ওজন কমাতে কী খাবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৫৪:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২
  • / ২২৯ Time View

 

স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। আর এ নিয়ে চিন্তিত অনেকে। ওজন কমাতে ডায়েটে আনতে হবে পরিবর্তন। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

ওজন কমাতে কী খাওয়া যেতে পারে, তার পরামর্শ দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, স্থূলতা বর্তমানে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থূলতা বলতে আমরা বুঝি, উচ্চতা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তির কাম্য ওজনের চেয়ে ১০ ভাগ ওজন বেশি থাকে।

নুসরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশেও এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এর কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। যেমন—কিডনির রোগ, লিভারের রোগ, ডায়াবেটিস ও কার্ডিয়াক সমস্যা। ওবেসিটি বা স্থূলতার জন্য যেটি আমাদের করতে হবে, অর্থাৎ মূলমন্ত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে জীবনধারণ পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, সময়মতো খাওয়া, সময়মতো ঘুমানো ইত্যাদি। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মূল কথাই হচ্ছে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা।

ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স ডায়েট অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি ব্যালেন্স ডায়েট অনুসরণ না করি, তাহলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়, যেমন বিভিন্ন ধরনের ডেফিসিয়েন্সি বা ঘাটতি হয়ে থাকে—ভিটামিনের ঘাটতি, মিনারেলের ঘাটতি। অনেকের ধারণা, ওজন কমানো মানেই না খেয়ে থাকা। এ ধারণা একেবারেই ভুল। ওজন কমাতে হবে খেয়ে, না খেয়ে নয়। সুতরাং, আমরা সারা দিনের যে খাদ্যতালিকা তৈরি করব, সেখানে অবশ্যই পরিমাণমতো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকতে হবে, প্রোটিন থাকতে হবে, ফলমূল থাকতে হবে, শাকসবজি থাকতে হবে। আর এগুলো যদি আমরা মেনে না চলি বা প্রোপার ব্যালেন্স ডায়েট মেইনটেইন না করি, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়—মাথার চুল পড়ে যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, নখ ভেঙে যায় এবং দেখতেও রোগার মতো লাগে। তাই ওজন কমানোর জন্য সুষম খাবার খেতে হবে।

পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান আরো বলেন, আমাদের ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালোরি হিসাব করে খাদ্যতালিকা করতে হবে। এ খাদ্যতালিকায় প্রত্যেকটি সেকশন থেকে আমরা খাবার নির্বাচন করব। যেমন প্রোটিন, ফলমূল, শাকসবজি, মিনারেলস ইত্যাদি। ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকাকে আমরা পাঁচ থেকে ছয় বেলায় ভাগ করে নেব। যেমন সকালের দিকে আমরা যে খাবার খাব, সেটি অবশ্যই ক্যালোরির একটি বড় অংশ হতে হবে। আমরা যদি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে; পরোটা বা ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড খাব; ওমলেট বা পোচের পরিবর্তে আমরা সেদ্ধ ডিম খাব। চিকেন স্যুপ বা ইয়োগার্ট রাখতে পারি।

লাঞ্চ ও ডিনারে আমরা যে মাছের তরকারি নির্বাচন করব, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাছটাকে না ভেজে রান্না করতে হবে। কারণ, আমাদের জানতে হবে অবশ্যই যে এক চা চামচ তেল থেকে ৪৫ কিলোক্যালোরি পেয়ে থাকি। তাই ওজন কমাতে চাইলে যথাসম্ভব তেলের পরিমাণ কমাতে হবে।

বিকেলে নাশতায় অবশ্যই ফ্যাটি ফুড না খেয়ে ছোলা, সালাদ, ফ্রুটস সালাদ বা ফ্রুটস জুস খেতে পারি। সকালের তুলনায় আমাদের অবশ্যই রাতে কম খেতে হবে। কারণ, সকালের নাশতা খাওয়ার পর আমাদের সারা দিন প্রচুর কাজ করতে হয় এবং আমরা প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করে থাকি। কিন্তু রাতে খাওয়ার পর আমাদের খুব একটা শারীরিক কার্যক্রম থাকে না বা ক্যালোরি বার্ন হওয়ার মতো তেমন সুযোগ থাকে না। তাই সকালের তুলনায় বা অন্যান্য মিলের তুলনায় রাতে পরিমাণে কম খেতে হবে। আমরা যদি প্রতি বেলার খাবারের পর অন্তত এক কাপ করে টক দই খাই, সেটা শরীরের চর্বিকে বার্ন করতে সাহায্য করবে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন পিস বা পাঁচ পিস বাদাম খেতে হবে। বাদাম বডির ফ্যাট বার্ন করে থাকে।

এ ছাড়া আমরা ওটমিল নিতে পারি, সালাদ নেব প্রচুর। মোটকথা ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের অবশ্যই শর্করাজাতীয় খাবার কম পরিমাণে খেতে হবে। প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি থাকতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। এ ছাড়া সময়মতো ঘুমানো ও সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের কাম্য ওজন পাব।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ওজন কমাতে কী খাবেন

Update Time : ০৯:৫৪:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২

 

স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। আর এ নিয়ে চিন্তিত অনেকে। ওজন কমাতে ডায়েটে আনতে হবে পরিবর্তন। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

ওজন কমাতে কী খাওয়া যেতে পারে, তার পরামর্শ দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, স্থূলতা বর্তমানে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থূলতা বলতে আমরা বুঝি, উচ্চতা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তির কাম্য ওজনের চেয়ে ১০ ভাগ ওজন বেশি থাকে।

নুসরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশেও এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এর কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। যেমন—কিডনির রোগ, লিভারের রোগ, ডায়াবেটিস ও কার্ডিয়াক সমস্যা। ওবেসিটি বা স্থূলতার জন্য যেটি আমাদের করতে হবে, অর্থাৎ মূলমন্ত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে জীবনধারণ পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, সময়মতো খাওয়া, সময়মতো ঘুমানো ইত্যাদি। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মূল কথাই হচ্ছে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা।

ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স ডায়েট অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি ব্যালেন্স ডায়েট অনুসরণ না করি, তাহলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়, যেমন বিভিন্ন ধরনের ডেফিসিয়েন্সি বা ঘাটতি হয়ে থাকে—ভিটামিনের ঘাটতি, মিনারেলের ঘাটতি। অনেকের ধারণা, ওজন কমানো মানেই না খেয়ে থাকা। এ ধারণা একেবারেই ভুল। ওজন কমাতে হবে খেয়ে, না খেয়ে নয়। সুতরাং, আমরা সারা দিনের যে খাদ্যতালিকা তৈরি করব, সেখানে অবশ্যই পরিমাণমতো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকতে হবে, প্রোটিন থাকতে হবে, ফলমূল থাকতে হবে, শাকসবজি থাকতে হবে। আর এগুলো যদি আমরা মেনে না চলি বা প্রোপার ব্যালেন্স ডায়েট মেইনটেইন না করি, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়—মাথার চুল পড়ে যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, নখ ভেঙে যায় এবং দেখতেও রোগার মতো লাগে। তাই ওজন কমানোর জন্য সুষম খাবার খেতে হবে।

পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান আরো বলেন, আমাদের ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালোরি হিসাব করে খাদ্যতালিকা করতে হবে। এ খাদ্যতালিকায় প্রত্যেকটি সেকশন থেকে আমরা খাবার নির্বাচন করব। যেমন প্রোটিন, ফলমূল, শাকসবজি, মিনারেলস ইত্যাদি। ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকাকে আমরা পাঁচ থেকে ছয় বেলায় ভাগ করে নেব। যেমন সকালের দিকে আমরা যে খাবার খাব, সেটি অবশ্যই ক্যালোরির একটি বড় অংশ হতে হবে। আমরা যদি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে; পরোটা বা ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড খাব; ওমলেট বা পোচের পরিবর্তে আমরা সেদ্ধ ডিম খাব। চিকেন স্যুপ বা ইয়োগার্ট রাখতে পারি।

লাঞ্চ ও ডিনারে আমরা যে মাছের তরকারি নির্বাচন করব, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাছটাকে না ভেজে রান্না করতে হবে। কারণ, আমাদের জানতে হবে অবশ্যই যে এক চা চামচ তেল থেকে ৪৫ কিলোক্যালোরি পেয়ে থাকি। তাই ওজন কমাতে চাইলে যথাসম্ভব তেলের পরিমাণ কমাতে হবে।

বিকেলে নাশতায় অবশ্যই ফ্যাটি ফুড না খেয়ে ছোলা, সালাদ, ফ্রুটস সালাদ বা ফ্রুটস জুস খেতে পারি। সকালের তুলনায় আমাদের অবশ্যই রাতে কম খেতে হবে। কারণ, সকালের নাশতা খাওয়ার পর আমাদের সারা দিন প্রচুর কাজ করতে হয় এবং আমরা প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করে থাকি। কিন্তু রাতে খাওয়ার পর আমাদের খুব একটা শারীরিক কার্যক্রম থাকে না বা ক্যালোরি বার্ন হওয়ার মতো তেমন সুযোগ থাকে না। তাই সকালের তুলনায় বা অন্যান্য মিলের তুলনায় রাতে পরিমাণে কম খেতে হবে। আমরা যদি প্রতি বেলার খাবারের পর অন্তত এক কাপ করে টক দই খাই, সেটা শরীরের চর্বিকে বার্ন করতে সাহায্য করবে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন পিস বা পাঁচ পিস বাদাম খেতে হবে। বাদাম বডির ফ্যাট বার্ন করে থাকে।

এ ছাড়া আমরা ওটমিল নিতে পারি, সালাদ নেব প্রচুর। মোটকথা ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের অবশ্যই শর্করাজাতীয় খাবার কম পরিমাণে খেতে হবে। প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি থাকতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। এ ছাড়া সময়মতো ঘুমানো ও সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের কাম্য ওজন পাব।