কফির গুণাগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • / ৩২৬ Time View

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

সারা দুনিয়ায় যদি জনপ্রিয়তার বিচার করা হয় তাহলে কফি নিঃসন্দেহে পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকবে। এতে শুধু অ্যান্টি অক্সিডেন্টই নয়, আছে নানারকম পুষ্টি উপাদান। কফির রয়েছে নানারকম গুণাগুণ। তাই একে বলা যায় স্বাস্থ্যকর পানীয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কফি পান করে তাদের গুরুতর অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আজ বিশ্ব কফি দিবস উপলক্ষে রইলো কফির কিছু গুণাবলী।

১. কার্যক্ষমতা বাড়ায় কফি

কফিতে থাকা ক্যাফেইন মানুষের মস্তিষ্কে বাঁধাদানকারী নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসাইনকে ব্লক করে। ফলে নোরপাইনফ্রাইন ও ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায় যা নিউরনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। কফি পান করলে এই ক্যাফেইন রক্তে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যা আমাদের কার্যক্ষমতা, মেজাজ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতিতে সাহায্য করে। ফলে আপনি তুলনামূলক কম ক্লান্ত অনুভব করবেন।

২. চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে

বাজারে ওজন কমানোর জন্য পাওয়া যায় এমন প্রায় সব ওষুধেই ক্যাফেইন থাকে। অল্প কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে ক্যাফেইন একটি যা চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এর কারণ, ক্যাফেইন প্রায় ৩ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত আমাদের মেটাবোলিক রেট বা বিপাকের গতি বাড়ায়।

৩. নাটকীয় উন্নতি শারীরিক কার্যক্ষমতায়

ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে যা চর্বিকে ভাঙতে উৎসাহ জাগায়। একইসঙ্গে এটি আমাদের রক্তের এপিফ্রাইন (অ্যাদ্রেনালাইন) বাড়াতে সাহায্য করে। এই হরমোন আমাদের তীব্র শারীরিক পরিশ্রম করতে উদ্দীপনা জাগায়। এটি শরীরে জমা বাড়তি চর্বি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনে উৎসাহ জাগায়।

৪. প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়

এক কাপ কফিতে নানারকম পুষ্টি উপাদান থাকে। এক কাপ কালো কফিতে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২), ৬ শতাংশ প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম, ২ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ও নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) থাকে।

৫. টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এটি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা ইনসুলিন প্রতিরোধের মাধ্যমে তৈরি হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কফি পান করে তাদের ২৩ থেকে ৫০ শতাংশের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২২ জন কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তির উপর পরিচালিত ১৮ টি গবেষণায় দেখা গেছে তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে অন্তত ৭ শতাংশ।

৬. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় কফি

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় কফি। ফলে এটি আলঝেইমার্সের মত স্মৃতিবিলোপকারী রোগ প্রতিরোধ করে। সাধারণত ৬৫ এর অধিক বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে যার আসলে কোন চিকিৎসা নাই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে উপকার মেলে কফি পানেও।

৭. পারকিনসন’স রোগের ঝুঁকি কমায়

স্নায়ুতন্ত্রের আরও একটি পরিচিত রোগ হল পারকিনসন’স যাতে আক্রান্ত হওয়ার হার আলঝেইমার্সের ঠিক পরেই। এই রোগে আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণকারী নিউরন ধ্বংস হয়ে যায়। আলঝেইমার্সের মতই এই রোগেরও কোন চিকিৎসা না থাকলেও এটি প্রতিরোধ করা যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পানের অভ্যাস আছে যাদের তাদের অন্তত ৩২ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পারকিনসন’স রোগের ঝুঁকি কম থাকে।

৮. আপনার লিভারকে রক্ষা করতে পারে

আমাদের শরীরে লিভারের শত শত ভূমিকা। একইসঙ্গে বিভিন্ন রোগে সবার আগে আক্রান্ত হয় লিভার যেমন হেপাটাইটিস ও ফ্যাটি লিভারের মত রোগ। এসব রোগে সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে যার ফলে লিভারে ঘা হতে পারে। কফি এই সিরোসিস থেকে লিভারকে রক্ষা করে।

৯. বিষণ্ণতা কমায় ও আনন্দিত রাখে

বিষন্নতায় ভোগা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে। এর থেকে রক্ষা পেতে অনেকটাই সাহায্য করে কফি। ২ লাখ ৮ হাজার ৪২৪ জনের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে ৪ কাপ বা তার বেশি কফি পান করে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভুগে আত্মহত্যার প্রবণতা ৫৩ শতাংশ কম।

১০. কিছু কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

শরীরের কোন অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধিকেই ক্যানসার বলে। বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যানসার। আর সব ক্যানসারের মধ্যে লিভার ক্যানসার মারা যাওয়ার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আর কলোরেক্টাল ক্যানসার আছে চতুর্থ অবস্থানে। লিভার ও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় কফি।

১১. হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়

ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়ায় বলে দাবি করেন অনেকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কফি পানে উপকার পাওয়া যায়। নানা গবেষণায় দেখা গেছে এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

১২. আয়ু বাড়ায়

যেহেতু কফি পানে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে তাই এটি আয়ু বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বড় দুটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত কফি পানে নারীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ মৃত্যুহার কমে আর পুরুষদের ক্ষেত্রে কমে ২০ শতাংশ।

১৩. অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়

কফিতে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কফিতে ফল ও শাকসবজির তুলনায় বেশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। একারণেই এটি বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কফির গুণাগুণ

Update Time : ০৯:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

সারা দুনিয়ায় যদি জনপ্রিয়তার বিচার করা হয় তাহলে কফি নিঃসন্দেহে পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকবে। এতে শুধু অ্যান্টি অক্সিডেন্টই নয়, আছে নানারকম পুষ্টি উপাদান। কফির রয়েছে নানারকম গুণাগুণ। তাই একে বলা যায় স্বাস্থ্যকর পানীয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কফি পান করে তাদের গুরুতর অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আজ বিশ্ব কফি দিবস উপলক্ষে রইলো কফির কিছু গুণাবলী।

১. কার্যক্ষমতা বাড়ায় কফি

কফিতে থাকা ক্যাফেইন মানুষের মস্তিষ্কে বাঁধাদানকারী নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসাইনকে ব্লক করে। ফলে নোরপাইনফ্রাইন ও ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায় যা নিউরনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। কফি পান করলে এই ক্যাফেইন রক্তে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যা আমাদের কার্যক্ষমতা, মেজাজ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতিতে সাহায্য করে। ফলে আপনি তুলনামূলক কম ক্লান্ত অনুভব করবেন।

২. চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে

বাজারে ওজন কমানোর জন্য পাওয়া যায় এমন প্রায় সব ওষুধেই ক্যাফেইন থাকে। অল্প কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে ক্যাফেইন একটি যা চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এর কারণ, ক্যাফেইন প্রায় ৩ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত আমাদের মেটাবোলিক রেট বা বিপাকের গতি বাড়ায়।

৩. নাটকীয় উন্নতি শারীরিক কার্যক্ষমতায়

ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে যা চর্বিকে ভাঙতে উৎসাহ জাগায়। একইসঙ্গে এটি আমাদের রক্তের এপিফ্রাইন (অ্যাদ্রেনালাইন) বাড়াতে সাহায্য করে। এই হরমোন আমাদের তীব্র শারীরিক পরিশ্রম করতে উদ্দীপনা জাগায়। এটি শরীরে জমা বাড়তি চর্বি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনে উৎসাহ জাগায়।

৪. প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়

এক কাপ কফিতে নানারকম পুষ্টি উপাদান থাকে। এক কাপ কালো কফিতে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২), ৬ শতাংশ প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম, ২ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ও নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) থাকে।

৫. টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এটি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা ইনসুলিন প্রতিরোধের মাধ্যমে তৈরি হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কফি পান করে তাদের ২৩ থেকে ৫০ শতাংশের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২২ জন কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তির উপর পরিচালিত ১৮ টি গবেষণায় দেখা গেছে তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে অন্তত ৭ শতাংশ।

৬. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় কফি

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় কফি। ফলে এটি আলঝেইমার্সের মত স্মৃতিবিলোপকারী রোগ প্রতিরোধ করে। সাধারণত ৬৫ এর অধিক বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে যার আসলে কোন চিকিৎসা নাই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে উপকার মেলে কফি পানেও।

৭. পারকিনসন’স রোগের ঝুঁকি কমায়

স্নায়ুতন্ত্রের আরও একটি পরিচিত রোগ হল পারকিনসন’স যাতে আক্রান্ত হওয়ার হার আলঝেইমার্সের ঠিক পরেই। এই রোগে আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণকারী নিউরন ধ্বংস হয়ে যায়। আলঝেইমার্সের মতই এই রোগেরও কোন চিকিৎসা না থাকলেও এটি প্রতিরোধ করা যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পানের অভ্যাস আছে যাদের তাদের অন্তত ৩২ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পারকিনসন’স রোগের ঝুঁকি কম থাকে।

৮. আপনার লিভারকে রক্ষা করতে পারে

আমাদের শরীরে লিভারের শত শত ভূমিকা। একইসঙ্গে বিভিন্ন রোগে সবার আগে আক্রান্ত হয় লিভার যেমন হেপাটাইটিস ও ফ্যাটি লিভারের মত রোগ। এসব রোগে সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে যার ফলে লিভারে ঘা হতে পারে। কফি এই সিরোসিস থেকে লিভারকে রক্ষা করে।

৯. বিষণ্ণতা কমায় ও আনন্দিত রাখে

বিষন্নতায় ভোগা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে। এর থেকে রক্ষা পেতে অনেকটাই সাহায্য করে কফি। ২ লাখ ৮ হাজার ৪২৪ জনের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে ৪ কাপ বা তার বেশি কফি পান করে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভুগে আত্মহত্যার প্রবণতা ৫৩ শতাংশ কম।

১০. কিছু কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

শরীরের কোন অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধিকেই ক্যানসার বলে। বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যানসার। আর সব ক্যানসারের মধ্যে লিভার ক্যানসার মারা যাওয়ার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আর কলোরেক্টাল ক্যানসার আছে চতুর্থ অবস্থানে। লিভার ও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় কফি।

১১. হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়

ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়ায় বলে দাবি করেন অনেকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কফি পানে উপকার পাওয়া যায়। নানা গবেষণায় দেখা গেছে এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

১২. আয়ু বাড়ায়

যেহেতু কফি পানে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে তাই এটি আয়ু বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বড় দুটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত কফি পানে নারীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ মৃত্যুহার কমে আর পুরুষদের ক্ষেত্রে কমে ২০ শতাংশ।

১৩. অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়

কফিতে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কফিতে ফল ও শাকসবজির তুলনায় বেশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। একারণেই এটি বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয়।