আইএমএফের কাছে আবারও ৮০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে পাকিস্তান

  • Update Time : ০৯:২০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • / 44

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ব্যাপক পতন হচ্ছে। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট আরও বেড়েছে। সংকট কাটাতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইমএফ) কছে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়ে তার মধ্যে ‘যৌক্তিক আত্মবিশ্বাস’ আছে। ঋণের অঙ্ক কত, তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়, কর আদায় না বাড়লে পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে আবারও বেইলআউট নিতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তানের যে পরিস্থিতি তাতে কর আদায় বাড়ানো না গেলে এটাই শেষ নয়, ভবিষ্যতে আরও ঋণ নিতে হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর এই সতর্কবাণী দেন তিনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে, বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারবাজারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক কেএসই ১০০ সূচক এশিয়ার শেয়ারসূচকগুলোর মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে ভালো করেছে। তারপরও তিনি মনে করেন, পাকিস্তান সরকারের সামনে কঠিন পথ। দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা ও ঋণ পরিস্থিতি টেকসই অবস্থায় নিতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

গত বছরও পাকিস্তান আইএমএফের ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচেছে; সেবার ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ পেয়েছিল দেশটি। সেই ঋণ কর্মসূচি চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২৩ বার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইমএফ) আর্থিক সহায়তা নিয়েছে পাকিস্তান। এবার ২৪তম ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে শিগগিরই ঐকমত্য হওয়ার কথা।

পাকিস্তানের অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরে সংকটে রয়েছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে, সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির গতি খুব কম আর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতির দিকে। এ পরিস্থিতিতে গত মার্চে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন।

আইমএফের চাওয়া মেনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে করহার বাড়িয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী। কর বৃদ্ধির সঙ্গে জ্বালানি ভর্তুকি কমানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে তাঁকে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের লক্ষ্য, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করা। রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো ছাড়া দেশটির বিশেষ কোনো উপায়ও নেই। বর্তমানে দেশটির রাজস্ব আয়ের ৫৭ শতাংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের গড় সুদ ব্যয় ছিল রাজস্বের ৩৬ শতাংশ।

তবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশে উঠলেও গত জুনে তা ১২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছিল, এখন তা ৯ বিলিয়নে উঠেছে। গত অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল, এখন প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

আইএমএফের কাছে আবারও ৮০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে পাকিস্তান

Update Time : ০৯:২০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ব্যাপক পতন হচ্ছে। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট আরও বেড়েছে। সংকট কাটাতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইমএফ) কছে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়ে তার মধ্যে ‘যৌক্তিক আত্মবিশ্বাস’ আছে। ঋণের অঙ্ক কত, তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়, কর আদায় না বাড়লে পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে আবারও বেইলআউট নিতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তানের যে পরিস্থিতি তাতে কর আদায় বাড়ানো না গেলে এটাই শেষ নয়, ভবিষ্যতে আরও ঋণ নিতে হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর এই সতর্কবাণী দেন তিনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে, বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারবাজারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক কেএসই ১০০ সূচক এশিয়ার শেয়ারসূচকগুলোর মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে ভালো করেছে। তারপরও তিনি মনে করেন, পাকিস্তান সরকারের সামনে কঠিন পথ। দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা ও ঋণ পরিস্থিতি টেকসই অবস্থায় নিতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

গত বছরও পাকিস্তান আইএমএফের ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচেছে; সেবার ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ পেয়েছিল দেশটি। সেই ঋণ কর্মসূচি চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২৩ বার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইমএফ) আর্থিক সহায়তা নিয়েছে পাকিস্তান। এবার ২৪তম ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে শিগগিরই ঐকমত্য হওয়ার কথা।

পাকিস্তানের অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরে সংকটে রয়েছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে, সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির গতি খুব কম আর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতির দিকে। এ পরিস্থিতিতে গত মার্চে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন।

আইমএফের চাওয়া মেনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে করহার বাড়িয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী। কর বৃদ্ধির সঙ্গে জ্বালানি ভর্তুকি কমানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে তাঁকে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের লক্ষ্য, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করা। রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো ছাড়া দেশটির বিশেষ কোনো উপায়ও নেই। বর্তমানে দেশটির রাজস্ব আয়ের ৫৭ শতাংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের গড় সুদ ব্যয় ছিল রাজস্বের ৩৬ শতাংশ।

তবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশে উঠলেও গত জুনে তা ১২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছিল, এখন তা ৯ বিলিয়নে উঠেছে। গত অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল, এখন প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে।