গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির ডকুমেন্টারির শেয়ারিং বন্ধ করল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:১৯:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১২৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

গুজরাটের ২০০২ সালের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি সম্প্রতি একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’নামের ডকুমেন্টারিটির ইউটিউব ও টুইটার শেয়ারিং লিংক শনিবার থেকে ব্লক করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ‘বৈরি প্রচারণা ও ভারত বিরোধী আবর্জনা’ আখ্যা দিয়ে ডকুমেন্টারিটার প্রচার ব্লক করল বিজেপি।

বিজেপি সরকারের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা শনিবার (২১ জানুয়ারি) এক টুইটে জানান, ‘বিবিসি ওয়ার্ল্ড বৈরি প্রচারণা ও ভারত বিরোধী আবর্জনার ছদ্মবেশে একটি ভিডিও শেয়ার করে ডকুমেন্টারির নামে চালাচ্ছে। ভারতের সরকারের আইটি আইন ও বিধি-নিষেধ অনুযায়ী ডকুমেন্টারিটার ইউটিউব ও টুইটার শেয়ারিং লিংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ’র খবর পড়তে ফলো করুন

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউব ও টুইটার কোনো কোম্পানিই ভারতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রবিবার (২২ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে বিবিসি। দুই পর্বের এই ডকুমেন্টারির প্রথম পর্ব ১৭ জানুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে দাঙ্গায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। ডকুমেন্টারিটি ইতোমধ্যে ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিবিসির ডকুমেন্টারিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে মন্তব্য করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই দিন নিউইয়র্কভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ভ্যারাইটিকে নিজেদের ডকুমেন্টারিটি নিবিড় গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিবিসির এক মুখপাত্র।

ভারত সরকারের আপত্তি

১৭ জানুয়ারি ডকুমেন্টারিটি ইউটিউবে মুক্তি পাওয়ার পর ভারতে হৈ চৈ পড়ে যায়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘এই ডকুমেন্টারি পক্ষপাতমূলক। এতে নৈর্ব্যক্তিকতার অভাব রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এতে ঔপনিবেশিক মানসিকতা নগ্নভাবে ধরা পড়েছে। এটা স্রেফ প্রোপাগান্ডা।’

বিবিসির জবাব

বিবিসির মুখপাত্র ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এই ডকুমেন্টারি তৈরি করতে উচ্চ পর্যায়ের সম্পাদকীয় মান বজায় রেখে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এটা তৈরির জন্য বিভিন্ন পক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এমনকি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের মত নেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে নানান ধরনের নথিপত্র।’

তবে বিবিসি মুখপাত্রের অভিযোগ, ডকুমেন্টারিটি তৈরি করতে ভারতের সরকারের মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মত দিতে রাজি হননি।

ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘ডকুমেন্টারিটির দুই পর্বে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দু ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যকার উত্তেজনাকে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর বুঝতে চেষ্টা করা হয়েছে, এই দুই সম্প্রদায়ের উত্তেজনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির রাজনীতির সম্পর্কই বা কী?’

ডকুমেন্টারির মূল রসদ

দুই পর্বের ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারিতে নানান নথিপত্র, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং বিশেষজ্ঞ মতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পরপরই ঘটনা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাজ্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠায়। তারা খেটেখুঁটে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। তবে ওই প্রতিবেদনটি কখনও প্রকাশ করা হয়নি।

ডকুমেন্টারিতে কী বলা হয়েছে

যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিবেদনের সারমর্ম ছিল, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সহিংসতা যতটা বলে প্রচার করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তা তার চেয়ে অনেক ভয়াবহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এটাও স্পষ্ট যে, দাঙ্গা চলাকালে ২৭ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। দাঙ্গা বন্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিতে তিনি তাদের আদেশ দেন।

পরবর্তীতে দায়মুক্তির পরিবেশ তৈরির পেছনেও মোদি সরাসরি জড়িত। কিন্তু দাঙ্গার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা বারবার অস্বীকার করেছেন মোদি।

ডকুমেন্টারির ভাষ্যমতে, যুক্তরাজ্য সরকারের তদন্ত দলে ছিলেন এমন এক সাবেক ব্রিটিশ কূটনীতিক বলেন, ‘গুজরাট দাঙ্গার পরিকল্পনা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।’

গুজরাট দাঙ্গা

জানা যায়, গুজরাটের পঞ্চমহল জেলার গোধরা থেকে একটি ট্রেন হিন্দু পুণ্যার্থীদের নিয়ে রওয়ানা করে। এটি ২৭ ফেব্রুয়ারি অযোধ্যায় পৌঁছালে মানুষের একটি দঙ্গল বা মব তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত ৫৮ জন হিন্দু নিহত হন।

এরপর গুজরাটে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। মার্চ পর্যন্ত তা চলে। সরকারি প্রতিবেদন মতে, দাঙ্গায় ৭৯০ জন মুসলমান ও ২৫৪ জন হিন্দু নিহত হন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজ্য সরকার চাইলেই অল্প সময়ে দাঙ্গার লাগাম টানতে পারতেন। কিন্তু গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের দায়মুক্তি

গুজরাট দাঙ্গা খতিয়ে দেখতে ২০০৮ সালে একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি দাখিল করা সিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি ও আরও ৬৩ জনের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার ‘বিচারযোগ্য প্রমাণ’ কোনো প্রমাণ নেই। ২০১৩ সালে প্রতিবেদনটি একজন ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করেন।

২০১৩ সালেই সিটের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জাকিয়া জাফরি নামের এক নারী সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন। ২০২২ সালের ২৪ জুন তা বাতিল করে দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। জাকিয়া গুজরাট দাঙ্গায় নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী।

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে এক মবের শিকার হয়ে ৬৯ জন নিহত হন। এহসান জাফরি তাদের একজন।

ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় পর্ব

স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিসির ডকুমেন্টারিটির দ্বিতীয় পর্ব ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর হিন্দু-মুসলমান উত্তেজনাকে মোদি সরকার কীভাবে ব্যবহার করেছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।

সূত্র : স্ক্রলডটইন, রয়টার্স।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির ডকুমেন্টারির শেয়ারিং বন্ধ করল ভারত

Update Time : ০৪:১৯:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

গুজরাটের ২০০২ সালের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি সম্প্রতি একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’নামের ডকুমেন্টারিটির ইউটিউব ও টুইটার শেয়ারিং লিংক শনিবার থেকে ব্লক করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ‘বৈরি প্রচারণা ও ভারত বিরোধী আবর্জনা’ আখ্যা দিয়ে ডকুমেন্টারিটার প্রচার ব্লক করল বিজেপি।

বিজেপি সরকারের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা শনিবার (২১ জানুয়ারি) এক টুইটে জানান, ‘বিবিসি ওয়ার্ল্ড বৈরি প্রচারণা ও ভারত বিরোধী আবর্জনার ছদ্মবেশে একটি ভিডিও শেয়ার করে ডকুমেন্টারির নামে চালাচ্ছে। ভারতের সরকারের আইটি আইন ও বিধি-নিষেধ অনুযায়ী ডকুমেন্টারিটার ইউটিউব ও টুইটার শেয়ারিং লিংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ’র খবর পড়তে ফলো করুন

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউব ও টুইটার কোনো কোম্পানিই ভারতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রবিবার (২২ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে বিবিসি। দুই পর্বের এই ডকুমেন্টারির প্রথম পর্ব ১৭ জানুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে দাঙ্গায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। ডকুমেন্টারিটি ইতোমধ্যে ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিবিসির ডকুমেন্টারিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে মন্তব্য করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই দিন নিউইয়র্কভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ভ্যারাইটিকে নিজেদের ডকুমেন্টারিটি নিবিড় গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিবিসির এক মুখপাত্র।

ভারত সরকারের আপত্তি

১৭ জানুয়ারি ডকুমেন্টারিটি ইউটিউবে মুক্তি পাওয়ার পর ভারতে হৈ চৈ পড়ে যায়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘এই ডকুমেন্টারি পক্ষপাতমূলক। এতে নৈর্ব্যক্তিকতার অভাব রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এতে ঔপনিবেশিক মানসিকতা নগ্নভাবে ধরা পড়েছে। এটা স্রেফ প্রোপাগান্ডা।’

বিবিসির জবাব

বিবিসির মুখপাত্র ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এই ডকুমেন্টারি তৈরি করতে উচ্চ পর্যায়ের সম্পাদকীয় মান বজায় রেখে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এটা তৈরির জন্য বিভিন্ন পক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এমনকি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের মত নেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে নানান ধরনের নথিপত্র।’

তবে বিবিসি মুখপাত্রের অভিযোগ, ডকুমেন্টারিটি তৈরি করতে ভারতের সরকারের মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মত দিতে রাজি হননি।

ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘ডকুমেন্টারিটির দুই পর্বে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দু ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যকার উত্তেজনাকে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর বুঝতে চেষ্টা করা হয়েছে, এই দুই সম্প্রদায়ের উত্তেজনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির রাজনীতির সম্পর্কই বা কী?’

ডকুমেন্টারির মূল রসদ

দুই পর্বের ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারিতে নানান নথিপত্র, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং বিশেষজ্ঞ মতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পরপরই ঘটনা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাজ্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠায়। তারা খেটেখুঁটে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। তবে ওই প্রতিবেদনটি কখনও প্রকাশ করা হয়নি।

ডকুমেন্টারিতে কী বলা হয়েছে

যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিবেদনের সারমর্ম ছিল, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সহিংসতা যতটা বলে প্রচার করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তা তার চেয়ে অনেক ভয়াবহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এটাও স্পষ্ট যে, দাঙ্গা চলাকালে ২৭ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। দাঙ্গা বন্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিতে তিনি তাদের আদেশ দেন।

পরবর্তীতে দায়মুক্তির পরিবেশ তৈরির পেছনেও মোদি সরাসরি জড়িত। কিন্তু দাঙ্গার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা বারবার অস্বীকার করেছেন মোদি।

ডকুমেন্টারির ভাষ্যমতে, যুক্তরাজ্য সরকারের তদন্ত দলে ছিলেন এমন এক সাবেক ব্রিটিশ কূটনীতিক বলেন, ‘গুজরাট দাঙ্গার পরিকল্পনা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।’

গুজরাট দাঙ্গা

জানা যায়, গুজরাটের পঞ্চমহল জেলার গোধরা থেকে একটি ট্রেন হিন্দু পুণ্যার্থীদের নিয়ে রওয়ানা করে। এটি ২৭ ফেব্রুয়ারি অযোধ্যায় পৌঁছালে মানুষের একটি দঙ্গল বা মব তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত ৫৮ জন হিন্দু নিহত হন।

এরপর গুজরাটে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। মার্চ পর্যন্ত তা চলে। সরকারি প্রতিবেদন মতে, দাঙ্গায় ৭৯০ জন মুসলমান ও ২৫৪ জন হিন্দু নিহত হন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজ্য সরকার চাইলেই অল্প সময়ে দাঙ্গার লাগাম টানতে পারতেন। কিন্তু গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের দায়মুক্তি

গুজরাট দাঙ্গা খতিয়ে দেখতে ২০০৮ সালে একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি দাখিল করা সিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি ও আরও ৬৩ জনের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার ‘বিচারযোগ্য প্রমাণ’ কোনো প্রমাণ নেই। ২০১৩ সালে প্রতিবেদনটি একজন ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করেন।

২০১৩ সালেই সিটের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জাকিয়া জাফরি নামের এক নারী সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন। ২০২২ সালের ২৪ জুন তা বাতিল করে দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। জাকিয়া গুজরাট দাঙ্গায় নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী।

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে এক মবের শিকার হয়ে ৬৯ জন নিহত হন। এহসান জাফরি তাদের একজন।

ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় পর্ব

স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিসির ডকুমেন্টারিটির দ্বিতীয় পর্ব ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর হিন্দু-মুসলমান উত্তেজনাকে মোদি সরকার কীভাবে ব্যবহার করেছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।

সূত্র : স্ক্রলডটইন, রয়টার্স।