খুন ও গুম মামলার আসামী প্রায় একযুগ পর একই ঘটনায় মামলার বাদী

  • Update Time : ০৫:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
  • / 176

জামালপুর প্রতিনিধি: 

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খুন ও গুম মামলার আসামী এগারো বছর পর প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর জন‌্য একই ঘটনায় মামলার বাদী হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বিল বালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মহাদান ইউপির বিল বালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামের মৃত মোকাদ্দেছ ফকির এর ছেলে আঃ খালেক ফকিরের সাথে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান, মিনহাজ উদ্দিন, মানিক মিয়া, মেয়ে ঝিনুক আক্তার ও পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা প্রতারণা করে জমি লিখে নেয়। এ বিষয় নিয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের সাথে আব্দুল খালেকের বিরোধ চলছিল।এ বিরোধের জের ধরে আব্দুল খালেকের সাথে বিভিন্ন সময় স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে অসদাচরণ করায় সরিষাবাড়ী থানায় তিনি একটি জিডি করেন। পরে প্রতারণা করে নেওয়া জমি ফেরত পেতে আব্দুল খালেক সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, জামালপুরে মামলা করেন। যার নং-৭১/২০১০ইং। সরিষাবাড়ী সাবরেজিস্ট্রী অফিসে ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রীকৃত হেবার ঘোষণাপত্র দলিল যার নং-৫৬৫০ পন্ডের জন‌্য বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন আ: খালেক। উক্ত মামলায় স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ মেয়ে ঝিনুক আক্তার, পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা, ছেলে মিজানুর রহমান ফকির, মিনহাজ উদ্দিন ফকির ও মানিক মিয়াকে আসামি করা হয়।

প্রতারণামূলকভাবে বিলবালিয়া মৌজার ৪টি দাগে ৫১ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রী করে নেওয়ায় এ মামলাটি করেন আব্দুল খালেক। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১১ ইং সালের ১৬ জানুয়ারী আব্দুল খালেক নিখোঁজ হলে আদালত বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ করে দেন। নিখোঁজের ঘটনায় তার ছেলে মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-৬৮৮, তারিখ-১৬/২০১১ইং। এ ঘটনায় আঃ খালেকের বড় বোন ফজিলা বেগম জামালপুরের কগনিজেন্স কোর্ট (খ) অঞ্চল আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলায় আব্দুল খালেকের স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান ও আলহাজ (মানিক মিয়া) এর বিরুদ্ধে হত‌্যার পর লাশ কোন গোপন জায়গায় পুতিয়া বা আটক কিংবা মারপিট করে হত‌্যা করে গুম বা পঙ্গু এবং কোন স্থানে আটক রাখতে পারে এমন অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটির ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব‌্যবস্থা গ্রহণ করতে সরিষাবাড়ী থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ওসি সরিষাবাড়ী থানায় মামলা রুজু করেন। যার নং ১৫, তারিখঃ ২৩/০৫/২০১১ইং। সেই সাথে সরিষাবাড়ী থানার এসআই মাজহারুল ইসলামকে তদন্তপূর্বক আইনগত ব‌্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন ওসি। উক্ত মামলার বাদী ফজিলা বেগমের সাথে পারিবারিকভাবে সমঝোতায় আপোষ মিমাংসায় পার পেয়ে যায় মামলার বিবাদীগণ।

আব্দুল খালেক ফকিরের কাছ থেকে একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ২০১০ সালে বিলবালিয়া মৌজার ১৯০ নং দাগে ১০ শতাংশ ভূমি রেজিস্ট্রী করেন। যাহা বিলবালিয়া (ধোপাদহ) নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার নামে ৭ শতাংশ এবং সাইফুল ইসলাম এর পারিবারিক কবর স্থানের জন‌্য ৩ শতাংশ নির্ধারিত করা হয়। উক্ত ভূমি আ: খালেক ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমান ১০/১৫ জন ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখে জবর দখল করতে যায়। এসময় বিলবালিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে এনামুল হক সহ তার লোকজন জবর দখলকারীদের বাধা প্রদান করলে মারপিট করে ৩ জনকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামী করে সরিষাবাড়ী থানায় এনামুল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১০, তারিখ-১০/০২/২০২২ইং। উক্ত মামলায় ২নং আসামী কামাল ফকিরকে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ওই মামলার আসামী জামিনে এসে মরহুম সাইফুল ইসলামের পরিবারকে বেকায়দায় ফেলতে মিজানুর রহমানের ছোট বোনকে ভিকটিম বানিয়ে একটি মিথ‌্যা ধর্ষণ মামলার অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ও অভিযোগ মিথ‌্যা প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়।

এরপরেও ১১ বছর পূর্বে নিখোঁজ আব্দুল খালেককে অপহরণ ও গুমকারী হিসেবে এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের, বিভিন্ন স্থানে পোস্টার টাঙ্গানো এবং মিথ‌্যা সংবাদ প্রকাশ করছে আ: খালেকের গুম ও হত‌্যা মামলার আসামী মিজানুর রহমান।

খুন ও গুম মামলার আসামীর দায়ের করা ১১ বছর পর একই ব‌্যক্তির কল্পকাহিনী নিয়ে হয়রানীমূলক মামলা থেকে অব‌্যাহতি প্রদানসহ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং সচেতন মহল।

মিথ‌্যা মামলা দায়েরকারী মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করে রবিবার (৩ রা এপ্রিল) সকাল ১১ টায় ভুক্তভোগী এনামুল হকের নিজ বাড়ী বিলবালিয়া (ধোপদহ) এলাকায় তার পরিবার পরিজন এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এ সময় এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ, হাফিজুর রহমান ও এলাকাবাসীর পক্ষে দুলাল মিয়া, আব্দুল লতিফ সহ গণ্যমান্য ব‌্যক্তিবর্গ উপস্হিত ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

খুন ও গুম মামলার আসামী প্রায় একযুগ পর একই ঘটনায় মামলার বাদী

Update Time : ০৫:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

জামালপুর প্রতিনিধি: 

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খুন ও গুম মামলার আসামী এগারো বছর পর প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর জন‌্য একই ঘটনায় মামলার বাদী হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বিল বালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মহাদান ইউপির বিল বালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামের মৃত মোকাদ্দেছ ফকির এর ছেলে আঃ খালেক ফকিরের সাথে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান, মিনহাজ উদ্দিন, মানিক মিয়া, মেয়ে ঝিনুক আক্তার ও পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা প্রতারণা করে জমি লিখে নেয়। এ বিষয় নিয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের সাথে আব্দুল খালেকের বিরোধ চলছিল।এ বিরোধের জের ধরে আব্দুল খালেকের সাথে বিভিন্ন সময় স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে অসদাচরণ করায় সরিষাবাড়ী থানায় তিনি একটি জিডি করেন। পরে প্রতারণা করে নেওয়া জমি ফেরত পেতে আব্দুল খালেক সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, জামালপুরে মামলা করেন। যার নং-৭১/২০১০ইং। সরিষাবাড়ী সাবরেজিস্ট্রী অফিসে ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রীকৃত হেবার ঘোষণাপত্র দলিল যার নং-৫৬৫০ পন্ডের জন‌্য বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন আ: খালেক। উক্ত মামলায় স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ মেয়ে ঝিনুক আক্তার, পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা, ছেলে মিজানুর রহমান ফকির, মিনহাজ উদ্দিন ফকির ও মানিক মিয়াকে আসামি করা হয়।

প্রতারণামূলকভাবে বিলবালিয়া মৌজার ৪টি দাগে ৫১ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রী করে নেওয়ায় এ মামলাটি করেন আব্দুল খালেক। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১১ ইং সালের ১৬ জানুয়ারী আব্দুল খালেক নিখোঁজ হলে আদালত বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ করে দেন। নিখোঁজের ঘটনায় তার ছেলে মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-৬৮৮, তারিখ-১৬/২০১১ইং। এ ঘটনায় আঃ খালেকের বড় বোন ফজিলা বেগম জামালপুরের কগনিজেন্স কোর্ট (খ) অঞ্চল আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলায় আব্দুল খালেকের স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান ও আলহাজ (মানিক মিয়া) এর বিরুদ্ধে হত‌্যার পর লাশ কোন গোপন জায়গায় পুতিয়া বা আটক কিংবা মারপিট করে হত‌্যা করে গুম বা পঙ্গু এবং কোন স্থানে আটক রাখতে পারে এমন অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটির ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব‌্যবস্থা গ্রহণ করতে সরিষাবাড়ী থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ওসি সরিষাবাড়ী থানায় মামলা রুজু করেন। যার নং ১৫, তারিখঃ ২৩/০৫/২০১১ইং। সেই সাথে সরিষাবাড়ী থানার এসআই মাজহারুল ইসলামকে তদন্তপূর্বক আইনগত ব‌্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন ওসি। উক্ত মামলার বাদী ফজিলা বেগমের সাথে পারিবারিকভাবে সমঝোতায় আপোষ মিমাংসায় পার পেয়ে যায় মামলার বিবাদীগণ।

আব্দুল খালেক ফকিরের কাছ থেকে একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ২০১০ সালে বিলবালিয়া মৌজার ১৯০ নং দাগে ১০ শতাংশ ভূমি রেজিস্ট্রী করেন। যাহা বিলবালিয়া (ধোপাদহ) নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার নামে ৭ শতাংশ এবং সাইফুল ইসলাম এর পারিবারিক কবর স্থানের জন‌্য ৩ শতাংশ নির্ধারিত করা হয়। উক্ত ভূমি আ: খালেক ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমান ১০/১৫ জন ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখে জবর দখল করতে যায়। এসময় বিলবালিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে এনামুল হক সহ তার লোকজন জবর দখলকারীদের বাধা প্রদান করলে মারপিট করে ৩ জনকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামী করে সরিষাবাড়ী থানায় এনামুল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১০, তারিখ-১০/০২/২০২২ইং। উক্ত মামলায় ২নং আসামী কামাল ফকিরকে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ওই মামলার আসামী জামিনে এসে মরহুম সাইফুল ইসলামের পরিবারকে বেকায়দায় ফেলতে মিজানুর রহমানের ছোট বোনকে ভিকটিম বানিয়ে একটি মিথ‌্যা ধর্ষণ মামলার অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ও অভিযোগ মিথ‌্যা প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়।

এরপরেও ১১ বছর পূর্বে নিখোঁজ আব্দুল খালেককে অপহরণ ও গুমকারী হিসেবে এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের, বিভিন্ন স্থানে পোস্টার টাঙ্গানো এবং মিথ‌্যা সংবাদ প্রকাশ করছে আ: খালেকের গুম ও হত‌্যা মামলার আসামী মিজানুর রহমান।

খুন ও গুম মামলার আসামীর দায়ের করা ১১ বছর পর একই ব‌্যক্তির কল্পকাহিনী নিয়ে হয়রানীমূলক মামলা থেকে অব‌্যাহতি প্রদানসহ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং সচেতন মহল।

মিথ‌্যা মামলা দায়েরকারী মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করে রবিবার (৩ রা এপ্রিল) সকাল ১১ টায় ভুক্তভোগী এনামুল হকের নিজ বাড়ী বিলবালিয়া (ধোপদহ) এলাকায় তার পরিবার পরিজন এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এ সময় এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ, হাফিজুর রহমান ও এলাকাবাসীর পক্ষে দুলাল মিয়া, আব্দুল লতিফ সহ গণ্যমান্য ব‌্যক্তিবর্গ উপস্হিত ছিলেন।