটাছুটি আর চিৎকারের মধ্য দিয়ে কাটছে রাসেলের জীবন।

রাসেল মিয়ার বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, আমার দুই ছেলে। তার মধ্যে রাসেল বড়। রাসেল তিন বছর আগে হঠাৎ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অভাবের সংসারে যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না তার।

তিনি বলেন, আমিই একমাত্র সংসারের উপার্জনকারী। বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে অস্থায়ী পোস্টম্যান হিসেবে মাসিক চার হাজার টাকা সম্মানী পাই। তা দিয়েই চালাতেই হয় পরিবারের চার সদস্যের যাবতীয় খরচ। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বরাদ্দ পাই না। এগুলো উপজেলা প্রশাসন করে থাকে। আমি তাকে সামান্য অর্থিক সহযোগিতা করেছি।

রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, তাকে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে সামান্য টাকাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। তার ভাতার প্রক্রিয়া অলরেডি কমপ্লিট। আশা করি আগামী সপ্তাহ থেকে সে ভাতার অন্তর্ভুক্ত হবে।