জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসেই অংশগ্রহণ করতে পারলেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী। তবে কোনো দুর্ঘটনা বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে নয়। তিনি ক্লাসে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকেন বলে। ক্লাসের সময়ে হলের সিনিয়রদের চাপের কারণে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নিতে বাধ্য হন তিনি।
তার অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগের একজন শিক্ষক। পরে এ প্রসঙ্গে হতাশা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ।
সেই পোস্টে, একেই ছাত্র রাজনীতি বলে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তার পোস্টটি ছিল এরকম :
‘একেই কি বলে ছাত্র রাজনীতি?
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসেই অংশগ্রহণ করতে পারেনি আমার এক শিক্ষার্থী! আজ সকালে আমার Introduction to Education কোর্সে মোট ৬৩ জনের মধ্যে ৬২ জনই উপস্থিত ছিল, ১ জন অনুপস্থিত। ক্লাস শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা পর সেই শিক্ষার্থী আমার অফিস কক্ষে আসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ক্লাসে ছিলে না কেন?” সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, “স্যার, হলে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল। সিনিয়রদের অনেক কাকুতিমিনতি করেছি কিন্তু তবুও আসতে দেয়নি!
এসব মোটেই ছাত্র রাজনীতি নয়; ছাত্র রাজনীতির নামে চলমান অসভ্যতা ও বর্বরতা।’
পোস্টে নাম-পরিচয় উল্লেখ করা সেই শিক্ষার্থীর জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে বিবেচনা করে তার পরিচয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ আগেই আরেকটি পোস্টে মোহাম্মদ মজিবুর রহমান লিখেছিলেন:
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুমের ধারণাটাই গণবিরোধী। আর প্রচলিত গেস্টরুম সংস্কৃতি তো রীতিমতো মানবতাবিরোধী।’
উল্লেখ্য, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের প্লাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদ’ ও ঢাবি প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ ও অছাত্রমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ছাত্র সংগঠনগুলো। একুশ শতকে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে গণরুম বিলুপ্ত করতে না পারাকে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতারগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন।
তবে নেতারা বক্তৃতা প্রদানকালে গণরুম বন্ধের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রাখলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের সদিচ্ছা রয়েছে কি না এবং তারা আদৌ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতে, নেতারা তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই গণরুম প্রথা অব্যাহত রাখার পক্ষপাতী।